২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, একদিন নিয়ে যাবেন : প্রধানমন্ত্রী

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ছবি : সংগৃহীত

প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী সবদিকে অচলাবস্থা চলছে। পাশাপাশি মৃত্যু হানা দিচ্ছে। যদিও এখানে সুস্থতার সংখ্যা অনেক বেশি। তারপরও মানুষের ভেতরে কেমনজানি একটা আতঙ্ক বিরাজমান। সমগ্র বিশ্বে যে যত শক্তিশালী, অর্থশালী হোক কোন শক্তি কাজে লাগছে না। মনে হচ্ছে করোনাভাইরাসটাই সবচেয়ে শক্তিশালী। আর প্রকৃতি যেন আজ একটা শোধ নিচ্ছে।

সংসদে বুধবার বাজেট অধিবেশনের শুরুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, মৃত্য যখন অবধারিত, মৃত্যকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ জীবন দিয়েছেন, আল্লাহ একদিন নিয়ে যাবেন। আমরা সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দোয়া করি করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানবজাতি যেন রক্ষা পায়।

বিকালে স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অস্টম ও চলতি বছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতে সাবেক সংসদ সদস্যসহ জাতীয় গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও তার ওপর আলোচনা হয়। কড়া স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে স্বল্পসংখ্যক সংসদ সদ্যসের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন সদস্য শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সারাবিশ্বের সবদিকে একটা অচলাবস্থা চলছে। পাশাপাশি মৃত্যু এসে হানা দিচ্ছে। যদিও এখানে সুস্থ্যতার সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। তারপরও মানুষের ভেতরে কেমনজানি একটা আতংক বিরাজমান। যারজন্য সমগ্র বিশ্বে যে যত শক্তিশালী হোক যত অর্থশালী হোক, যতই অস্ত্রের শক্তি হোক কোন শক্তিই কাজে লাগছেনা। মনে হচ্ছে, করোনা ভাইরাসটাই সবচেয়ে শক্তিশালী। আর প্রকৃতি আজ যেন একটা শোধ নিচ্ছে-এরকম আমার কাছে মনে হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলো করোনায় কেউ মারা গেলে আত্বীয়-স্বজন আপনজন লাশ ফেলে চলে যায়। সেই লাশটা নেয় পুলিশ বাহিনী নিয়ে কবর দিচ্ছে, জানাজা পড়ছে। সেখানে আপনজন কেউ থাকছেনা ভয়ে। ভয়ে ভীত হয়ে মানুষ এমন অমানবিক আচরণ করবে এটা দু:খজন।

তিনি বলেন, দেখুন, মানুষ মরণশীল। আজকে যখন জন্মেছি মরতে একদিন হবে। তা করোনা ভাইরাসে মরি, বোমা খেয়ে মরি, গুলি খেয়ে মরি, বা অসুস্থ্য হয়ে মরি বা কথা বলতে বলতেও মরে যেতে পারি। কাজেই মৃত্যু যখন অবধারিত, মৃত্যকে ভয় পাওয়ারতো কিছু নেই। অন্তত: আমি ভয় পাইনি কখনো, পাবোও না। আর আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি সেই বাংলাদেশ যেখানে আমার বাবাকে হত্যা করেছে, আমার মা, ভাই, শিশু ভাইটাওতো রেহাই পায়নি। সেই খুনীরা যে খুনিদের বিচার হয়নি, সেই সময় তাদের বিচার করা হয়নি তাদের ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে এবং তারা ছিল ক্ষমতায়। ৭১যারা যুদ্ধারপরাধী তারা ক্ষমতায়। ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে এসেছি। আমি যদি ভীত হতাম হয়তো। আমি জীবনেও আসতেপারতাম না। কিন্তু আমি ভয় পাইনি। আল্লাহ জীবন দিয়েছে, আল্লাহ একদিন নিয়ে যাবেন-এটাই আমি বিশ্বাস করি। আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেয়। সেই কাজটুকু করতে হবে। যতদিন আল্লাহর লিখিত কাজটা আমার দায়িত্ব যা অর্পন করেছেন রাব্বুল আলামীন যতটুকু সময় রেখেছেন তা যতক্ষণ শেষ না হবে ততক্ষণ হয়তো আমি আমার কাজ করে যাব। যখন সময় শেষ হয় যাবে, কাজ শেষ আমিও চলে যাব। কাজে এ নিয়ে এতো চিন্তার কিছু নেই।

সংসদ নেতা বলেন, পালামেন্ট আজকে এই বাজেট দেয়া, অনেক দেশ এটা দিতে পারছেনা। আমি বলেছি না, আমরা একদিকে যেমন করোনা মোকাবেলা করবো, আম্পান ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলা করেছি, পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনটা যাতে চলে তারা যেন কষ্ট না পায় তাদের জন্য যা যা করণী সেটা আমি করে যাবে। কাজেই আমিতো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমিতো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতেই এসেছি। কাজেই এখানে ভয় পাওয়ার তো কিছু নেই, ভয়ের কি আছে। আমি সেটাই মনে করি। আজকে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আমি তাদেরন আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। চলুন আমরা সবাই মিলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে এই দোয়া করি করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানবজাতি যেন রক্ষা পায় এবং যারা অসুস্থ্য আছে তারা যেন সুস্থ্য হয়।

করোনার কারণে সাবেক সদস্যসহ পরিচিত জনদের জানাযায় অংশ নিতে না পারা এবং পরিবারের খোজ খবর কররতে না পারা কথা উল্লেখ করে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ৭৫ পনের আগষ্টের হত্যাকান্ডের পর যারা প্রতিবাদ করেছিলেন তাদের অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের পেছনে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলো। সাবেক সংসদ সদস্য কামরুনাহার পুতুলের স্বামী মোস্তাফিজর রহমান পটলকেও তখন হত্যা করা হয়েছিল। কারোনা ভাইরাসের কারণে আজকে আমাদের সমাজে অনেকে মৃত্যবরণ করেছে। বিশেষকরে আমাদের প্রশাসন যেভাবে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করে যাচ্ছে, আমাদের পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী আনসার বিজিবি থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী ডাক্তার নার্স স্বাস্থ্য কর্মীরা প্রতিনিয়ত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে সাথে সাংবাদিক প্রত্যেকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেকে মৃত্যবরণ করেছে। তিনি সকলের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে ফেলেছে মানুষের থেকে মানুষের মধ্যে একটা দুরত্ব নিয়ে এসেছে এটা ঠিক, আবার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয়াতে অবশ্য পরিবারের সাথে পরিবারের থাকার একটা সুযোগও হয়েছে। জানিনা, সব জিনিসের ভালো মন্দ দিক থাকে-এটাই আমরা দেখি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একদিকে করোনা ভাইরাস তার মধ্যে আসলো ঘূর্ণিঝড় আমফান। এই ঘুণিঝড়ের মধ্যেই আমরা ২৪ লাখ মানুষকে শেলটার নিয়ে আসি। ৬ লাখ গৃহপালিত পশুকেও শেলটার দিয়েছিলাম, তদের খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। ঘুর্নিঝড়ে এমনি ক্ষতি হয়েছে, জীবনগুলো বাঁচাতে সক্ষম হয়েছি।

করোনা ভাইরাসে কর্মহীন মানুষদের খবর নিয়ে নিয়ে খাবার ও সাহায্য পৌছে দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে মানুষের দু:কষ্ট লাঘবে প্রচেষ্টা চলছে, প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে আলাদা ফান্ড দিয়ে রেখেছি যাতে প্রত্যেক মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায়। শুধু নিয়মাফিক নয়, বিভিন্নভাবে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। দলের নেতা কর্মীরা বিত্তশালিরা সবাই সাহায্য করেছে।

শোক প্রস্তাবের আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক কৃষি মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক চিফ হুইপ আসম ফিরোজ ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।


আরো সংবাদ



premium cement
মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

সকল