০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কালো টাকা সাদা করার সুফল আসবে না

-

আগামী অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ঢাউস আকারের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ বিশাল অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়নের তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকার বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য অর্থমন্ত্রী কালো টাকা সাদা করার যেমন সুযোগ দিয়েছেন, তেমিন করের জাল বিস্তৃত করেছেন। এতে সব শ্রেণীর ব্যবসায়ীসহ ভোক্তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিশাল অঙ্কের এ ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের প্রতিনিধি আশরাফুল ইসলাম
নয়া দিগন্ত : কালো টাকা সাদা করার সুযোগ কতটুকু ন্যয়সঙ্গত হয়েছে ?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : প্রথম কথা হলো, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নিঃসন্দেহেই ঠিক হয়নি। কারণ এর মাধ্যমে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়। আর দ্বিতীয়ত, বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুফল আসবে না। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, বেশি ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকার মালিকেরা তাদের টাকা সাদা করেননি। অতীতের ধারাবাহিকতায়, আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় প্রদর্শন করার যে প্রভিশন রাখা হয়েছে, এর তেমন সুফল আসবে না। ফলে এ থেকে খুব একটা রাজস্বও আহরণ হবে না।
নয়া দিগন্ত : তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কতটুক বাস্তবায়ন হতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : আমি মনে করি, বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। কারণ চলতি অর্থবছর শেষ হচ্ছে ৩০ জুনে। চলতি অর্থবছর শেষে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে তা থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ শতাংশ বেশি। সুতরাং এই বিশাল অঙ্কের টার্গেট কোনো দিনই অর্জন হবে না। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বলা হচ্ছে বিভিন্ন সংস্কার করা হচ্ছে। থানা-উপজেলা পর্যায় থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ উপজেলা পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। এরপর লোকবল নিয়োগ করা হবে। এসব কাজ সম্পন্ন করতে সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আমি মনে করি, এসব উদ্যোগ শেষ করতে আগামী অর্থবছর লেগে যাবে। সুতরাং এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে এর সুফল আগামী অর্থবছরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই রাজস্ব আদায়ের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা শুধু কাগজে কলমেই থেকে যাবে, বাস্তবে অর্জন সম্ভব হবে না।
নয়া দিগন্ত : বিশাল অঙ্কের অর্থাৎ এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছে। বিশাল অঙ্কের এ ঘাটতি মেটানোর জন্য অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিলে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে কি না?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নের জন্য বিশাল অঙ্কের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এত বিশাল অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়ন হবে না। আর বাস্তবায়ন না হলে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণও তুলনামূলক কম নিতে হবে। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা কম হওয়ায় ঘাটতি কমে যাবে। কারণ আগামী অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আর চলতি অর্থবছরে যে টুকু বাস্তবায়ন হবে তা থেকে ৪০ শতাংশ বেশি। এ কারণে বাজেট যে পরিমাণ ঘাটতি দেখানো হয়েছে, সেটা থাকবে না; বরং কমে যাবে। আর যে পরিমাণ ঘাটতি থাকবে তার বেশির ভাগই নেয়া হবে জনগণের কাছ থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। যদিও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করতে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আমি মনে করি, সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে এটা বেশি একটা প্রভাব পড়বে না। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা যে ২৭ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বছর শেষে ৫০ হাজার কোটি টাকা ছেড়ে যাবে।
নয়া দিগন্ত : ব্যাংকিং খাতে মূলধন বাড়াতে রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই বোনাস শেয়ারও একটি কোম্পানির ভিত্তি শক্তিশালী করে। কিন্তু এ দু’টি খাতের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করা হয়েছে। এটা যুক্তিসঙ্গত হয়েছে কি না ?
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম : ব্যাংকিং খাতে মূলধন বাড়াতে রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভ তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। একই সাথে বোনাস শেয়ারও একটি কোম্পানির ভিত্তি শক্তিশালী করে। এ দু’টি খাতের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ মোটেও ঠিক হয়নি। কারণ বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এতে নিরুৎসাহিত হবে। পাশাপাশি নগদে লভ্যাংশ দেয়া হলে তাদের বিনিয়োগের বড় একটি অংশ প্রতি বছর মুনাফা আকারে চলে যাবে। এ ছাড়া একটি কোম্পানির শুধু বোনাস শেয়ার দেয়া হলেও ওই কোম্পানির আয়ের মধ্যে স্বচ্ছতা না থাকলে আর সেটা ক্যাশ ডিভিডেন্ডের নামে বের হয়ে গেলে কোম্পানির ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। এতে বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। তাই আমি মনে করি, এ ধরনের কর প্রস্তাবনা পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে স্ববিরোধী হয়েছে। সুতরাং এরকম সিদ্ধান্ত সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement