বাংলাদেশে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্ত করার আগে দেশটির রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষ অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ করেছে কিছু সংগঠন।
তামাক বিরোধী ১৮টি সংগঠন সোমবার এক মানববন্ধন করে অভিযোগ তুলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ, তাতে সরকারগুলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের সময় তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাবমুক্ত থাকতে বলা হয়েছে।
এ বছর সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি ২০১৯ চূড়ান্ত করার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর কাছ থেকে মতামত চেয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মানববন্ধনের আয়োজক সংস্থা প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলছেন, এ ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে ২৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত এক চিঠি পাঠানো হয়েছিলভ
"এতে দেখা যাচ্ছে, নীতিমালা প্রণয়নের আগে তামাক ও তামাকজাত পণ্য উৎপাদক ও বিপণনকারীদের 'মতামত গ্রহণ ও আলোচনা করা প্রয়োজন' বলে মত প্রকাশ করা হয়েছে" - বলেন তিনি।
কিসের ভিত্তিতে এই অভিযোগ?
তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করে অভিযোগ করছে যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাক কোম্পানির পক্ষ অবলম্বন করছে।
জুবায়ের বলছেন, "তামাক কোম্পানিগুলো তাদের সাথে বৈঠক করেছে পাঁচ নভেম্বর। সেই বৈঠকে এনবিআর পরিষ্কার করে প্রেসের সামনে বলেছে, তামাক কোম্পানিগুলোর ব্যবসার বিষয় আছে। আমরা (এনবিআর) অনুরোধ করবো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এই আইন তৈরিতে তাদের মতামত নেয়ার জন্য।"
তিনি প্রশ্ন তুলছেন, একটি সরকারি সংস্থা কেন তাদের জন্য এমন অনুরোধ করবে।
জুবায়ের যুক্তি দিচ্ছেন, "বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরকারী হিসেবে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ যে তামাক নিয়ন্ত্রণের যে কোনো নিয়মকানুন তৈরির ক্ষেত্রে তারা তামাক কোম্পানিকে স্টেকহোল্ডার হিসেবে ডাকতে পারে না।
"এনবিআর এটা করতে পারে না। যদি তারা স্টেকহোল্ডার হতো তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকেই এই খসড়া তাদের কাছে মতামতের জন্য পাঠানো হতো" - বলেন তিনি।
এই কনভেনশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সরকারকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত থাকতে সুপারিশ করা হয়েছে।
কী বলছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড?
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি এবং ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ২০১৮ সালে এক জরীপ চালায়। সেই জরীপে ২০০৪ সালের তথ্যের তুলনা করা হয়। যাতে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে মৃত্যুর হার দ্বিগুণ হয়েছে।
তামাক ব্যবহারজনিত নানা অসুখে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৫ হাজারের মতো মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশে ১৫ বছর বয়সের উপরে প্রাপ্তবয়স্কদের ৩৫ শতাংশের বেশি লোক তামাক ও তামাক জাতীয় পণ্য সেবন করে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলছেন, পক্ষপাতিত্বের প্রশ্নই ওঠেনা বরং তারা নিয়মিত তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে এর বিক্রি কমাতে সাহায্য করছেন।
মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলছেন তামাক কোম্পানির সাথে বৈঠকের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তিনি বলছেন, "আমরা যে তাদের সাথে বসেছি, সেটা নীতিমালা নিয়ে নয়, এই ধরনের অপব্যাখ্যা কেন করে তারা?"
তবে তিনি বলছেন, "তামাক কোম্পানি থেকে আমরা রাজস্ব পাই এবং সেটা বৈধ রাজস্ব। সেই রাজস্বের হার আমাদের দেশের যত রাজস্ব আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ৮১ শতাংশ সরকার নিয়ে নেয়। তারা যে কারণে হয়ত বলেছে আমরা তাদের পক্ষ অবলম্বন করেছে - শত হলেও তারা একটা স্টেকহোল্ডার। তাদের সাথে একদম কোন কথা না বলে আমরা একটা তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি করছি। তো এটা তো আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা যাবে না।"
রাজস্ব বনাম আর্থিক ক্ষতি
এনবিআরের তথ্যমতে গত বছর তামাক ও তামাক জাতীয় পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
তামাক বিরোধী ক্যাম্পেইনার সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশাল অ্যাকশনের তামাক বিরোধী কর্মসূচীর প্রধান নাসিম বানু বলছেন, তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে এর ব্যবহারজনিত কারণে মৃত্যু ও অসুস্থতায় অনেক বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।
তিনি বলছেন, "রাজস্বের বিষয়টা তামাক কোম্পানির নিজস্ব একটা ব্যাখ্যা। আমরা যদি এর বিপরীতে দেখি তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বছরে ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়- যা তামাকখাত থেকে অর্জিত রাজস্ব আয়ের চেয়ে অনেক বেশি।"
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার নিজেই একটি বহুজাতিক তামাকজাত পণ্য কোম্পানির আংশিক শেয়ারের মালিক।
সেটি সরকারের অঙ্গীকারের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের অভিযোগ নিতিমালা প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে তামাক ও তামাক জাতিয় কোম্পানিগুলো। সে বিষয়ে জানতে বিবিসির পক্ষ থেকে কয়েকটি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা