০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তৈরী পোশাকনির্ভর রফতানি খাত

-

দেশের তৈরী পোশাক খাত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে। এক খবরে জানা গেছে, গত সাত মাসে কমপক্ষে ৪০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ২৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। এ খাতের উদ্যোক্তারাও অনেকটা হাল ছেড়ে দেয়ার মতো অবস্থা হয়েছে। তারা বলছেন, তারা প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। এ জন্য তারা সমন্বিত উদ্যোগ চাচ্ছেন। 

দেশের তৈরী পোশাক খাতের এ চলমান অবস্থায় অনেকটা অজানা আশঙ্কা ভর করছে আমাদের অর্থনীতিতে। কারণ রফতানি আয়ের ঝুড়িতে তৈরী পোশাক খাতের ধারের কাছে কোনো পণ্য বা খাত না থাকায় এ আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। তৈরী পোশাক খাতের উত্থান-পতনের সাথে কেন এ অজানা আশঙ্কা আমাদের ওপর ভর করে, তা কিছুটা বিশ্লেষণ করলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিকল্প থাকে। আর বিকল্প না থাকলে স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। যেমন, কারো ডান হাত না থাকলে বাম হাত দিয়ে কাজ চালায়। বাম হাত না থাকলে ডান হাত দিয়ে কাজ চালায়। জীবনের গতি যেন থেমে না যায়, সে জন্য থাকে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা। যার বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা থাকে না, তার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। জীবনের গতি থেমে যায়। হয় ছন্দ পতন। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই থাকতে হয় বিকল্প ব্যবস্থা। 

আবার প্রতিটি ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখতে হয়। যেমন, কেউ ১০ টাকা আয় করে ১৫ টাকা ব্যয় করলে সে যেমন ঋণগ্রস্ত হয়। আবার ১০ টাকা আয় করে ২ টাকা ব্যয় করলে তার ৮ টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। যদিও বেশি উদ্বৃত্ত সব সময় ইতিবাচক ফল বয়ে আনে না। কারণ ব্যয় না করলে আয় বাড়বে না। কারণ ব্যয় হলো জীবনের একটি বিনিয়োগ। যেমন, কেউ যদি সুস্থ থাকার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনে খায় তা হলে ওই ব্যক্তি যেমন সুস্থ থাকবে। আর সুস্থ থাকলে সে বেশি কাজ করতে পারবে। আর বেশি কাজ করতে পারলে বেশি আয় হবে। এভাবেই ব্যয়ের সাথে আয়ের একটি যোগসূত্র আছে। কিন্তু আয়ের অতিরিক্ত ব্যয় করলে ব্যক্তি যেমন ঋণগ্রস্ত হন, তেমনি, বর্ধিত আয় না হলে দৈনন্দিন ব্যয়ের সাথে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না। এতে জীবনের নানা জটিলতা বাড়ে। হয়তো এ কারণেই মনীষীরা বলেছেন, আয় বুঝে ব্যয় করো। 

আমাদের জাতীয় জীবনে এক দিকে আমাদের মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা আমদানি করি। এতে প্রয়োজন হয় বৈদেশিক মুদ্রা। আর এ বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করি রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের রফতানি ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে যে টুকু বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, পণ্য ও সেবা আমদানিতে ব্যয় হয় তার চেয়ে বেশি। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মেটাতে আমরা বৈদেশিক ঋণ করি, বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে গ্রহণ করি নানা অনুদান। 

আমাদের আমদানি ব্যয়ের বড় একটি অংশের সংস্থান হয় রফতানি আয়ের মাধ্যমে। বিভিন্ন পণ্য রফতানির মাধ্যমে আমরা প্রতি বছর এ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করি। কিন্তু রফতানির ঝুড়িতে পণ্যের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক নয়; যে কয়েকটি পণ্য রয়েছে তার মধ্যে রফতানি আয়ে বেশির ভাগই দখল করে আছে তৈরী পোশাক খাতে। রফতানি আয়ের ৮৫ ভাগই আসে এ খাত থেকে। বাকি ১৫ ভাগ আসে বাকি পণ্য থেকে। রফতানি আয়ে তৈরী পোশাক খাতের বিকল্প কোনো পণ্য আজো হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরেই আমাদের রফতানি খাত তৈরী পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। রফতানির ঝুড়িতে তৈরী পোশাক খাতের বিকল্প কোনো পণ্য না আশায় তাই আমরা সবসময় থাকি উদ্বিগ্নে। এ খাতের ওপর হালক কোনো ঝড় এলেই আমরা আতঙ্কিত হই, হই শঙ্কিত। নানা অজানা আশঙ্কা আমাদের ওপর ভর করে। 

রফতানি আয়ের গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, প্রতি বছর যে পরিমাণ রফতানি আয় হয়, তার গড়ে ৮০ শতাংশ আয় হয় তৈরী পোশাক খাত থেকে। যেমন, দেশে মোট রফতানি আয়ের ২০১০ সালে ৭৭ শতাংশ, ২০১১ সালে ৭৮ শতাংশ, ২০১২ সালে ৭৮ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৭৯ শতাংশ, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ৮১ শতাংশ করে, ২০১৬ সালে ৮২ শতাংশ আয় হয় তৈরী পোশাক খাত থেকে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও আয় হয় সাড়ে ৮৩ শতাংশ; অর্থাৎ তৈরী পোশাক খাতের রফতানি আয় বাড়লে আমাদের মোট রফতানি আয় বাড়ে, আর এ খাতের কোনো সমস্যা হলে সামগ্রিক রফতানি আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। 

সাম্প্রতিক তৈরী পোশাক খাতের কিছু খবরে এ ধারণের উদ্বেগ বেড়ে গেছে। ভর করেছে অজানা আশঙ্কা। আর তা হলে গত সাত মাসে ২৫ হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪০টি কারখানা। তৈরী পোশাক খাতের এমন অবস্থার জন্য উদ্যোক্তারা ও শ্রমিকরা বিপরীতমুখী কথা বলছেন। উদ্যোক্তারা বলছেন তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। শ্রমিকের বেতনভাতা বেড়েছে। ক্রেতাদের বিভিন্ন শর্ত পরিপালন করে কারখানা আধুনিকায়ন করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু ক্রেতারা তৈরী পোশাকের দাম বাড়াচ্ছেন না। 

এতে লোকসানের পাল্লা ভারী হচ্ছে। আর এ লোকসানের ধকল সামলাতে না পেরে অনেক কারখানায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যয় কমাতে করা হচ্ছে শ্রমিক ছাঁটাই। 

গত কয়েক মাসের এ খাতের সামগ্রিক চিত্র দেখলে বোঝা আরো সহজ হবে। যেমন, গত বৃহস্পতিবারও রাজধানীর তেজগাঁওয়ে একটি বড় তৈরী পোাশাক খাতের কারখানার শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। সেখানে বিনা নোটিশে দেড় শ’ শ্রমিককে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদ জানান তারা। গত ঈদুল আজহার আগে একযোগে ২২টি গার্মেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। গত আগস্টে এসএফ ডেনিম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে তেজগাঁওয়ের আরেকটি কারখানার ৭০০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হলে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। 

তবে পোশাক খাতের শ্রমিক নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। কারখানার মালিকদের মধ্যে অশুভ প্রতিযোগিতার কারণে ক্রেতারা কম মূল্যে পণ্য কিনছে। একটি কারখানায় ১৫ ডলারের পণ্য সরবরাহ করতে চাইলে অন্য কারখানায় তা ১০ ডলারের ডিদে রাজি থাকেন। এভাবেই কম দামে পণ্য পাচ্ছেন তৈরী পোশাক খাতের ক্রেতারা। আর এভাবেই তারা লোকসান গুনছেন। এর দায় এসে পড়ছে শ্রমিকদের ওপর। আবার কেউ কেউ বলছেন, উদ্যোক্তারা অর্থ পাচার করছেন। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বলছেন সব শেষ হয়ে গেছে। 

আর যাই হোক দেশের রফতানি খাতের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত দেশের তৈরী পোশাক খাত টিকে থাকুক এ কামনা সবারই। দেশের শ্রম ঘন এ খাতকে টিকে রাখার জন্য প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও বাড়াতে হবে; অন্যথায় দেশের রফতানি আয়েই ধস নামবে না, ধস নামবে পুরো অর্থনীতিতে, যা কারোরই কাম্য নয়।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছার আহ্বান ম্যাক্রোঁর গাজীপুরে পাওনা আদায়ের দাবিতে শ্রমিকদের অবস্থান ৩ বলের ব্যবধানে শান্ত-লিটনের বিদায় লেবাননে ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৪ জন নিহত ঢাকায় এবার কোরবানির পশুর হাট ২২টি ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করা পর্যন্ত সৌদির সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি নয় : যুক্তরাষ্ট্র নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা নিহত কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি, বৃষ্টি থাকতে পারে ৭ দিন অভিনব কায়দায় বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিল পাচারকালে একজন গ্রেফতার মাওলানা মামুনুল হকের সাথে উলামা-মাশায়েখ পরিষদের সাক্ষাৎ

সকল