ইরান ও ইসরাইল, সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

গাজা যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই গত সপ্তাহে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসুলেটে হামলা চালায় ইহুদিবাদী ইসরাইল। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশ শাখার শীর্ষ জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি-সহ ১৩ জন নিহত হন। এ হামলার কঠোর জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এরই মধ্যে ইসরাইলে প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে ইরান। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সরে যেতেও বলেছে তারা। খবর : বিবিসি, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার।
এ দিকে ইরানি হামলার আশঙ্কায় ইসরাইলে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেখানে নতুন এক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। বাতিল করা হয়েছে প্রতিরক্ষা বিভাগের যোদ্ধা (কমব্যাট) ইউনিটগুলোর সব রকম ছুটি। আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জিপিএস। এক কথায় ইসরাইল-ইরান উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। কারণ এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে তা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পারবে না কেউ।
এরই মধ্যে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন রিপোর্ট করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও ওই এলাকায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে অথবা ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো টার্গেটে যদি ইরান হামলা চালায় তাহলে তার উল্লেখযোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইরান তাদের যে বার্তা দিয়েছে সে বিষয়ে মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান ও ইসরাইলের কার কত সামরিক শক্তি?
অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরাইল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানও সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে। সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ ওয়েবসাইট। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরাইলের অবস্থান ১৭তম।
এক নজরে দেখে নেয়া যাক ইরান ও ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা : ইরানের নিয়মিত সেনা ছয় লাখ ১০ হাজার। অন্য দিকে ইসরাইলের এক লাখ ৭০ হাজার। ইরানের রিজার্ভ সেনা রয়েছে তিন লাখ ৫০ হাজার, আর ইসরাইলের চার লাখ ৬৫ হাজার। আধা সামরিক বাহিনীতে ইরান এগিয়ে, তাদের রয়েছে দুই লাখ ২০ হাজারের বাহিনী, যেখানে ইসরাইলের ৩৫ হাজার।
ইরানের মোট সামরিক উড়োজাহাজ ৫৫১টি আর ইসরাইলের ৬১২টি। যুদ্ধবিমান ইরানের ১১৬টি আর ইসরাইলের ২৪১টি। হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান ইরানের ২৩টি, ইসরাইলের ৩৯টি। পরিবহন উড়োজাহাজ ইরানের ৮৬টি, ইসরাইলের ১২টি।
ইরানের রয়েছে ১২৯টি হেলিকপ্টার আর ইসরাইলের আছে ১৪৬টি। হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার ইরানের ১৩টি আর ইসরাইলের ৪৮টি। ট্যাংক ইরানের এক হাজার ৯৯৬টি আর ইসরাইলের এক হাজার ৩৭০টি।

ইরানের সাঁজোয়া যান ৬৫ হাজার ৭৬৫টি আর ইসরাইলের ৪৩ হাজার ৪০৩টি। যুদ্ধজাহাজ (ফ্লিট) ইরানের ১০১টি আর ইসরাইলের ৬৭টি। সাবমেরিন ইরানের রয়েছে ১৯টি, যেখানে ইসরাইলের পাঁচটি।
ইরান ও ইসরাইলের হাতে রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। ইসরাইলের ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এর সুবাদেই বর্তমান যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজার হামাসের রকেট থেকে নিজেদের অনেকটাই রক্ষা করছে ইসরাইল। এ ছাড়া দেশ দু’টির হাতে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও হামলার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বহু ড্রোন।
অন্য দিকে বিশেষজ্ঞ মহলে দাবি- ইসরাইলের কাছে পারমাণবিক বোমাও রয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না দেশটি। অন্য দিকে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সন্দেহ ইরানও পরমাণু বোমা তৈরিতে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যদিও এসব বিষয় গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যে উল্লেখ নেই।