২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবনে প্রথম ঢাকা নগর দর্শন

জীবনে প্রথম ঢাকা নগর দর্শন - ছবি : সংগ্রহ

গত ৫ সেপ্টেম্বর পত্রিকার পাতায় চোখ পড়তেই দেখি ‘বসবাস অযোগ্য নগরীর তালিকায় ঢাকা বিশ্বে তৃতীয়’ শিরোনাম। ঢাকার পরে দামেস্ক, তারপর লাগোস। বসবাসের অযোগ্য ১৪০ নগরের তালিকায় ঢাকার স্থান ১৩৮তম। আমার বিশ্বাস, লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট জরিপ চালিয়েছে সাধারণ মানুষের ওপর। অসাধারণ মানুষের শানশওকত ও জীবনযাত্রার ওপর জরিপ পরিচালনা করলে ফলাফল উল্টো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। অনেকের ধারণা, ঢাকা শহর কোনো কালেই সাধারণ মানুষের বসবাস যোগ্য ছিল না; এখনো নেই। এ অবস্থায় মনে পড়ে জীবনে প্রথম নগর দর্শনের স্মৃতি।

ষাটের দশক। নদীবেষ্টিত অজপাড়াগাঁয়ে আমাদের বাড়ি। কৃষিনির্ভর এলাকা। কৃষি কাজের পরেই ছিল ধান ও পাটের ব্যবসা। অনেকের ঘাটেই বাঁধা থাকত বিরাট বিরাট নৌকা। ‘আকাশ ছোঁয়া’ পালসহ নৌকায় থাকত পাঁচ জোড়া দাঁড়। বাও বাতাসে পাল আর উজানে দাঁড়ই ছিল দৈত্যাকারের নৌকাগুলোর প্রধান চালিকাশক্তি। বাও বাতাসে রঙ-বেরঙের পালে ছেয়ে থাকত নদী। তা দেখেই শিল্পী আব্বাসউদ্দীনের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে উঠেছিল-

‘নাও ছাড়িয়া দে / পাল উড়াইয়া দে
ছল ছলাইয়া চলুক রে নাও মাঝ দইরা দিয়া’।
একজন বেপারির নিয়ন্ত্রণে একেকটা নৌকা চালাতে পনেরো থেকে বিশজন মাঝি-মাল্লার দরকার পড়ত। বেকার যুবকেরা মাঝি-মাল্লার কাজ করত। মাল্লারা উত্তর-ভাটি ধান কাটতে যেত। মাঝিরা ধানের জন্য উত্তরে সিলেটের হাওর এলাকা এবং গোলপাতা ও সুন্দরী কাঠের জন্য দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত চলে যেত। কখনো কখনো নৌকা বোঝাই করে নিয়ে যেত মাটির হাঁড়ি-পাতিল; ধানের বিনিময়ে হাঁড়ি-পাতিল। দেড়-দুই মাসের মধ্যে নৌকায় ধান বোঝাই করে বাড়ি আসত। তিন মাসের জন্য সুন্দরবন।

তখন সুন্দরবনের বাঘ ও হরিণের সাথে যত ভালো পরিচয় ছিল, বাড়ির কাছের ঢাকা নগরের সাথে তত ভালো পরিচয় ছিল না। তখন শহর-বন্দর সম্পর্কে গাঁয়ের মানুষের ধারণা তেমন ভালো ছিল না। সহজ সরল মানুষ নিয়ে গ্রাম আর কঠিন ও জটিল মানুষ নিয়ে নাকি নগর। গাঁয়ের মানুষ শহরের নাম শুনলেই ভয়ে চমকে উঠত।

একসময় আমাদেরও ছিল কৃষিসহ ধানের ব্যবসা। আমার জন্মের কয়েক বছর পর বাবা ধানের ব্যবসা ছেড়ে পুরোপুরি কৃষি কাজ শুরু করেন। বাবার একমাত্র পুত্রসন্তান আমি। ছেলের ভবিষ্যৎচিন্তা মাথায় রেখেই লেখাপড়ার চেয়ে সম্পত্তি বৃদ্ধির দিকে মন দেন। বাবার বিশ্বাস, হু হু করে বাড়ছে মানুষ, কমছে ফসলের জমি। গভীর সঙ্কটের মোকাবেলা করতে হবে ভূমিহীনদের। শুধু শহরের মানুষ নয়, লেখাপড়া জানা মানুষ সম্পর্কেও বাবার ধারণা ছিল খুবই নেতিবাচক। বাবার এক কথা, মানুষ যত লেখাপড়া করে ততই কঠিন ও জটিল হয়ে ওঠে। তাই শিক্ষিত ও শহুরে মানুষের জীবন বড় জটিল।

সহজ ও সরলভাবে বাঁচার জন্য একজন মানুষের যা যা দরকার, সব আছে কৃষকের। কূটকৌশলের আশ্রয়ে সরল-সহজ কৃষকের উৎপাদিত ফল, ফসল এবং ধৃত মাছ খেয়েই শহরের মানুষের যত বাবুগিরি। বাবার মতে, সুখ-স্বস্তিতে থাকার জন্য কমসেকম একদোন (ষোলো বিঘা) চাষের জমি, শক্তিশালী হালের বলদ, দুধের জন্য গাভী এবং ঘরে মাছ ধরার সরঞ্জাম থাকলেই চলে। নাম দস্তখতসহ হিসাব-নিকাশ করার জন্য যতটুকু লেখাপড়া দরকার, এর বেশি লেখাপড়ায় তার সম্মতি ছিল না। শহরের লোকের কথা উঠলেই বাবা বলতেন, অলস, ‘বাদাইম্মা’ ও কর্মভীরু কামচোরেরা শহরে আশ্রয় লয়। তিনি চাইতেন না তার একমাত্র ছেলে ‘জটিল’ হোক। তাই, শহরের ভাষা ও রীতিনীতিতে কেতাদুরস্ত লোকের সাথে আমার মেলামেশাও ছিল বারণ।

ইঞ্জিনচালিত লঞ্চ-স্টিমার বৃদ্ধিসহ সড়ক পথে মালামাল বহন সহজ হয়ে পড়ায় বড় নৌকার প্রচলন কমতে থাকে। কাজের সন্ধানে নগরমুখী হলো গাঁয়ের বেকার মানুষ। আমি বাবার মনের মতো হতে পারছিলাম না। বাড়িতে কাজ দেখলেই মাছ ধরার ছলে বের হয়ে পড়তাম। ভালো লাগতো বর্ষার নতুন পানিতে ছিপ দিয়ে মাছ ধরা। জমিতে কর্মরত কামলা-মজুরের জন্য বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাওয়ার কাজটিও ভালো করতে পারতাম। মাথায় করে নিয়ে যাওয়া খাবার জমির আলে বসে এক সাথে খাওয়ার মজাই আলাদা। উঠানে ধানের মাড়াই দেখলেই বই নিয়ে পড়তে বসতাম। এক কথায়, আমি নিজেও ছিলাম কামচোরের দলে।

আমার বয়সের অনেকেই ঢাকা শহর ঘুরে গেছে। তাদের চাল-চলনই আলাদা। একত্রে বসলেই আহসান মঞ্জিল, মীর জুমলার কামান, ঢাকেশ্বরী মন্দির, লালবাগের কেল্লা, রমনার মাঠ, নিউ মার্কেট, চকবাজার- হড়হড় করে এসব স্থানের গল্প। গুলিস্তান হলে সিনেমা দর্শন আর রমনার চিড়িয়াখানার জীব-জন্তুর বিবরণ দিতে শুরু করলে আমার মাথা আউলিয়ে যেত। তবে বাবার মাথা ঠিক ছিল। বাবার সামনে ঢাকা নগরের নামই মুখে আনতে পারতাম না।

বাড়ির পাশে রামপুরা বাজার। সেখান থেকে ভোর ৬টায় ছাড়ে ‘আবুল বাসার লঞ্চ’। মুন্সীগঞ্জের কাঠপট্টি হয়ে সদরঘাট পৌঁছে দুপুর ১২টায়। কয়েক কদম হাঁটলেই বাংলাবাজার বইয়ের দোকান। রাস্তার দুই পাশে কিনতে পাওয়া যায় পুরনো বইও। প্রতি বছর পরীক্ষা পাসের পর পুরনো বইয়ের জন্য যেতে হয় বাতাকান্দি বাজার। বাড়ি থেকে ৮-৯ মাইল দূরে। জমির উঁচুনিচু আল দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ। কাঁঠালিয়া নদী পার হয়ে আরো মাইল দেড়েক হাঁটতে হয়। ফজরের সময় রওনা হয়ে বই নিয়ে আসতে আসতে কোনো কোনো দিন এশার টাইম শুরু হয়ে যায়। বাতাকান্দি বাজার থেকেও অনেক কম দামে ঢাকা শহরে বই পাওয়া যায়। সস্তায় বই কেনার কথা বলে বাবার সম্মতি আদায় করে ফেলি। তবে শহরে যাবো কার সাথে? আমার সম্পর্কিত এক ভাইয়া ঢাকা শহরে রিকশা চালান। মাঝে মধ্যে বাড়ি আসেন। এখন শুধু সে ভাইয়ার বাড়ি আসার অপেক্ষা। কয়েকটি নির্ঘুম রাত পার করে তার সাথে এক ভোরে চড়ে বসি লঞ্চে। জীবনের প্রথম লঞ্চজার্নি। পথে মাছ ধরার নৌকা, চলাচলকারী লঞ্চ-স্টিমার যেটাই দেখি, নতুন লাগে। মুন্সীগঞ্জের কাছাকাছি পৌঁছতেই মেঘনা, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরী নদীর মিলনস্থল। সেখানে তিন নদীর তিন রঙের পানি। এর পরেই বুড়িগঙ্গা। এর পানি তখনো ব্যবহারযোগ্য ছিল। মনে পড়ে, আশির দশকের প্রথম দিকেও ছিল ব্যবহারযোগ্য। আইন পেশা নিয়ে ১৯৮৫ সালে আমার ঢাকা কোর্টে প্রবেশ। ছিলাম বুড়িগঙ্গার অপর পারে আগানগর কাঠুরিয়া। গোসল করতাম বুড়িগঙ্গায়। ডকইয়ার্ডের জাহাজের ফাঁকে ফাঁকে ডুব দিয়ে উঠতে গেলে মাঝে মধ্যে সমস্যা হতো।

ফিরে যাই ষাটের দশকের লঞ্চজার্নি প্রসঙ্গে। কাঠপট্টি ছেড়ে সদরঘাট দেড় ঘণ্টার পথ। নদীতে কিছুক্ষণ পরপর ভেসে ওঠে শুশুক। এক দিকে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রোডের কচ্ছপাকৃতির বাস চলাচল, অপর দিকে ইটের ভাটার চিমনির ধোঁয়া। এসব দেখতে দেখতে সদরঘাট।

ভাইয়ার বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে জোহরের ওয়াক্ত শেষ। বর্তমানে যেখানে গোপীবাগ মসজিদের উত্তর দিক দিয়ে পশ্চিম দিক রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে নতুন বসতি। বাড়িঘর বস্তির মতো। রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে মিনিট কয়েক হেঁটে ডানদিকের এক বাড়িতে ভাইয়ার ফ্যামিলি বাসা। তার চার-পাঁচ সন্তানের মধ্যে বড় ভাইপো আমার কাছাকাছি বয়সের। মাটির ফ্লোর ও দেয়ালের ওপর টিনের ছাপরা। সোজা হয়ে দাঁড়ালে মাথার একফুট উপরে টিনের চাল। গাঁয়ের বাড়ির পাকের ঘরের অর্ধেকের সমান। বাসার আকার আয়তন দেখে ভাবছি, দিনের বেলায় যা হোক, এত মানুষ রাতে এক সাথে শোয় কী করে? শুধু স্থানাভাবের সমস্যা নয়, রয়েছে মশা-মাছিসহ ছারপোকার উৎপাত। দেয়াল ও মেঝে মাটি ফাটা। তার ফাঁকে ঝাঁকে ঝাঁকে ছারপোকা। কী ভয়ঙ্কর অবস্থা। কাঠি দিয়ে খোঁচা দিলে কিলবিল করে স্থান ত্যাগ করে ছোরপোকারা। বাসার পেছনে খোলা ড্রেন থেকে আসা বোঁটকা গন্ধে বাতাস সবসময় ভারী হয়ে থাকে। টিউবওয়েল থেকে অনেক শক্তি ব্যয় করে পানি তুলতে হয়। বাসার ভেতর থেকে বাইরে অনেক আরাম। মসজিদের কাছেই রেললাইন। বিকেল কাটালাম রেলগাড়ির ‘চিক্ চিকা চিক্ চিক্’ আসা-যাওয়া দেখে। রাত ১০টার দিকে আশপাশের লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে ভাইয়া আমাদের ছাপরা চালের উপরে উঠাতে উঠাতে বললেন, ‘কোনো শব্দ করবি না। নড়াচড়াও করবি না। নাকে মুখে কাঁথা জড়িয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়। ফজরের আজানের সময় এসে নামাব।’

আমার সাথে আরো দুই ভাইপোর শোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল ছাপরার ওপর। মশা যাতে আমাদের ‘তুলে নিতে না পারে’ এ জন্য নাকে মুখে কাঁথা জড়ানোর নির্দেশ।
পরদিন সকাল সকাল রওনা হই রমনা চিড়িয়াখানার উদ্দেশে। ভাইয়াসহ আর দুই সন্তান। চিড়িয়াখানা যাওয়ার পথেই কামান। গুলিস্তান গোলচত্বরের একপাশে পাকা ফ্রেমের ওপর বিশাল কামান। ৮-১০ ফুট লম্বা এবং তিন-চার ফুট বেড়ের লৌহ নির্মিত কামানটি এর পরেও অনেক বছর এখানেই ছিল। জনশ্রুতি আছে যে, ‘ভারতে মোগল শাসনামলে দুর্র্ধর্ষ দস্যুদের নিবৃত্ত করতে কামানটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময় মোগল সেনাপতি মীর জুমলার আমলে এটি ঢাকায় স্থাপন করা হয়।’ কামানটি তিনি আসাম যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন বলেও জানা যায়। ব্রিটিশ শাসনামলে এটিকে ‘বিবি মরিয়ম’ নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থল ওসমানী উদ্যানে রক্ষিত আছে।

এটি মোগল শাসনামলের একটি বিশেষ নিদর্শন। যা হোক, কামান দেখা শেষ করে প্রবেশ করি চিড়িয়াখানায়। রমনা চিড়িয়াখানা। জানা যায়, ‘১৯৫০ সালে হাইকোর্টসংলগ্ন রমনা পার্কে কয়েকটা ঘর তুলে নানা প্রকার পশু-পাখি রাখার ব্যবস্থা করা হয়। শুরুতে ওই চিড়িয়াখানায় ছিল ৩-৪টা চিতাবাঘ, কয়েকটা ময়ূর, দেশী-বিদেশী পোষা পাখি, বাগডাস, মেছোবাঘ, কুমির, বনবিড়াল ও শেয়াল। ঢাকার প্রথম চিড়িয়াখানাই ছিল এটা।’ দর্শকদের আগ্রহের কারণে বাড়তে থাকে স্থান ও পশুপাখি এবং জীবজন্তু। এর আগে এক সাথে এত পশুপাখির কথা ভাবতেও পারতাম না। তাবৎ পশুপাখি দেখি আর বিস্মিত হই। জীবনে প্রথম দেখলাম জীবিত বাঘ, সিংহ ও কুমিরসহ জানা-অজানা পশুপাখি। কিন্তু দেখা শেষ করার আগেই একটা অঘটন ঘটে যায়। যে হাউজে উদবিড়াল ছিল, সে হাউজের কাছে গিয়ে গলা উঁচিয়ে উদবিড়াল দেখার চেষ্টা করছিলাম। উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলাম চার দিকে। চঞ্চল বড় ভাইপো হাউজের পেছনে নেটের ফাঁকে পা রেখে হাউজের উপরে উঠতে গিয়ে আর্তচিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ডান পায়ের বুড়ো আঙুল রক্তাক্ত। যে নেটের ফাঁকে পা রেখে উঠতে গিয়েছিল, এর ওপাশেই ছিল উদবিড়ালটা। উদবিড়ালটা মাছ মনে করে দাঁত বসানোর সাথে সাথে চিৎকারসহ পড়ে যায় ভাইপো। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে দেখে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারের কাছে।

একসময় ‘ঢাকা শহর’ বলতে গুলিস্তানকে বুঝতাম। গুলিস্তান নামকরণ হয়েছিল এখানকার সিনেমা হলের নাম থেকেই। এখন যা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, তখন তা ছিল হল মার্কেট। এই মার্কেটই পাকিস্তান আমলে জিন্নাহ এভিনিউ হয়ে বাংলাদেশ আমলে হয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। গুলিস্তান সিনেমা হলের প্রথম নাম ছিল, ‘লিবার্টি সিনেমা হল’। সিনেমা হলটি বন্ধ হয়ে গেলেও ‘গুলিস্তান’ নামটি মানুষের হৃদয় থেকে মুছে যায়নি।
মনোয়ার আহমদ তার ‘ঢাকার পুরনো কথা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালের শেষের দিকে রমনা এলাকায় ফজলে দোসানি নির্মাণ করেন গুলিস্তান সিনেমা হল। পরে এই সিনেমা হলের উপরে অল্প আসনের আরো একটি ছোট হল নির্মাণ করে এর নাম দেন ‘নাজ সিনেমা হল’। এই হলে প্রথম দিকে শুধু ইংরেজি সিনেমা দেখানো হত। বর্তমানে দুটি সিনেমা হলই বিলুপ্ত।’

বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সিনেমা হলটির মালিক পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, চলে যাওয়ার সময়ে তিনি তার এসব সম্পদ ফেলে রেখে যান। ফলে সিনেমা হলসহ বর্তমান গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্স এলাকাটি পরিত্যক্ত সম্পদ হিসাবে বিবেচিত হয়। এজন্য স্বাধীনতার পরে তথা ১৯৭২ সালে এই হল ও সংলগ্ন সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দিয়ে দেয়া হয়। সেই থেকে এই জায়গার মালিক উক্ত ট্রাস্ট।’

ভাইপো একটু সুস্থ হতেই মনে পড়ে গুলিস্তানের হলে সিনেমা দেখার কথা। সিনেমা না দেখলে বন্ধুদের কাছে মুখই দেখাতে পারব না। কাপ্তানবাজার বরাবর রাস্তার উত্তরদিকে এখন যেখানে বড় মসজিদ সেখানে ছিল বাসডিপো। নারায়ণগঞ্জসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগত বাস ডিপোর একদিক দিয়ে বাস প্রবেশ করে, অপরদিক দিয়ে বের হয়ে যায়। ডিপোর দক্ষিণ পাশে দাঁড়িয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে তাকালে গুলিস্তান সিনেমা হলের ওপরে টানিয়ে রাখা, সিনেমার পোস্টার চোখে পড়ে।

সিনেমা দেখার আবদার করতেই ভাইয়া আমাদের নিয়ে যান ডিপোর দক্ষিণ পাশে। দক্ষিণে এক পাশে দাঁড় করিয়ে গুলিস্তান সিনেমা হলের ওপরে টানানো ছবির দিকে আঙুল তুলে, ‘ দেখ, সিনেমার ছবি দেখ। এখানে দাঁড়ালেই সিনেমার সব ছবি দেখা যায়। বাজার করতে যাই। তোমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিনেমার ছবি দেখো। সাবধান, আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত এখান থেকে এক চুলও নড়বে না। নড়লেই হারিয়ে যাবে।’

আমরা ঠায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মন ভরে সিনেমার ছবি দেখলাম। গাঁয়ে এসে সিনেমা দেখা নিয়ে বন্ধু মহলে প্রথম প্রথম গলার জোর ভালোই ছিল। যখন বুঝতে পারলাম, ‘সিনেমা দেখা’ আর ‘সিনেমার ছবি দেখা’ এক কথা নয়, তখনই কমতে থাকে গলার জোর।
৫ সেপ্টেম্বর পত্রিকার পাতায় ঢাকা নগরীর ভয়াবহ চিত্র দেখে স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে ষাটের দশকের ঢাকার চিত্র। ঢাকা সাধারণ মানুষের বসবাসের অযোগ্য তখনো ছিল, এখনো আছে। পার্থক্য, তখন বিশ্বের অপরাপর শহরের সাথে তুলনা করার জন্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ধরনের সংস্থা ছিল না; তবে এখন আছে।
লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ গৃহবধূ গ্রেফতার জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী

সকল