৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কত যে অনাচার ধরাধামে!

-

একটি ইংরেজি দৈনিকে ১৭ জুন তারিখে খবর ছাপা হয়েছে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা অসৎ কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে সরকারি বেতনে বাবুর্চি থাকা সত্ত্বেও সরকারি টাকায় খাদ্য কিনে খাওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আরো কয়েকটি অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তার স্বামী প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুও নাকি ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত।

এর আগে একই পত্রিকায় ১২ জুন প্রকাশিত সংবাদ ছিল সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ-বিন-সলমান তার বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে সাজিয়ে রাখতে পঁয়তাল্লিশ কোটি ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় তিন হাজার সাত শ’ কোটি টাকায় ‘লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ‘সেলভেটর মুুন্ডি’ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৭ সালে বিলেতের ‘কৃষ্টি’ সংস্থা থেকে কিনেছেন। এমন খবর কেন যে বিশ্বাস করতে মন চায় না, তা সহজবোধ্য। মুসলিম উম্মাহর পবিত্র ঘর মসজিদুল হারামের ভবিষ্যৎ তত্ত্বাবধায়ক এ ব্যক্তি এমন কাজ করবেন যে, আল্লাহর দেয়া সম্পদ তেল বিক্রি করে পরিত্যাজ্য দ্রব্যাদি কিনে আল্লাহর নিয়ামতের অপচয় করছেন? তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, খ্যাতিমান সাংবাদিক জামাল খাশোগির খুনের সাথে তিনি জড়িত। খাশোগির কথা লিখতে গিয়ে মনে পড়ে আরেক খাশোগির কথা। বেশ কয়েক বছর আগে পরলোকগত আদনান খাশোগি নামে আরেক সৌদির কাহিনী পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। তারও নাকি একটা প্রমোদতরী ছিল, যে তরীর বাথরুমে ব্যবহৃত হাতলগুলো ছিল স্বর্ণের তৈরি। তাহলে কী ধরে নিতে হবে তাদের হাতে ক্ষমতা, ধনদৌলত আসলেই তারা ভোগ বিলাসিতায় মত্ত?

আগে তা ছিল না। আমেরিকার নিউজউইক বুক ডিভিশন থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত DOME OF THE ROCK বইটি মূলত জেরুজালেম নগরীর ইতিহাস। এত সমৃদ্ধ ইতিহাসসংবলিত স্থান হয়তো পৃথিবীতে আর একটিও নেই। এ গ্রন্থে একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ আরবের একটি মনোমুগ্ধকর ঐতিহাসিক কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে; যা এখানে অংশবিশেষ তুলে ধরছি- প্রায় পৌনে চৌদ্দ শ’ বছর আগে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে (?) মুসলিম বাহিনী যখন জেরুসালেম নগরীর দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হলো যুদ্ধ করে নগরীর দখল নিতে, তখন খ্রিষ্টান অধ্যুষিত সেই নগরীর কর্তাব্যক্তি ছিলেন পাদ্রি সফ্রোনিয়াস।

মুসলিম সেনাবাহিনী চার মাস ধরে জেরুসালেম অবরুদ্ধ রাখার পর সফ্রোনিয়াস একদিন নগরীর একটা প্রান্তের দেয়ালে এসে মুসলিম বাহিনীকে বললেন, যদি হজরত ওমর রা: নিজে এসে কর্তৃত্ব নেন, তাহলে তিনি তার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। হজরত ওমর রা: খবর পেয়ে এসে জেরুসালেম অধিবাসীদের আত্মসমর্পণ গ্রহণ করলেন এবং সফ্রোনিয়াসকে আশ্বাস দিলেন, তাদের জনগণ, সম্পদ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সব কিছু নিরাপদে থাকবে। কোনো অত্যাচার করা হবে না তাদের প্রতি। তখনকার একজন খ্রিষ্টান ঘটনাপঞ্জি লেখক লিখেছেন (ওপরে উল্লিখিত গ্রন্থে) হজরত ওমর রা: ছিলেন একজন মিতব্যয়ী, দৃঢ়চিত্ত, সুশৃঙ্খল চরিত্রের অধিকারী এবং অতি সুন্দর মনের মানুষ। তিনি যখন জেরুসালেম নগরীর দখল নিতে এলেন; তখন তার গায়ে ছিল জোড়াতালি দেয়া জামাকাপড়। তিনি ঘুমালেন একটি খেজুর পাতার চাটাইতে। নামাজের সময় হলে হজরত ওমর রা: নামাজ আদায় করতে চাইলেন। সফ্রোনিয়াস তাঁকে আহ্বান করলেন গির্জার ভেতরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করতে। খলিফা এতে অস্বীকার করলেন এবং বাইরে গিয়ে নামাজ আদায় করলেন। পরে তিনি সফ্রোনিয়াসকে বললেন, ‘জানেন কেন আমি গির্জার ভেতরে নামাজ পড়লাম না? আজ যদি এখানে নামাজ পড়তাম তাহলে আমি চলে যাওয়ার পর এ স্থান আপনাদের বেহাত হয়ে যেত।’


এ ছিল তখনকার মুসলিম জাহানের খলিফা হজরত ওমর রা:-এর চরিত্র। একের পর এক এমন আদর্শ চরিত্রের নেতাদের উপস্থিতির কারণে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। আর আজ আদর্শচ্যুতির কারণে মুসলমানেরা নিগৃহীত হচ্ছে দেশে দেশে। এমনকি, মাত্র কয়েক শ’ বছর আগেও এ উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের আগে কোনো কোনো পাঠান, মোগল বাদশাহ রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকা সংসারে ব্যয় করতেন না। সুলতান নাসির উদ্দীন নাকি টুপি তৈরি করে, আর মোগল বাদশাহ আলমগীর নিজ হাতে লেখা কুরআন শরিফ বিক্রি করে সংসারের ব্যয়ভার বহন করতেন। মুসলমানেরা যে ব্যাপক হারে বিলাসে গা ভাসিয়ে দিয়েছে, এ কারণে অনেকেই অসাধুতায় জড়িয়ে পড়তেন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু আর তার স্ত্রী সারা যে অপরাধ করেছেন, তা অমুসলিম দেশগুলোতে খুব একটা দেখা যায় না। মুসলিমদের জন্য হালাল হারামের কঠিন বিধান থাকা সত্ত্বেও তাদের অনেকেই দুর্নীতির অপরাধ করছেন আর অপমানিত হচ্ছেন।

আরো একটি সংবাদ পড়ে ব্যথিত না হয়ে পারা যায় না। মুসলিম অধ্যুষিত মিসরের প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান ও শ্রদ্ধেয় জননেতা ড. মোহাম্মদ মুরসি আদালতের কাঠগড়ায় ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ছিলেন মিসরের জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি, যিনি মাত্র বছরখানেক স্বপদে বহাল থাকার পর যড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অবস্থায় অচেতন হয়ে ঢলে পড়ে ইন্তেকাল করেন। দেশটির সেনাপ্রধান আবদুল ফাত্তাহ সিসি (নাকি ছিঃ ছিঃ) জোর করে রাষ্ট্রপতি হওয়ার খায়েশে তাক সরিয়ে পদটি দখল করেন।

ইরাকের স্বৈরাচারী একনায়ক সাদ্দাম হোসেনকে পদচ্যুত করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করার পর টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে ওঠে, তার সব মূর্তি বা ভাস্কর্য কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। তার আগে ঘটেছিল ইরানের স্বৈরাচারী সম্রাট রেজা শাহ পাহলভির বিতাড়ন। ইরান যদিও এরপর একটা জনগণের সরকার পেয়েছে, কিন্তু ইরাকের ভাগ্য এখনো খোলেনি। সিরিয়া, ইয়েমেন দুর্বিপাকে। সৌদি আরব আর সহযোগী মিসর, আমিরাত জোটবদ্ধ হয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিভেদ ও অশান্তি জিইয়ে রেখেছে। মুসলিম দেশগুলোর অনৈক্যের দরুন নিগৃহীত মুসলিমদের কোনো সহায়তা করতে পারছি না আমরা। অথচ ধর্মীয় নির্দেশ হচ্ছে- আমাদের একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।

মুসলিম দেশগুলো যাদের কাছ থেকে কেনা অস্ত্র দিয়ে পরস্পর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে একে অন্যকে ধ্বংস করছে, কখনো কি ভেবেছি এসব অস্ত্র নির্মাণকারী দেশ কখনো আমাদের যুদ্ধের উন্মাদনা থামাতে চাইবে না? কারণ তাহলে তাদের অস্ত্র কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, শ্রমিকেরা বেকার হয়ে আন্দোলনে নামবে, বৈদেশিক মুদ্রার আয় বন্ধ হয়ে যাবে, সর্বোপরি অন্যায় মুরুব্বিয়ানার অবসান ঘটবে! সৌদি আরব হোক আর তুরস্কই হোক, কেউই অত্যাচারী ইসরাইলের বিরুদ্ধে আমেরিকা, রাশিয়ায় কেনা যুদ্ধ সরঞ্জাম ব্যবহার করা ঠিক হবে না।


আমাদের দেশে রাষ্ট্রের বিপুল অপচয়ের বিষয়ে দুই-একটা কথা লিখতে হয়। গত ১৭ জুন একটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত খবর ছিল : ‘পদ না থাকলেও পদোন্নতি : জনশাসনের ১৩৬ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার।... যদিও নির্বাচনের আগে গত ২৪ অক্টোবর সিনিয়র সহকারী সচিব ও সমমর্যাদার ২৫৬ কর্মকর্তাকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর আগে ২৯ আগস্ট ১৬৩ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব এবং ২০ সেপ্টেম্বর ১৫৪ কর্মকর্তাকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়।

আট দশক আগে আমার বাল্যকালে একটি শ্লোক শুনেছিলাম : ‘পাইলে পরের ধন/বাপে পুতে কীর্তন’। তবে কি সমৃদ্ধির সূর্যালোক দেখে আমরা বেশি বিমোহিত হয়ে তালগোল হারিয়ে ফেলেছি?

পশ্চিমা দেশগুলোয় নাকি স্থায়িত্বের গ্যারান্টিযুক্ত কোনো চাকরি নেই। শুধু ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’। কাজ নেই তো বিদায়; কাজে সন্তুষ্ট নই তো বিদায়। আমাদের কেন চাকরিদাতার গলায় দড়ি? আমাদের জাতীয় সংসদের সদস্যরা সরকারের সত্যিকার কোনো সমালোচনা করেন কি? খবরের কাগজে কিন্তু তেমন কিছু পাই না। অথচ এমন একদিন ছিল যখন পরাধীন ভারতেও জনপ্রতিনিধিরা সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তখনকার সোহরাওয়ার্দী সরকারের সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টের কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় প্রাদেশিক পরিষদের একজন কংগ্রেস দলীয় সদস্য এমন সমালোচনা করেছিলেন। তখন এক মণ চালের দর ছিল দশ টাকা! যদি আমাদের কোনো পার্লামেন্ট সদস্যকে বলতে শুনতাম : ‘রূপপুরের সেই বালিশগুলো সোনার দামে কেনা রে, খাটে তুলতে সেই বালিশ আরো গেছে রূপা রে!’


আরো সংবাদ



premium cement
ধরপাকড়ের মধ্যেই ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্ষোভ অব্যাহত যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে ৩ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা নিহত ফিলিপাইনের তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি, বাড়তে পারে আরো শিখ নেতা পান্নুনকে খুন করতে ‘হিটম্যান’ পাঠিয়েছিলেন ‘র অফিসার’ : ওয়াশিংটন পোস্ট দিল্লিকে উড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে কেকেআর করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা স্বীকার অ্যাস্ট্রাজেনেকার বাইডেনকে পিছনে ফেলে দিলেন ট্রাম্প ইউরোপের ‘গাজা’ যুদ্ধ আসছে শয়তানবাদ! পার্বত্য চট্টগ্রামে কেএনএফের উত্থান ও করণীয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতির কর্মীকে বেদম প্রহার সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের

সকল