০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মিসরের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

-

দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে জনগণের অভাবিত ও অভূতপূর্ব আন্দোলনের ফলে যখন আরব বিশে^র একের পর এক রাষ্ট্রে পরিবর্তনের হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল, তখন আন্তর্জাতিক মিডিয়া এটিকে নাম দিয়েছিল আরব বসন্ত। প্রথমে তিউনিসিয়া, তারপর মিসরে স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। হোসনি মোবারকের ক্ষমতাচ্যুতির পর মিসরের ইতিহাসে প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন মুহাম্মদ মুরসি। কিন্তু তাকে এক বছরের বেশি ক্ষমতায় থাকতে দিলো না ইসরাইলের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী। তখনকার সেনাপ্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আলসিসির নেতৃত্বে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে। ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল সিসি। তারপর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নিজের অধিষ্ঠানকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। হোসনি মোবারকের পতনের পর মিসরে রাজনৈতিক সুস্থ ধারা সূচিত হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, জেনারেল সিসি শুধু তা-ই নস্যাৎ করেননি, দেশটির অর্থনীতিরও বিনাশ সাধন করেছেন। অথচ প্রচারণা চালাচ্ছেন যে, মিসরকে তিনি অর্থনীতির ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছেন।
বর্তমানে একটি গল্প ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। তা হলোÑ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সহযোগিতায় নিজ দেশকে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় এক গন্তব্যে পরিণত করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসি। অথচ বাস্তবতা হলো, এখানে অভিজাতদের পকেট যখন ক্রমেই ভারী হয়ে উঠছে, সাধারণ মিসরীয়দের জীবনমানে তখন দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত অবনতি।
বলা হচ্ছেÑ বছর খানেক ধরে নিজেকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে মিসর। দেশটিকে এখন বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় উদীয়মান বাজার হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। মিসরীয় পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্রোতের মতো এসে ভিড় জমাচ্ছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশটির স্থানীয় বাজারের মোট ঋণে বিদেশীদের ভাগ ছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশেরও বেশি। এ ধারা বজায় থাকবে চলতি বছরও। এক বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাষ্যমতে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও পূর্ব ইউরোপে যত সংস্কারের কাহিনী রয়েছে, তার মধ্যে মিসরের এ পুনরুত্থানের গল্পটিই সবচেয়ে বেশি চিত্তাকর্ষক।
প্রকৃতপক্ষে এসব কল্পকাহিনীর আড়ালে রয়েছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এক বাস্তবতা। চলতি বছরের এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়, মিসরের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশই হয় গরিব অথবা নাজুক অবস্থানে রয়েছে। সার্বিক জীবনমানের দ্রুত অবনতি ঘটছে। তাহলে মিসরের অর্থনীতির বাইরের দিকটা এতটা মসৃণ হলো কিভাবে?
মিসরের এ অলৌকিক অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের কাহিনীর পেছনে রয়েছে বড় মাপের এক প্রতারণা। আর এ প্রতারণার নীলনকশাটির মূল কারিগর জেনারেল থেকে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া আবদুল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার ও আইএমএফ। রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্রমাগত অব্যবস্থাপনা ও অবহেলা এবং মিসরীয় পাউন্ডের অবমূল্যায়নের কারণে পাঁচ বছরে মিসরের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। সরকারি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি এবং অদূর ভবিষ্যতেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
বর্তমানে মিসরের বাজেটের ৩৮ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে শুধু ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য। ঋণ ও কিস্তি বাবদ প্রদেয় অর্থ যোগ করার পর এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮ শতাংশেরও বেশি।
জনগণকে শক্তিশালী করা বা সহায়তা দেয়ার বদলে মিসরের সরকারি সম্পদের বেশির ভাগই ব্যয় হচ্ছে ঋণসংক্রান্ত অর্থ পরিশোধের পেছনে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামোর পেছনে এত কম ব্যয় বরাদ্দ ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ১০ কোটি বাসিন্দার দেশটির জন্য বেশ আশঙ্কাজনক। বিষয়টি আশঙ্কাজনক ইউরোপীয়দের জন্যও। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে মিসর শিগগিরই দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে। সম্পূর্ণ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে মিসর। অন্যদিকে আইএমএফ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অনেক। মিসরীয় অর্থনীতির কাঠামোয় অনেক হস্তক্ষেপ করেছে সংস্থাটি। আইএমএফ মিসরের প্রবৃদ্ধির হার প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু এ অঙ্ক মাত্রাতিরিক্ত ঋণ দিয়ে অনেক বেশি ফোলানো-ফাঁপানো। বিষয়টি অনেকটা সাধ্যের তুলনায় অতিরিক্ত ঋণ করার মাধ্যমে নিজের আয় বাড়িয়ে দেখানোর মতো।
এ ধরনের অতিরঞ্জনের আরেকটি উদাহরণ হলো মিসরের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ। এর পরিমাণ ৪ হাজার কোটি ডলার। আপাতদৃষ্টিতে বিপুলায়তন এ রিজার্ভের বড় একটি অংশ গঠিত হয়েছে বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে। এ অর্থ যেমন কৃত্রিমভাবে মিসরীয় অর্থনীতির আকার বাড়াচ্ছে, তেমনি এর স্থিতিশীলতাও নষ্ট করছে।
এর সবই আইএমএফের হস্তক্ষেপের প্রত্যক্ষ প্রভাব। ব্যালান্স অব পেমেন্টের সমস্যার সমাধান, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করে তোলার শর্তে ঋণ দিয়ে থাকে আইএমএফ। মিসরে সরকারি কোনো সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেই। সিসি সরকারকে এ ধরনের কর্মসূচি নিতে বলছে না আইএমএফও।
যখন আইএমএফের পক্ষ থেকে মিসরের সুদ পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলো, তখন মূলধনের খোঁজে আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারের দ্বারস্থ হলেন সিসি। মিসরের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলার জন্য সিসি নির্ভর করলেন আইএমএফের নানামুখী ঋণের ওপর। তথাকথিত সবচেয়ে আকর্ষণীয় উদীয়মান বাজার ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের গন্তব্য এখন বিনাশের পথেই এগিয়ে চলেছে। আর এ যাত্রার কাণ্ডারি স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আবদুল ফাত্তাহ সিসি।
[তথ্য সূত্রÑ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে মিসরের সাবেক বিনিয়োগমন্ত্রী ইয়াহিয়া হামেদের নিবন্ধ]


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে ইয়াবাসহ গ্রেফতার যুবকের যাবজ্জীবন বার্সার হারে লা লিগা চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ রাঙ্গামাটিতে বজ্রপাতে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু গণতন্ত্র রক্ষায় নতুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে : মঈন খান পবিত্র ওমরাহ পালন করলেন মির্জা ফখরুল রাশিয়ার সাথে সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে : ম্যাক্রোঁ বাল্যবিবাহ ঠেকানোয় বিষপানে তরুণীর আত্মহত্যা মে মাসে দেশে বৃষ্টির সর্বকালের রেকর্ড ভাঙবে! দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি উত্তর গাজায় পূর্ণ দুর্ভিক্ষের বিষয়ে হুঁশিয়ারি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে জনগণের প্রতি রিজভীর আহ্বান

সকল