০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


রাজনৈতিক মান-অভিমান ভাঙ্গাতে কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি - সংগৃহীত

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ’রাজনৈতিক মান-অভিমান’ ভাঙ্গাতে কোনো উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়ে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশটা আমাদের কারও একার নয়। দেশটা আমাদের সকলের।এখানে মান-অভিমানের কিছু নেই, এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও আইনের প্রশ্ন। দেশের মানুষকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে পেরেছি- সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখানে কে মান-অভিমান করলো, কার মান ভাঙ্গাতে যাব- সেটা আমি জানি না। তবে সহানুভূতি দেখাতে যেয়ে যদি অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়, সেখানে আর যাবার কোন ইচ্ছা আমার নেই।

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টিও ফখরুল ইমাম এবং মামুনুর রশীদ কিরনের পৃথক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টিও ফখরুল ইমাম প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, একটা পিছিয়ে পড়া জাতিকে উন্নয়নে ভাসিয়ে দেয়ার নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের এতো উন্নয়ন হয়েছে, যার রূপকার অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা নিয়ে কারোর মনে কোন প্রশ্ন নেই। তবে দেশে যে রাজনৈতিক মান-অভিমান চলছে, বাড়তে থাকা দূরতে ক্ষোভের পাহাড় জমছে। রাজনৈতিক এই সমস্যা রোহিঙ্গা ইস্যুর চেয়ে কম গুরুত্ব নয়। এটা ভাঙ্গাতে প্রধানমন্ত্রী কোন উদ্যোগ নেবেন কি না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখানে মান-অভিমানের বিষয়টি কোথায় থেকে এলো জানি না। এটা হচ্ছে নীতির প্রশ্ন। আইনের প্রশ্ন। কেউ যদি দুর্নীতি করে, এতিমের টাকা চুরি করে, মানুষ খুন করে, খুন করার চেষ্টা চালায়, গ্রেনেড মারে, বোমা মারে তার বিচার হবে- এটাইতো স্বাভাবিক। রাজনীতি সবাই করে যার যার আদর্শ নিয়ে। আর আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি বলেই দেশটাকে উন্নত করতে পেরেছি। দেশের মানুষকে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নের ছোঁয়া দিতে পেরেছি সেটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। এখানে কে মান-অভিমান করলো, কার মান ভাঙ্গাতে যাব- সেটা আমি জানি না। তিনি বলেন, দেশটা আমাদের কারও একার নয়। দেশটা আমাদের সকলের। আর দেশ ও জনগণের কল্যাণ করাই একজন রাজনীতিবিদের প্রধান দায়িত্ব। আর আমরা রাজনীতি করি নিজেদের স্বার্থে নয়, নিজেদের লাভ-লোকসানের জন্য নয়। আমরা দেখি জনগণের কল্যাণ, জনগণের স্বার্থ। নিঃস্বার্থভাবে ও দেশের মানুষকে ভালবেসে কাজ করতে পেরেছি বলেই এতো অল্প সময়ে দেশের এতো উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। অতীতে তো অনেক সরকারই ক্ষমতা ছিল। এতো অল্প সময়ে দেশের এতো উন্নয়ন কে করতে পেরেছে? কেউ পারেনি। কারণ তারা জনগণের স্বার্থের বদলে নিজেদের গোষ্ঠী স্বার্থ দেখেছে। তাদের কাছে ব্যক্তি স্বার্থ দেশের জনগেণের স্বার্থের চেয়ে বড় ছিল বলেই পারেনি।

বিশ্বচাপে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে মিয়ানমার
ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর এক সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন দফা চুক্তি এবং আশ্বাস দিলেও মিয়ানমার সরকার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে তেমন উদ্যোগী হচ্ছে না। কিন্তু বর্তমান সরকারের কূটনৈতিক প্রধান সাফল্যেই হচ্ছে আমরা রোহিঙ্গ ইস্যুতে বিশ্বজনমত সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। সারাবিশ্বের নেতারাই একমত পোষণ করে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে এবং মিয়ানমার সরকারকে তাদের ফেরত নিতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন, রাশিয়া ও ভারতও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বলেছে মিয়ানমারের উচিত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া। চীন ও ভারত রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণেও সাহায্য দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক আদালতও মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছি। বিমসটেক সম্মেলনের সময় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার সময়ও তিনি রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক চাপের মুখেই মিয়ানমার তাদের নাগরিক রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হবে।

নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বিপুল রোহিঙ্গা জনস্রােতের নজিরবিহীন এক মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়ে সীমান্ত উন্মুক্ত রেখে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদে অবস্থানের কোন সুযোগ নেই। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে, রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

ঢাকার চতুর্দিকে এলিভেটেড রিংরোড হবে
এম এ মালেকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা সব মহাসড়কই ৪-লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে চারপাশ্বে এলিভেটেড রিং রোড করা হবে। এছাড়া পাতাল রেল নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে। পাতাল রেল নির্মাণেরও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, এক সময় রেল ছিল মৃতপ্রায়। সেই রেলকে আমরা পুনরুজ্জীবিত করেছি। আলাদা মন্ত্রণালয় করে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে রেলের উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। সারাদেশেই রেলের নেটওয়ার্ক গড়ে আমরা সেগুলো পুনরায় চালূ করেছি। আকাশ পথেও উন্নয়নে নতুন নতুন বিমান কিনছি। ছয়টি নতুন বিমান কিনেছি। আরও একটা আসবে। অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক রূপে চলাচলের জন্য আরও কয়েকটি ছোট বিমান ক্রয় করা হবে। তিনি বলেন, মাত্র সাড়ে ৯ বছরে আমরা দেশের যত উন্নয়ন করেছি, তা বলতে গিয়ে টানা কয়েকদিন সময় লাগবে। একদিনে বলে শেষ করা যাবে না।

সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল হবে
মামুনুর রশিদ কীরনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব, বিভ্রান্তিমূলক বা উস্কানীমূলক পোস্ট, ভিডিও প্রচারকারীকে সনাক্ত করার মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে সাইবার ক্রাইম মনিটরিং সেল গঠনসহ প্রয়োজনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বিশ্বে যে সুনাম অর্জন করেছে তা ধরে রাখতে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। কোনো গোষ্ঠী বা দল যাতে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল যাতে গুজব বা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স
বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করে চলছে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতি মুক্ত করার উদ্দেশ্যে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সকল প্রকার সন্ত্রাসী, জঙ্গী, দুর্নীতিবাজ ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামীসহ নিয়মিত মামলার আসামী গ্রেফতার এবং অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধারের জন্য পুলিশের নিয়মিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোপূর্বে জঙ্গী, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, নাশকতা ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কর্মকান্ড ও গতিবিধি সম্পর্কে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধীদের কর্মকান্ড রোধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে স্পর্শকাতর স্থানসমূহে চেকপোস্ট স্থাপন করে সন্দেহজনক মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার, অটোরিক্সা তল্লাশীসহ উক্ত যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশী করা হচ্ছে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য অনুপ্রবেশ রোধে নৌ, সড়ক ও রেলপথে চোরাচালানের সম্ভাব্য রুটসমূহে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা আশা করব দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও যুব সমাজকে রক্ষায় সরকারের সঙ্গে একযোগে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচার হবেন এবং মাদক নির্মূল করতে সহযোগিতা করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে সরকারি দলের লুটেরা-ভূমিদস্যুরা : রিজভী টিএইচই এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশে ২য় বাকৃবি সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে : যুক্তরাষ্ট্র হাটহাজারী উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন আবুল বাশার ‘এতে মজা আছে নাকি, সবাই একদল আমরা’ অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত নানামুখী চাপে বাংলাদেশের গণমাধ্যম দুর্নীতির দায়ে ক্রিকেটে ৫ বছর নিষিদ্ধ থমাস বিধ্বস্ত গাজার পুনর্নির্মাণে সময় লাগতে পারে ৮০ বছর : জাতিসঙ্ঘ গাজীপুরে ট্রেন চলাচল শুরু শনিবারও বন্ধ থাকবে ঢাকাসহ যেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সকল