২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সানাউল্লাহ মিয়া স্মরণ সভায় নেতারা

‘দেশের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ অশুভ শক্তির কাছে’

সানাউল্লাহ মিয়া স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত - ছবি : নয়া দিগন্ত

রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের কাছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলই একমাত্র লক্ষ্য হওয়ায় আদর্শ ও নীতিবান রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা দলগুলোর কাছে গুরুত্ব হারিয়েছে। রাজনীতিতে অর্থের প্রভাব মূল হয়ে দাড়াচ্ছে। আর এ কারণেই অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ারা জীবনের শেষ প্রান্তে অবহেলা ও অনাদরে পৃথিবী থেকে বিদার নিচ্ছেন। দল এখন আর তাকে স্মরণ করার প্রয়োজনও অনুভব করে না বলে স্মরণ সভায় জাতীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর পল্টনের গণস্বাস্থ্য হোমিও মিলনায়তনে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনীতিক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় জনতা ফোরাম ও জাতীয় মানবাধিকার সমিতি আয়োজিত স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদারের সভাপতিত্বে ও জাতীয় মানবাধিকার সমিতির য়োরম্যান মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় মরহুম অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রখ্যাত আইনজীবী ও রাজনীতিক অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, জাতীয় কবি মঞ্চের সভাপতি কবি মাহমুদুল হাসান নিজামী, বাংলাদেশ ন্যাপ যুগ্ম মহাসচিব মো: মহসীন ভুইয়া, বাংলাদেশ কৃষক আন্দোলন আহ্বায়ক শফিকুল আলম শাহীন, জাতীয় জনতা ফোরাম কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ স্বপ্লীল সরকার, জাতীয় জনতা ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক আরজে সুহিন ইরফান প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, গণতন্ত্র বিকাশে সরকারের সাথে বিরোধী দলের ভূমিকা জরুরি। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ। সেই নির্বাচনে এখন বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো আর নেতাকর্মীর রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বা ত্যাগের ইতহাসকে গুরুত্ব দেয় না। গুরুত্ব দেয় অর্থকে। ফলে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াদের মতো ত্যাগী নেতারা দিনশেষে অবহেলার শিকার হন। আর এর ফলে দলের মধ্যে সুবিধাবাদী নেতৃত্ব শক্তিশালী হয়ে উঠে।

তিনি বলেন, রাজনীতির কল্যাণের স্বার্থেই অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াদের মতো ত্যাগী রাজনীতিকদের স্মরণ করতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে এমন নেতৃত্ব রাজনীতিতে বিরল হয়ে উঠবে।

এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ রাজনীতি। সেখানে কেউ জীবন উৎসর্গ করছেন বা অন্যের জীবন কেড়ে নিচ্ছেন। প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে জায়গায় জায়গায় মূল্যবোধের বিসর্জনের ছবি আমরা দেখতে পাই। এই অবস্থা চলতে পারে না। মনে রাখতে হবে দেশপ্রেমিক নেতাকর্মীদের অবদান স্মরণ না করলে রাজনীতি পথ হরাবে। নতুন দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে না। অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়াকে রাজনীতির কল্যাণের জন্যই স্মরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে উদার গণতন্ত্রের উপাদানগুলো অনুপস্থিত। সময়ের প্রয়োজনে এখন মনে হচ্ছে রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পূর্ণ ঢেলে সাজানো দরকার। তানা হলে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়াদের মতো ত্যাগী রাজনীতিকদের দূরবিন দিয়ে খুজে বের করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন, দেশ রাজনীতি শূন্য, কোথাও রাজনীতি নাই। যার ফলে সানাউল্লাহ মিয়া দলের ও দলের নেতাকর্মীদের জন্য কাজ করার পরও দিন শেষে বহিরাগত অর্থ-বৃত্তের মালিকরা দলে মনোনয়ন বাগিয়ে নেয়। আর সানাউল্লাহ মিয়ারা হাসপাতালের বিছানার দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেন। দলের নেতৃত্বই সানাউল্লাহ মিয়াদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সুবিধাবাদী ও লোভী নেতৃত্ব সানাউল্লাহ মিয়ার খুনি।

তিনি আরো বলেন, দেশের কোথাও এখন রাজনীতি নেই, দেশ চালাচ্ছেন ব্যাবসায়ী সিন্ডিক্যাট আর আমলারা, ঠিক তেমনইভাবে বৃহত রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের প্রধান নেতারা ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট আর আমলাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার বলেন, দেশে প্রচণ্ড রকমের রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলে এখন ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত। স্বার্থপরতার রাজনীতিতে উপেক্ষিত দেশপ্রেম, আর এ কারণেই অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়াকে তার নিজের দলই স্মরণ করতে পারলো না।

 


আরো সংবাদ



premium cement