২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত

দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত - ফাইল ছবি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ঘোষণা পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ চলতি অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা দেন।

এর আগে সংসদে ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর মিরপুরে শহীদ স্মৃতি ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেয়া ভাষণের অডিও শুনানো হয়। ৮ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের এই ভাষণটি বাংলাদেশ বেতার থেকে সংগ্রহ করা হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এবারের অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ২২টি। এ অধিবেশনে দুটি বিল পাস হয়। আইন প্রণয়ন সম্পর্কিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি কার্যপ্রণালী-বিধির ৭১ বিধিতে ২৫০টি নোটিশ পাওয়া যায়। নোটিশগুলো থেকে ১৫টি নোটিশ গৃহীত হয়েছে এবং গৃহীত নোটিশের মধ্যে ৯ টি নোটিশ সংসদের বৈঠকে আলোচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দানের জন্য সর্বমোট ৮৬টি প্রশ্ন পাওয়া যায়, এরধ্যে তিনি ৪৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের উত্তরদানের জন্য প্রাপ্ত মোট ১ হাজার ৮২২টি প্রশ্নের মধ্যে মন্ত্রীরা ১ হাজার ৮০টি প্রশ্নের জবাব দেন।
গত ৪ জানুয়ারি সংবিধান অনুযায়ি দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনে সংসদে রাষ্ট্রপতি এ ভাষণ দেন।

রীতি অনুযায়ী এ ভাষণ সম্পর্কে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সমর্থন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় ২৬৯ জন সংসদ সদস্য মোট ৩৯ ঘন্টা আলোচনা করেন।

অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে স্পিকার বলেন, ‘মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। অগ্নিঝরা মার্চে প্রথমেই আমি বিনম্র চিত্তে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং ১৫ আগস্ট শাহাদত বরণকারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ১০ বছরের শিশু রাসেলসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। স্মরণ করছি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদ এবং সম্ভ্রম হারানো ২ লক্ষ মা-বোনকে- যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একই সাথে স্মরণ করি জাতীয় চার নেতাসহ ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী বীরযোদ্ধাসহ সকল শহীদকে।’

তিনি বলেন, নতুন বছরের শুরুতে এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তাঁর ভাষণে গত মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ও সাফল্যের বিষয় তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। পরবর্তীতে সংসদ-সদস্যগণ রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ভাষণের ওপর গৃহীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। জনগণের প্রতিনিধি হয়ে তাদের এই বক্তব্য প্রদান সংসদীয় কার্যক্রমকে সমৃদ্ধ করেছে।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, একটি সফল নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রই একটি দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়- উন্নয়নের এই অগ্রযাত্রায় সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব- এটাই আমাদের লক্ষ্য। আশা করি ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ‘সংসদ কার্যকর থাকলেই গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা সুসংহত হয়। সংসদকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের ভূমিকাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। সংসদে গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে তারা সরকারকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দেয়া আমাদের পবিত্র কর্তব্য। আশাকরি এ লক্ষ্যে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা স্বীয় অবস্থান থেকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবো।’

স্পিকার বলেন, অব্যাহত উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী উন্নয়নশীল কৌশল গ্রহণের ফলে। গত মেয়াদে ক্ষমতাকালীন দেশে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। এদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে সেই সব উন্নয়ন যা একসময় মানুষের কাছে স্বপ্নই ছিল। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, পারমানবিক চুল্লী, এবং স্যাটেলাইট রকেটসহ সারাদেশে অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে। একটি নতুন বাংলাদেশ সামনে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের সার্বিক জীবনমান, অবকাঠামো এবং আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে, জাতি পেয়েছে আশ্রয়ন, বৃদ্ধ ভাতা, জাতীয় পেন্শন স্কিম, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ সহ নানান বৃহৎ ও ক্ষুদ্র কর্মের সম্পাদন। বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, বিদুৎ উৎপাদন বেড়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা একটি কল্যাণকামী, উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। একাত্তরে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি স্বতন্ত্র দেশ পেয়েছি, আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে তুলতে চলেছি স্মার্ট বাংলাদেশ।’

সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদানের জন্য স্পিকার সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীকে যিনি সার্বক্ষণিক দ পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান করেছেন। তিনি সংসদ উপনেতা, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, চীফ হুইপ ও হুইপবৃন্দ এবং সকল সংসদ সদস্যদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতার প্রতিও সংসদ কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি ডেপুটি স্পীকার ও সভাপতিমন্ডলীর সদস্যদেরকে তাঁদের সহযোগিতা ও পরামর্শের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিবর্গ আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বাংলাদেশ বেতার, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলসহ দেশের সকল গণমাধ্যমের সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের প্রতি স্পিকার আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

শিরীন শারমিন চৌধুরী দেশ ও জাতির অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে সকলের প্রতি সশ্রদ্ধ অভিবাদন ও আন্তরিক শুভকামনা জানিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠ করেন।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement