৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করার আহ্বান রাষ্ট্রপতির

বক্তব্য রাখছেন রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন - সূত্র : বাসস

রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন দেশের রাজনৈতিক দলসমূহকে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এক্ষেত্রে তিনি সরকারকেও সংযত আচরণ করারও উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘উন্নয়নের এ চলমান গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে।’

মঙ্গলবার বিকেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দানকালে রাষ্ট্রপ্রধান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন স্থায়ী ও টেকসই করতে হলে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মজবুত, তৃণমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। নির্বাচন বর্জনকারী দলসমূহ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে... আমি আশা করি, ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ সহিংসতা ও নৈরাজ্যের পথ পরিহার করে জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে অহিংস পন্থায় গঠনমূলক কর্মসূচি পালন করবে।’

তিনি বলেন, ‘কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন দেশের আর্থিক খাতের সংস্কার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে জোর তাগিদ দেন।

সকল গুজব ও অপপ্রচারের বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে জনগণকে সম্পৃক্ত রেখে যথাযথভাবে মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার সফল বাস্তবায়নে সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করার ও আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়নের নিষ্কণ্টক পথচলার জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলো উদার ও গঠনমূলক মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, মত-পথের ভিন্নতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার ক্ষেত্রে কোনো মতদ্বৈততা জনগণ প্রত্যাশা করে না।’

জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মহান এ প্রতিষ্ঠানটি ‘জনগণের সকল প্রত্যাশার ধারক ও বাহক’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘জনগণের চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকদের কল্যাণে জাতীয় সংসদ যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।’

তিনি মনে করেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিলে এর প্রভাব আমাদের উপরও পড়বে। এজন্য আমাদের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘উন্নত কৃষিপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান করতে হবে, যাতে দক্ষ শ্রমশক্তি রফতানি সম্ভব হয়।’

ইংরেজি নববর্ষ এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের সূচনালগ্নে স্পিকার, নবগঠিত সরকারের চতুর্থসহ পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদ-সদস্যগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান রাষ্ট্রপতি।

তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্যে নির্বাচন কমিশনসহ জনপ্রশাসন, সশস্ত্রবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলাকারী বিভিন্ন বাহিনী এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, ‘সাধারণ মানুষের স্বতস্ফূর্ততা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সকল পদক্ষেপ স্বার্থক হয়েছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘একটি কুচক্রীমহল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে সদ্য-স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। তবে গত দেড় দশকে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর মেধা ও প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট বাংলাদেশের চারটি স্তম্ভ-স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।’

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে দেশের তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা তিনি জানান।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মো: সাহাবুদ্দিনের দেয়া এটাই প্রথম ভাষণ। দ্বিতীয় মেয়াদে ১২তম জাতীয় সংসদ স্পীকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম অধিবেশন বেলা ৩টায় শুরু হয়।
সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement