ষষ্ঠ হিজরিতে ঈদুল আজহার প্রচলন। ঈদুল আজহাকে ঈদুল কবির অর্থাৎ মহান ঈদ বলা হয়। আজহা শব্দ জুবেহ থেকে উৎপত্তি। জবেহ করা ক্রিয়াপদ, আর আজহা অর্থাৎ জুবেহ বিশেষ্য পদ, যার অর্থ কোরবানি। কোরবান বা কোরবানি শব্দের অর্থ উৎসর্গ বা ত্যাগ। এ শব্দটি কুবরের শব্দমূল থেকে উৎপত্তি। কুবরের অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। তাহলে ঈদুল আজহার অর্থ দাঁড়ায় কোরবানি বা উৎসর্গ বা ত্যাগের আনন্দ। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বড় মাধ্যম হিসেবে ত্যাগ স্বীকার করাই হলো কোরবানি। প্রকৃত অর্থে নিজেকে আমৃত্যু আল্লøাহর রাস্তায় সমর্পণ করা। হজরত ইবরাহিম আ:-এর স্বীয় পুত্র ঈসমাইল আ:কে কোরবানি করার পরীক্ষা থেকে বর্তমান পদ্ধতির কোরবানির সূচনা হয়েছে। মুসলিম জাতির জীবনটাই একটি কোরবানিতুল্য। এ কোরবানি হতে পারে জান, মাল, সম্পদ, সময়, স্বার্থ, ইচ্ছা ও পশু কোরবানি। আল্লøাহর সন্তুষ্টির জন্য স্বার্থত্যাগ, আত্মত্যাগ ও সম্পদত্যাগ এটাই হলো কোরবানি।
দিনটি এই শিক্ষা দেয় যে, প্রকৃত সুখ আর আনন্দের ঠিকানা সম্পদে নয়, ভোগে নয় বরং ত্যাগে। মানুষের যা কিছু আছে তা অন্যের জন্য ত্যাগের মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ। ইবরাহিম আ: ও তার পুত্র ঈসমাইল আ: কোরবানির অনন্য ত্যাগের আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। দিনটি ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা। আল্লøাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি স্বীয় পুত্র ঈসমাইলকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলেন মক্কার মরুপ্রান্তরে। ইবরাহিম আ:-এর সংকল্পের দৃঢ়তা দেখে তার কোরবানি কবুল করেন এবং ঈসমাইল আ:-এর স্থলে একাট দুম্বা কোরবানি মঞ্জুর করেন। ইবরাহিম আ:কে বহু ত্যাগ, তিতিক্ষা ও কোরবানিসহ বিভিন্ন পরীক্ষা, কণ্টকাকীর্ণ ও কঠিন রাস্তা অতিক্রম করতে হয়েছে। প্রতিটি কালের স্তরে কালের চাহিদা অনুযায়ী মুসলিম জাতি তার আদর্শ সামনে রেখে জাতির অস্তিত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব রক্ষার প্রয়োজনে কোরবানি দেয়। কোরবানির পশু জবাই আসলে প্রতীকী ব্যাপার। আল্লাহ পাক নিজেই বলেছেনÑ পশুর গোশত, চামড়া, রক্ত কিছুই তার কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে শুধু তাকওয়া ও পরহেজগারি।
কোরবানি দেয়ার রীতি পৃথিবীর আদিকাল থেকেই চলে আসছে। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম আ:-এর সময়কালেও কোরবানির রেওয়াজ চালু ছিল। সে সময় কোরবানিকৃত গোশত/দ্রব্য পাহাড়ের চূড়ায় বা কোনো উঁচু স্থানে রেখে এলে তা যদি আকাশ থেকে অগ্নিবর্ষিত হয়ে পুড়ে যেত তাহলে কোরবানি আল্লøাহ কবুল করেছেন বলে প্রতীয়মান হতো। যথার্থ আনুগত্য প্রদর্শন, তার সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্Ÿোচ্চ আত্মত্যাগ করার জন্য অঙ্গীকার ঘোষণায় সামাজিক আনন্দের উৎসব হিসেবে ঈদুল আজহা উদযাপিত হয় সারা বিশ্বে। এ উৎসব আত্মবিশ্লেষণ ও আত্মশুদ্ধিসহ পশুত্ব কোরবানির উৎসব।
প্রতিটি মানুষের ভেতর একটি হিংস্র পশু আছে যেটা আমাদের প্রতিনিয়ত অন্যায় ও পাপকাজে উৎসাহিত করে থাকে এবং আত্মাকে পাপিষ্ঠ আত্মায় পরিণত করে। পশুত্ব হলো অপরিচ্ছন্ন শত কালিমাময় আত্মা অর্থাৎ পাপিষ্ঠ আত্মা। মানুষের অন্তরাত্মা পাপে ও গোনাহে ভরা, যেটার সম্মিলিত নাম পশুত্ব। সর্বপ্রথম এই পাপিষ্ঠ আত্মা অর্থাৎ পশুত্বকেই কোরবানি করার পর পশু কোরবানি করা উচিত।
যে নিজের পশুত্বকে কোরবানি করবে, সেই কামিয়াবি এবং তার জন্য পরকালের অনন্ত জীবনে রয়েছে বেহেশত। ইবরাহিম আ:-এর পরিবার মুসলিম উম্মাহর জন্য আদর্শ পরিবার। মুসলিম পরিবারের মধ্যে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ও আদর্শবোধ স্মরণ করিয়ে দেয়। মুসলিম পরিবারের মূল্যবোধের ভিত্তি হলো আল কুরআন। এতে প্রতিফলিত হয়েছে হজরত ইবরাহিম আ:-এর আদর্শের তাত্ত্বিক ও বাস্তব রূপ।
বর্তমান বিজাতীয় অপসংস্কৃতি এবং চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ আমাদের নৈতিক, আদর্শিক মূল্যবোধের ওপর চরম আঘাত হেনেছে। যার ফলে মুসলিম পরিবারের সদস্যরা আজ ভিন্ন ভিন্ন মেরুতে অবস্থান করায় তাদের নৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ সর্বক্ষেত্রে পদদলিত। ঈদুল আজহা মানুষের জীবনে নিয়ে আসে স্বতন্ত্র আদর্শের প্রতীক। মানুষের ভক্তি, বিশ্বাস ও আত্মোৎসর্গের শক্তি কত বৃহৎ রূপ নিতে পারে এই পবিত্র ঈদুল আজহার আদর্শ, বাস্তবতা ও তাৎপর্য তার প্রমাণ।হ
লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ, কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা