২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পরিচয় গোপন করতে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে মুখে আগুন

-

মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে যুবক সাইফুলের গলা কেটে তাকে হত্যার পর দুষ্কৃতকারীরা তার পরিচয় গোপন করতে নৃশংসভাবে লাশের মুখমণ্ডল পুড়িয়ে দেয়। এমনই নেত্রকোনায় ক্লুলেস সাইফুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনার রহস্য উন্মোচনসহ জড়িত দু’জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মাসুক ও ফয়সাল। গত রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ১৪ মার্চ দুপুরে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের দেওরাজান বালুরচরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলাকাটা লাশ দেখে স্থানীয় লোকেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করে। লাশ উদ্ধার ও ফিংগারপ্রিন্ট নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যায়, নিহতের নাম সাইফুল ইসলাম। বাবা আব্দুস সামাদ, বাড়ি ঝিনাইদহ। ওই ঘটনায় বড় ভাই বাদি হয়ে মোহনগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

রোববার রাতে র‌্যাব-১৪ এর একটি দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এবং রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের হত্যাকারী মাসুক মিয়া (২৯) ও আল-ইমরান ফয়সালকে (৪৪) গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার সাইফুল হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার মাসুক ও ফয়সাল মূলত আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাই/চুরি চক্রের সদস্য। সাইফুল ৩-৪ বছর ধরে রাজধানীর মিরপুরে বসবাস করে আসছিলেন। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তার ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল দিয়ে ভাড়ায় চালাতেন।
গত ১০-১৫ দিন আগে মাসুক ফয়সালকে জানায় তার ভাগিনার একটা মোটরসাইকেল দরকার। সেই সুবাদে মাসুক তার ভাগিনার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে ফয়সালকে দেয়। কিন্তু ফয়সাল বাইক দিতে না পারায় মাসুক চাপ দিতে থাকে। পরে দু’জন মিলে ফয়সালের মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পিতভাবে তারা গাজীপুর চৌরাস্তার একটি দোকান থেকে ছুরি ক্রয় করে। তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিও চিত্র ধারণের জন্য নেত্রকোনায় যেতে গত ১৩ মার্চ তিন হাজার টাকা ভাড়ায় সাইফুলকে ভাড়া করা হয়। বিকেল ৩টায় মাসুক সাইফুলকে নিয়ে মিরপুর ১৪ থেকে নেত্রকোনার উদ্দেশে রওনা করে। গাজীপুর থেকে উঠে ফয়সালও।
ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছালে ট্রাফিক পুলিশ তাদের মোটরসাইকেল আটকায়। ফয়সাল নিজেকে দৈনিক শেষ খবর পত্রিকার ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চলে যায়। নেত্রকোনা শহরে চলে আসে এবং সংবাদের তথ্য সংগ্রহের অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে। পরবর্তীতে রাত ৩টার দিকে পাথর দিয়ে প্রথমে সাইফুলের মাথায় সজোরে আঘাত করা হয়। অচেতন হয়ে গেলে ছুরি দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় সাইফুলের। কমান্ডার মঈন আরো বলেন, পরবর্তীতে পরিচয় গোপন করতে গ্রেফতাকৃতরা ভুক্তভোগী সাইফুলের পরনের শার্ট-প্যান্ট খুলে তার মুখমণ্ডল পেঁচিয়ে মোটরসাইকেলের পেট্রল দিয়ে মুখমণ্ডলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও সাইফুলের মোবাইলফোন পানিতে ফেলে তারা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। মোটরসাইকেলটি মাসুকের ভাগ্নের কাছে রেখে দু’জনেই আত্মগোপনে চলে যায়।
গ্রেফতার মাসুক সম্পর্কে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, রাজধানীর মিরপুর-১৪ এলাকায় বসবাস করতো মাসুক। দিনে রাজমিস্ত্রির কাজ আর সন্ধ্যায় ভ্যানে করে কাপড় বিক্রির আড়ালে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো সে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপন করে। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার ফয়সাল রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল ছিনতাই করতো। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে সে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপন করে। পরবর্তীতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় আত্মগোপনে থাকাবস্থায় র‌্যাব গ্রেফতার করে।


আরো সংবাদ



premium cement