১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


আলোচিত 'শিশুবক্তা' রফিকুল গাজীপুর কারাগারে

আলোচিত 'শিশুবক্তা' রফিকুল গাজীপুর কারাগারে - ছবি সংগৃহীত

'শিশুবক্তা'খ্যাত মাওলানা মো. রফিকুল ইসলামকে গাজীপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গাজীপুরে দায়ের করা এক মামলার একমাত্র আসামি হিসেবে তাকে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব।

রফিকুল ইসলামকে (২৬) নামে বুধবার রাতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) গাছা থানায় হয়। র‌্যাব-১-এর নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মো. আব্দুল খালেক মামলাটি দায়ের করেন। মামলার একমাত্র আসামি মাওলানা রফিকুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ।

তার বিরুদ্ধে গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৮ ও ৩১ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ ও অনুভূতিতে আঘাত করে আক্রমনাত্মক ও মিথ্যা ভীতি প্রদর্শন; তথ্য উপাত্ত ইলেকট্রনিক্স বিন্যাসে প্রকাশ ও সম্প্রচার করে আইন শৃঙ্খলা অবনতি ঘটনানোর’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অপরাধ সংঘটনের আলামত হিসেবে তার কাছ থেকে উদ্ধার দেখানো হয়েছে চারটি মোবাইল ফোন। মামলায় তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-জয়দেবপুর রোডের ওয়ারলেস এলাকায় অবস্থিত মারকাজুল নূর আল ইসলামী মাদরাসার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি এই মাদরাসার পরিচালক।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ধৃত আসামি বিভিন্ন সময় দেশ ও সমাজের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এরূপ উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। সে বাংলাদেশের স্বার্থপরিপন্থী বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত এবং ধর্মীয় অর্থাৎ কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উসকানি দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে উদ্ধুদ্ধ করে। এছাড়াও উক্ত আসামি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন করা, বাংলাদেশে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে শত্রুতামূলক মনোভাব ও সরকারের প্রতি ঘৃণার ভাব সৃষ্টিমূলক বক্তব্য প্রদান করে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। তার এইরূপ স্বভাবের ধারাবাহিকতায় উক্ত আসামি গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা হতে ১০টায় জিএমপি, গাজীপুর-এর গাছা থানাধীন বোর্ড বাজার সাকিনস্থ কলমেশ্বর শীতক ফ্যাক্টরির ভেতর ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলাপরিপন্থী বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করে যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়।

মামলার এজাহারে প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি ইউটিউব লিঙ্ক উল্লেখ করা হয়।

মামলার এজাহারে আসামির এসব প্রদত্ত বক্তব্যের মধ্যে কিছু বক্তব্যও তুলে ধরা হয়। যেমন, ‘আমি মানি না রাষ্ট্রপতি, আমি কচুর প্রধানমন্ত্রী মানি না’। ‘কিসের প্রশাসনের অর্ডার? আমি কোনো অর্ডার মানি না। আমার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই, এমপি নাই। আমি মানি না প্রধানমন্ত্রী, মানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমারে রিমান্ডে নিবা, জেলে নিবা, ফাঁসি দিবা তাই তো?’ ইত্যাদি।

এজাহারে অভিযোগ করে আরো বলা হয়, উক্ত আসামি প্রচলিত আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। উক্ত আসামির এই ধরণের উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলে তার অনুসারিরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ, নাশকতা ও ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ সংঘটিত হয়।

এদিকে গাজীপুর জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন খান মাওলানা রফিকুল ইসলামের বিরুরদ্ধ মামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বলেন, মাওলানা রফিকুল ইসলামকে আদালতে তুলার আগে তাকে কোনো আইনি সহায়তা গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়নি। তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ওকালতনামা জমা দিতে পারেননি। তাকে আদালতে তোলার আগেই শতাধিক পুলিশ ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আদালত ঘিরে অবস্থান নেয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল