২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জন্ম নিয়েই যে চুক্তির মৃত্যু ঘটল

-

সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তিচুক্তি’ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। তার দৃষ্টিতে এটি ‘শতাব্দীর সেরা শান্তিচুক্তি’। এটি প্রকাশের সাথে সাথেই ফিলিস্তিনবাসী এবং তাদের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এটি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং ‘প্রাণ দিয়ে হলেও’ তা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্য দিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তিটি অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে গ্রহণ এবং ট্রাম্পের সাথে একমত পোষণ করেছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রস্তাবিত হওয়ার সাথে সাথেই চুক্তিটির মৃত্যু ঘটল। কারো কারো মতে, এটি ‘Brought in dead’ বা মৃত অবস্থায় এটিকে আনা হয়েছে। চুক্তিতে কী ছিল? কেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এই চুক্তিকে ‘শতাব্দীর নিকৃষ্টতম চপেটাঘাত’ বলে আখ্যায়িত করলেন এবং যেকোনো মূল্যে এই চুক্তির বাস্তবায়ন ঠেকানোর প্রতিজ্ঞা করলেন? নিচে কথিত মধ্যপ্রাচ্য শান্তিচুক্তির কিছু চৌম্বক অংশ তুলে ধরা হলো- ক. ফিলিস্তিন ইসরাইলের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে। কিন্তু ফিলিস্তিনের কোনো সামরিক বাহিনী থাকবে না। জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের নিরাপত্তার দায়িত্ব ন্যস্ত থাকবে ইসরাইলের ওপর। খ. পরবর্তীকালে ফিলিস্তিনিরা নিজেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে কাজ করবে এবং ইসরাইল ধীরে ধীরে ওই এলাকায় নিরাপত্তা কার্যক্রম কমিয়ে নিয়ে আসবে। গ. কোনো ফিলিস্তিনি বা ইসরাইলিকে তার বর্তমান বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা যাবে না। ঘ. ইসরাইল দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চার বছরের ভূমি স্থিতাবস্থা প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। ঙ. জেরুসালেমের অখণ্ডতা রক্ষা করে তা ইসরাইলের রাজধানী করা হবে। আর ফিলিস্তিনের রাজধানী হবে পূর্ব জেরুসালেমের আল কুদস এবং এর সংশ্লিষ্ট এলাকা নিয়ে। চ. ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুরা প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে থাকতে পারবে অথবা যে যেখানে আছে সেখানেই সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রে থাকতে পারবে অথবা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে পুনর্বাসিত হতে পারবে।

চুক্তি মোতাবেক জর্দান নদীর পশ্চিম তীরের ক্ষুদ্র অংশবিশেষ ও গাজা উপত্যকা নিয়ে নামে মাত্র একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ইসরাইল পশ্চিম তীরের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি জবরদখল করে তাতে অবৈধ বসতি গড়ে তুলে সেখানে তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে রেখেছে। ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার পিএলও মহাসচিব শায়ের এরাকাত এই চুক্তি সম্পর্কে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিবাসীর অধিকারকে পদদলিতকারী এ ধরনের প্রস্তাব ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ভাঁওতাবাজি হিসেবে দলিল হয়ে থাকবে।’ এটি কার্যকর হলে তা হতে যাচ্ছে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ভাঁওতাবাজি। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ার সাথে সাথেই ফিলিস্তিন নামক একটি ‘অটিস্টিক’ রাষ্ট্রের জন্ম হবে, যার থাকবে না কোনো সার্বভৌম ক্ষমতা, থাকবে না কোনো সশস্ত্র বাহিনী। অন্য দিকে, তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হবে তাদেরই পরীক্ষিত চিরশত্রু ইসরাইলি সশস্ত্রবাহিনী। সাত দশক ধরে উদ্বাস্তু যারা, সেই ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে ফেরার পথ চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং বর্তমান ফিলিস্তিনবাসীকে নতুন করে উদ্বাস্তু হওয়ার দ্বার অবারিত হয়ে পড়বে। তাদের প্রাণের জেরুসালেমকে হারিয়ে ফেলবে চিরতরে। এ জন্য তারা কীটপতঙ্গের মতো অকাতরে প্রতিদিন জীবন দিচ্ছে। সেই ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে দখলকৃত ভূমি ফিরে পাওয়ার আশা চিরদিনের জন্য ভুলে যেতে হবে তাদেরকে। সেই সাথে যুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত যে বিস্তর ফিলিস্তিনি ভূমি ইসরাইল দখল এবং অনেক বসতি জোরপূর্বক স্থাপন করে নিয়েছে, সেগুলোর পরিপূর্ণ বৈধতা পেয়ে যাবে এই চুক্তির বদৌলতে। অবশ্য এ ব্যাপারে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সমাধান থাকলেও চুক্তিপত্র তৈরি করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অ্যান্ড কোং সেই দলিলকে পদদলিত করেছেন। উল্লেখ্য, জাতিসঙ্ঘের ২৪২ নম্বর প্রস্তাব মোতাবেক যুদ্ধের মাধ্যমে দখলকৃত ভূমিতে দখলদাররা কোনো জনবসতি গড়ে তুলতে পারবে না। সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হলো- প্রস্তাবিত চুক্তির মানচিত্রে ফিলিস্তিনকে ইসরাইল দিয়ে পূর্ণরূপে পরিবেষ্টিত অবস্থায় টুকরো টুকরো ভূখণ্ডের রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। তদুপরি তারা নিজস্ব সামরিক বাহিনী ছাড়া একটি বিকলাঙ্গ রাষ্ট্রের জন্ম দিতে চাচ্ছে, যার নাম হবে ‘ফিলিস্তিন’। এই কায়েমি স্বার্থবাদী চক্র মূলত আধুনিক রাষ্ট্রের সংজ্ঞাকেও বদলে দিতে চাচ্ছে। ভেবে অবাক হতে হয়, বর্তমান সভ্যতার এই যুগে বিশ্বের সবচেয়ে সভ্যতম জাতি হওয়ার দাবিদার রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কী করে এ ধরনের একটি চুক্তিকে শান্তিচুক্তি বলে চালিয়ে দিতে চান! একটি পুরোপুরি অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে চুক্তির পুরো সুবিধাটুকু দিয়ে নিঃস্ব একটি জনগোষ্ঠীকে আরো নিঃস্ব, বিকলাঙ্গ করার সুনিপুণ পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ধরনের অন্যায়, অবিচার ও অসততাকে এবং তাদের নায়কদের সভ্যতার ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হতে হবে একদিন অবশ্যই।

এই ‘শতাব্দীর সেরা শান্তিচুক্তি’ তৈরির প্রক্রিয়া আরো মূর্খতায়, আরো ছলচাতুরতায় এবং আরো অন্যায়ে পরিপূর্ণ। এ যেন পাত্রীপক্ষের অগোচরেই ঘটক ও পাত্রপক্ষ বিয়ের দিন-তারিখ-ক্ষণ ঠিক করে ফেলেছে। সাধারণত মধ্যস্থতাকারী পক্ষ বিবদমান দুই পক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ট্রাম্প শুধু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সাথে বসে চুক্তিপত্র তৈরি করেছেন। ফিলিস্তিনি নেতাদের ডাকা দূরে থাক, বরং ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএলও দফতর বন্ধ করে দিয়েছেন। জাতিসঙ্ঘ গঠিত ফিলিস্তিনি তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত সাহায্যের অংশ বন্ধ করে দিয়েছেন। একতরফাভাবে জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানীরূপে ঘোষণা দিয়ে মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে স্থানান্তরিত করে জেরুসালেমে পুনঃস্থাপন করেছেন। অন্য দিকে, কথিত শান্তিচুক্তিটি প্রণয়নের দায়িত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কট্টর খ্রিষ্টান ইহুদিবাদী। এদের মধ্যে আছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রিডম্যান (যিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতি স্থাপন এবং ইসরাইলি সৈনিকদের দ্বারা ফিলিস্তিনিবাসীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রকাশ্য সমর্থক)। আর এই চুক্তি প্রণয়ন দলের নেতৃত্বে ছিলেন ট্রাম্পের জামাতা, ইহুদি বংশোদ্ভূত ইহুদিবাদী জ্যারেড কুশনার। অত্যন্ত আশ্চর্যজনক বিষয় হলোÑ রহস্যময়ও বটে, গত ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনসহ এই শান্তি পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে নেতানিয়াহু পাঁচবার যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির সাথে ট্রাম্প একবারও কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করেননি। মূলত এভাবেই একতরফা শুধু ইসরাইলিদের নিয়েই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই শাক্তিচুক্তি তৈরির কাজ সম্পন্ন করেন। পৃথিবীর সভ্য সমাজকে দেখতে হলো, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতে জড়িত দুই পক্ষের এক পক্ষকে বাদ দিয়ে কিভাবে অপর পক্ষের সব খায়েশ মিটিয়ে একটি প্রহসনের চুক্তি তৈরি করে জগৎবাসীকে বোকা বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করা যায়। ট্রাম্পের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও আত্মবিশ্বাসের বহর দেখে বোঝা যাচ্ছে, তিনি এই চুক্তি ধীরে ধীরে চাপিয়ে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের বাধ্য করবেন চুক্তি অনুযায়ী সব কিছুই ইসরাইলকে দিয়ে দিতে। যুদ্ধে পরাজিত পক্ষ যেমন বিজয়ী পক্ষের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে, ঠিক তেমনি ফিলিস্তিনিদেরও ট্রাম্প চুক্তির সব শর্ত মেনে নিতে বাধ্য করবেন। এর আলামত ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। মার্কিন প্রশাসন কর্তৃক জাতিসঙ্ঘ তহবিলে ফিলিস্তিনিদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়া এ ধরনের একটি পদক্ষেপ বলে প্রতীয়মান হয়।

যুক্তরাষ্ট্র তথা ট্রাম্পের ইহুদিপ্রীতি ছাড়াও এখানে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ গভীরভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এই কথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশের সময়ের দিকে লক্ষ করলেই সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়, একটি সুগভীর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এ চুক্তিপত্রটি ব্যবহার করার বাসনা ছিল ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর। নেতানিয়াহু দুর্নীতির জন্য অভিশংসনের সম্মুখীন হচ্ছেন। ২ মার্চ ইসরাইলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অভিশংসন থেকে মুক্তি লাভ এবং নির্বাচনে জয়লাভের জন্য এই মুহূর্তের এই চুক্তিকে ব্যাপকভাবে ইসরাইলি নাগরিকদের সহানুভূতি লাভের প্রয়াস হিসেবে দেখছেন নেতানিয়াহু। অন্য দিকে, এবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো রকমে অভিশংসনের শাস্তি থেকে আপাতত নিষ্কৃতি পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে এই চুক্তির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। তা ছাড়া আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর এটিই হলো ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ‘ট্রাম্প কার্ড’। কেননা, নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদিবাদী খ্রিষ্টানরা অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারেন। এই ইহুদিবাদী ভোটব্যাংক এবং নির্বাচনী অভিযানের বড় বড় ‘দাতা’রাই ট্রাম্পের মূল টার্গেট। এই গ্রুপকে খুশি করতে পারলে আসন্ন নির্বাচনী বৈতরণী তিনি হেসে-খেলে পার হতে পারবেন বলে মনে করেন। তাই তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন এবং তা চূড়ান্ত করে বর্তমান সময়ই বেছে নিলেন শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করার জন্য। ইসরাইলকে জাতি হিসেবে টিকে থাকার জন্য ওই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী দেশ হিসেবে টিকে থাকতে হবে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্রের মজুদ তাদের থাকতে হবে। আর এই মারণাস্ত্রের একমাত্র জোগানদাতা হলেন মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা। কাজেই ইসরাইলের অস্তিত্বের সাথে ওইসব প্রভাবশালী অস্ত্র সরবরাহকারী কোম্পানি এবং সেগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অস্তিত্বও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এজন্য ট্রাম্প স্বাভাবিকভাবেই চাইবেন, তাদের সার্বিকভাবে খুশি রাখতে। এ ধরনের অবিবেচনাপ্রসূত শান্তি-পরিকল্পনার রহস্য এখানেই নিহিত রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এই চুক্তিপত্রের ওপর একটি ছোট্ট প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের ‘বাস্তবতা মেনে নিয়ে’ এই চুক্তি মেনে নেয়ার জন্য পরোক্ষভাবে ওকালতি করেছেন। দাবি করেছেন, তিনি নাকি ১২ বছর ধরে ফিলিস্তিনি শান্তিপ্রক্রিয়ার সাথে জড়িত আছেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশের সাথে চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে ইরাকে আগ্রাসন চালিয়ে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জঘন্য যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন, যে কারণে আজো ইরাকে প্রতিদিন বহু নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে। তিনি এই মিথ্যাচারের কথা নিজে স্বীকার করেছেন। আজ তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ‘শান্তি’ নিয়ে কাজ করছেন, ফিলিস্তিনবাসীকে চুক্তি মেনে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন! কী অদ্ভুত এই পৃথিবী।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই তেলেসমাতি পরিকল্পনা আঁতুড়ঘরেই মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তবে এর ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব হয়তো বা বিশ্ব অবলোকনের অপেক্ষায় আছে। কারণ, এই চুক্তি ইসরাইলকে আরো বেপরোয়া করে তুলবে। বিশেষ করে তারা জবরদখল ও অবৈধ বসতি স্থাপনের ‘বৈধতার’ দলিল হাতে পেয়ে গেছে বলে মনে করবে। তদুপরি তাদের সব অপকর্মের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রকে তারা সাথে পাচ্ছে বলে তাদের আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যাবে। কাজেই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নির্যাতনের মাত্রা আরো নৃশংস হয়ে উঠতে পারে। অন্য দিকে, এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের আরো হতাশ ও সন্ত্রস্ত করে তুলবে। ফলে তারা আরো রেডিক্যালাইজড হয়ে উঠতে পারে। ‘আইএস’, ‘আলকায়েদা’ এবং মধ্যপ্রাচ্যের শিয়া গ্রুপগুলো মার্কিনিদের ‘কমন এনিমি’ ধরে আরো সক্রিয় হতে পারে পরিস্থিতির সুযোগে।

অন্য দিকে, ইরান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে- যেখানে ট্রাম্পের ‘শতাব্দীর সেরা চুক্তি’ আরো একটি নেতিবাচক উপাদান হিসেবে যুক্ত হলো। এমনিতেই মধ্যপ্রাচ্য ‘বারুদের ওপর বসে আছে’। সিরিয়ায় চলমান যুদ্ধে নতুন নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। লিবিয়ায় প্রতিদিনই যুদ্ধের চরিত্র পাল্টাচ্ছে। চীনের জিনজিয়াংয়ে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর বিনা অপরাধে নির্যাতনের মাত্রা সব সীমা অতিক্রম করছে। কাশ্মিরের মুসলমানদের ছয় মাস ধরে অঘোষিত কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে ঠিকানাবিহীন জীবন যাপন করছে। প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের এমন অদূরদর্শী শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব শুধু ব্যক্তিস্বার্থে মোহাবিষ্ট একজন গ্রাম্য নেতার চরিত্রে তাকে আবির্ভূত করেছে।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পিএইচডি গবেষক (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
E-mail: maksud2648@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement