৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তিনি ছিলেন সৃষ্টিশীল রাজনীতিবিদ

মওদুদ আহমেদ
মওদুদ আহমেদ - ছবি সংগৃহীত

বিএনপি চেয়ারপারসন, গণতন্ত্রের মাতা, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ে কাজের বদৌলতে মওদুদ আহমেদ স্যারের সাথে মূলত দেখা হতো, কথা হতো। কোনো কোনো সময়ে চা খাওয়ার কথা বলে অনেক আন্তরিকভাবে বসতে বলতেন। এমন মাপের একজন রাজনীতিবিদের সামনে বসে চা খাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার ছিল।

চা খাওয়ার সূত্র ধরে তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা আলোচনা করতেন। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কথা শুনতাম। মাঝে মধ্যে কোনো একটি বিষয় আরো সহজ করে বোঝার আগ্রহ নিয়ে ওই বিষয়টার প্রতি মনযোগ দিতে চেষ্টা করলে তিনি আরো চমৎকারভাবে বোঝাতেন। অনেক যুক্তি দিয়ে একই বিষয় ভিন্ন ভিন্নভাবে তুলে ধরতেন।

একদিন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত আমার একটি লেখা তাকে দেখিয়েছিলাম। তিনি লেখা হাতে নিয়ে একঝলক দেখে শিরোনামটা উচ্চারণ করে আমাকে পড়তে বলেন। উনার সামনে বসে নিজের লেখা ভয়ে ভয়ে পড়ছি দেখে আমাকে বললেন, তোমার লেখার বিষয়বস্তু আমার পছন্দ হয়েছে। আমি সময়ে করে পড়ে নেব। লেখাটির শিরোনাম ছিল ‘পরিবর্তনের জন্য চাই চিন্তা শক্তির পরিবর্তন’। ...বললেন, আরো মনযোগ দিয়ে লেখতে চেষ্টা করো, ভালো করবে।

গুলশান চেয়ারপারসন অফিসে বিএনপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে কিংবা জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আসার আগে ফোন করতেন। অফিস থেকে বা বাসা থেকে, যেখান থেকে রওনা করতেন বের হয়ে বলতেন, আশা করি সময় মতো পৌঁছে যাবো।

যদি কোনো সময়ে কাজের ব্যস্ততার কারণে ফোন করতে ভুলে যেতেন তখন অফিসের গেটের সামনে গাড়ি থেকে নেমে দেখা হলে আমার গায়ে হাত দিয়ে বলতেন, আজ ফোন করিনি। তোমার কি মনে হয়েছিল আমি আসবো না? আমি উত্তর তৈরি করছি।... না স্যার, তা মনে হয়নি... বলার আগেই তিনি বলতেন, দেশের খবর কী?

... স্যার এই খবর তো আমরা আপনাদের কাছে থেকে জানবো। আমরা কীভাবে বলবো? তখন তিনি একটা কথা স্পষ্ট করে বলতেন। ‘দেশের যে নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে তা সহজে পূর্ণ হবে না। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল থেকে আরো দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর গুণগত পরিবর্তন আমার জীবদ্দশায় হয়তো দেখে যেতে পারবো না। তোমরা এই প্রজন্মের চেষ্টা করো। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আর্দশের ওপর ভিত্তি করে সংগ্রামটা করতে পারলে হয়তো তোমাদের সময়ে তার সুফল আসতে পারে।’

আরো একটি কথা প্রায় সময়ই বলতেন : যে জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকবা সেই জায়গাটা যেন দুর্বল না হয়। সবসময় সতর্ক থেকো। দীর্ঘ দিন এক জায়গায় একটি নীতি নিয়ে বসবাস করতে পারলে দেখবে এমনিতেই তার ভিত মজবুত হয়।

স্যারকে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া আগে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। উনার একান্ত সচিবের সাথে আমার প্রতিদিন যোগাযোগ হতো। তিনিও তার মাধ্যমে আমার খোঁজ রাখতেন। দু’দিন বলেছেন, তিনি সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে যেন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। দুর্ভাগ্য আমাদের। তিনি সুস্থ হয়ে আর আসতে পারলেন না। জীবিত অবস্থায় আর দেখাও হলো না। মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, উনাকে বেহেশত নসিব করুন।

লেখক : প্রেস উইং সদস্য, বিএনপি চেয়ারপারসন


আরো সংবাদ



premium cement