১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


ভারতে নির্বাহী আদেশে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে অপরাধ ঘোষণা

মুসলিম পারিবারিক আইনের ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে ভারতীয় মুসলিমদের বিক্ষোভ :ইন্টারনেট -

ভারতের কোনো মুসলিম পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেন তাহলে তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তিন তালাক বা তাৎণিক বিবাহবিচ্ছেদকে ‘অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করে একটি নির্বাহী আদেশ জারিতে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের মন্ত্রিসভা। বিভিন্ন দলের আপত্তির মুখে পার্লামেন্টের উচ্চক রাজ্যসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনের শেষ দিনে এ সংক্রান্ত খসড়া বিলের সংশোধনীটি আটকে গিয়েছিল। ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার সেখানে তা পাস করাতে না পেরে সোমবার এ নির্বাহী আদেশে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দানকে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে অনুমোদন দেয়।
আদেশে তিন তালাক আইন নামে পরিচিত মুসলিম ওমেন (বিবাহের অধিকার সুরা) বিল ২০১৭-এর যে তিনটি বিধান নিয়ে বিতর্ক চলছিল তাতেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইসলামি রীতি অনুযায়ী, কোনো পুরুষ মুখে তিনবার ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করেই তাৎণিকভাবে তার স্ত্রীকে ত্যাগ করতে পারেন। ভারতের এ নির্বাহী আদেশের প্রথম পরিবর্তনে নারী কিংবা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের স্বামীর এ তাৎণিক তিন তালাকের বিরুদ্ধে মামলার সুযোগ দেয়া হয়েছে। স্বামীর সাথে পরে সমঝোতা হলে স্ত্রীকে মামলাটি তুলে নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সংশোধনীতে। স্ত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ শোনার পর বিচারককে স্বামীর জামিনে মুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার এখতিয়ার তৃতীয় সংশোধনীতে দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন ও আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত এ আইনটি নির্বাহী আদেশে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। লোকসভায় বিলটি পাস হলেও শাস্তি ও জামিনের বিধানের বেশ কয়েকটি বিষয়ে কংগ্রেসসহ অন্য বিরোধীদের আপত্তির মুখে রাজ্যসভায় তা আটকে গিয়েছিল। নতুন আইনের ফলে তিন তালাকের সাথে কেউ যুক্ত থাকলে তার তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও জরিমানা ভোগ করতে হবে। পুলিশ চাইলেও অভিযুক্তকে জামিন দিতে পারবে না, এ এখতিয়ার থাকছে কেবল বিচারকের। সংশোধিত আইনে ‘নিকাহ হালালা’ বিধানেরও উল্লেখ রয়েছে, যেখানে সংশ্লিষ্ট নারী ডিভোর্সের পর অন্য কাউকে অথবা ইচ্ছে হলে নিজের স্বামীর কাছে ফিরে গিয়ে তাকে ফের বিয়ে করতে পারবেন। বিরোধী দলগুলো অজামিনযোগ্য গ্রেফতারিসহ এ বিলের কযেকটি কঠোর বিধানের সমালোচনা করেছে। গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোট ‘তিন তালাককে’ নিষিদ্ধ করে একে ‘অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করে। গতকাল ভারতের আইনমন্ত্রী রবি শংকর প্রাসাদ বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কারণে সরকার এই আদেশ দিতে বাধ্য হয়েছে।
খারাপ সিদ্ধান্ত : টার্গেট মুসলিম পুরুষ
নয়াদিল্লিভিত্তিক নারী অধিকার আইনজীবী ফাভিয়া আগনিস বলেছেন, সরকারের এ পদক্ষেপ ‘অযৌক্তিক’। এটি একটি খারাপ সিদ্ধান্ত। সরকার পার্লামেন্টে বিলটি পাস করতে ব্যর্থ হয়ে নির্বাহী আদেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আগেই বলেছে, এটি অবৈধ। তাই যা আগেই অবৈধ হয়েছে তা কী করে এখন অপরাধ হবে? তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক তালাকদান ও নারীদের পরিত্যাগ করা একই জিনিস। বহু হিন্দু ও মুসলিম তাদের স্ত্রীকে পরিত্যাগ করছে, তাদের ক্ষেত্রেও একে অপরাধ বলে গণ্য করা উচিত। কিন্তু আপনারা তা না করে কেবল মুসলিম পুরুষদেরকে টার্গেট করছেন। মুসলিম সম্প্রদায়কে অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করার হিন্দু মৌলবাদী দল বিজেপির দীর্ঘদিনের অপপ্রচারকে বাস্তবায়ন করা হলো। এ ছাড়া বিজেপি ভারতে একই ধরনের দেওয়ানি আইন করতে চাচ্ছে, এটি তারই অংশ হতে পারে। ভারতের মুসলমানরা তাদের পারিবারিক আইনে সরকারের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement