০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পুরান ঢাকায় দিনে কোটি টাকা চাঁদাবাজি

-

রাজধানীর পুরান ঢাকার ১৫টি স্পটে রাস্তা কিংবা ফুটপাথে দোকান বসিয়ে দিনে কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে একটি সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, সরকারদলীয় পরিচয়দানকারী কিছু অসাধু নেতা ছাড়াও তিন ফাঁড়ির ইনচার্জ, কোতোয়ালি থানার ওসি, পিআই ও ডিসি অফিসে দৈনিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে তাদের নিয়োজিত সোর্সরা চাঁদা তুলছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকার বংশাল, নয়াবাজার, বাবুবাজার, মিটফোর্ড, আরমানিটোলা, নয়াবাজার পুরনো লোহার মার্কেট, ইসলামপুর রোড, কদমতলী রোড, ওয়াইজঘাট ছাড়াও সদরঘাট এলাকার রাস্তা ও ফুটপাথে পোশাক ও ফলের দোকান বসিয়ে হকারপ্রতি দৈনিক নিয়মিত চাঁদা তোলা হয়। তা ছাড়া বিভিন্ন পরিবহন থেকেও পুলিশের নামে চাঁদা তোলা হয়। স্পট অনুযায়ী দৈনিক ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকা করে দেড় কোটি টাকার বেশি টাকা চাঁদা তোলে রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী কিছু পাতি নেতারা। এ দিকে ওই সব হকার থেকে পুলিশ ও তাদের সোর্সরাও পিছিয়ে নেই। তারাও দৈনিক চাঁদা তুলছে।
সদরঘাট টার্মিনাল এরিয়া : সদরঘাট টার্মিনালের পূর্ব দিকে সাইকেল মাঠের শ্যামবাজারের কর্নার থেকে পশ্চিম পাশের ওয়াইজঘাট পর্যন্ত দুই পাশ মিলিয়ে ফলমূল শাকসবজি, পোশাক জুতা, লুঙ্গিসহ চার শতাধিক দোকান বসানো হয়েছে। প্রতি দোকান থেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে দৈনিক দেড় থেকে দুই লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে। টার্মিনালের সামনের রাস্তা দখল করে ফলের দোকান বসানো নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নৌবন্দর যুগ্ম পরিচালক বার বার উদ্যোগ নিলেও ঢাকা নদীবন্দরের মধ্যে না পরায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জায়গা হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না বলে একাধিক কর্মকর্তা ও আইডব্লিউটিএর একাধিক আনসার সদস্য জানান। অন্য দিকে সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বাটা সিগনাল পর্যন্ত রাস্তার ওপর শতাধিক অবৈধ দোকান বসানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাভার্ড ভ্যান রাখছে। এখান থেকে সব মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলছে পুলিশ ও ওই সব পাতি নেতা।
স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুর রহমান মিয়াজী নয়া দিগন্তকে বলেন, তিন দিন আগেও সদরঘাটের সামনে রাস্তা দিয়ে হকার মুক্ত করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে আবার তারা বসে। এটা জাতীয় সমস্যা। রাজধানীর সব এলাকায় হকার আছে। তিনি নিজে কিংবা তার কোনো সন্তান ফুটপাথে চাঁদাবাজিতে জড়িত নয় বলে জানান তিনি।
ওয়াইজঘাট : শ্মশানঘাট ও মসজিদ গেটের নুতন ভবনের সামনে ফুটপাথে শতাধিক দোকান রয়েছে। প্রতি দোকান থেকে ১০০ টাকা নেয় পুলিশ। এ ছাড়া পুরান কাপড়, মোবাইল ও জুতার দোকান থেকে ৩০০ টাকা পুলিশের নামে তোলেন মোতাহার ও নুরু। ফুটপাথ ছাড়াও রাস্তার অর্ধেক দখল করে বিভিন্ন ধরনের প্রসাধনী বিক্রি করছে হকাররা। আর যানজটের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কিংবা বাটা সিগনালের পর লঞ্চযাত্রীদের হেঁটে হেঁটে সদরঘাট টার্মিনালে আসতে হয়। মাথা ও হাতে বোঝা থাকায় আরো বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় তাদের।
সেলিম নামে ঝালকাঠির এক লঞ্চযাত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, যাদের কারণে সাধারণ লঞ্চযাত্রীদের এমন ভোগান্তি তাদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো সহযোগিতা করতে। এতে যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
বাদামতলী ও ইসলামপুর : এ এলাকার বিভিন্ন রোডে প্রায় হাজার খানেক ফুটপাথ দোকানি রয়েছেন। দোকানপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দিতে হয় চাঁদা। না দিলে পুলিশ দিয়ে ঝামেলা করান চাঁদাবাজরা। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলেন ইউনুচ, পেট পোড়া সাইফুল ও সালাম।
বংশাল : ফ্রান্স রোডে নিত্যপণ্যের বাজার বসানো হয়। মাছ, গোশত, শাকসবজিসহ প্রায় তিন শতাধিক ঝুড়ি বসে রাস্তায়। ৯টা পর্যন্ত বিক্রি করে হকাররা। এসব হকারের কাছ থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা তোলেন হাসান নামে এক ব্যক্তি।
নয়াবাজার ও বাবুবাজার : নয়াবাজার পুরনো লোহার মার্কেট ও বাবুবাজার আকমল খান সড়ক থেকে পুলিশের নামে প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা চাঁদা তোলা হয়।
সূত্র জানায়, পুরান ঢাকায় পুলিশের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলছে। তাদের নিয়োগ দেয়া সোর্স কিংবা কোনো সদস্য প্রকাশ্যে বিভিন্ন ফুটপাথ ছাড়াও নানা দোকানপাট থেকে চাঁদা তুলছে। তবে এসব স্পট চুক্তিতে নিয়েছেন এক ভুয়া সাংবাদিক। তিনি থানাসহ প্রশাসনকে সাপ্তাহিক পেমেন্ট করেন বলে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement