০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অতি লাভের আশায় অপরিপক্ব পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি

-

অতি লাভের আশায় অসময়ে একযোগে অপরিপক্ পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রি জন্য আনায় রাজবাড়ীর হাটবাজারে পেঁয়াজের স্তূপ হয়েছে। এতে এক সপ্তাহের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে কৃষকরা লোকসানে পড়েছেন। পরিণত ও পুষ্ট হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ তোলার এই চিত্র রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে দেখে গেছে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এতে কৃষকের সাময়িক লাভ হলেও তা উৎপাদনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিবে, যা দেশের জন্য সমস্যা এবং ভোক্তারা আগামীতে পেঁয়াজ সঙ্কটে পড়বে। রাজবাড়ীর বিভিন্ন হাটবাজারে চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫০০-৪০০০ হাজার টাকা। আর এখন ১৯ মার্চ বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০- ২০০০ হাজার টাকায়। এতে অতি লাভের আশায় পেঁয়াজ তুলে এখন কৃষকদের বুমেরাং হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজ উৎপাদনে সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজবাড়ী। দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৩ শতাংশ রাজবাড়ীতে আবাদ হয়। রাজবাড়ীতে দুই ধরনের পেঁয়াজের আবাদ হয়। এর মধ্যে একটি মুড়িকাটা পেঁয়াজ, অন্যটি হালি পেঁয়াজ। এ বছর জেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আর পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের মুড়িকাটা পেঁয়াজ উত্তোলন শেষ হয়েছে। এখন জমিতে শুধু হালি পেঁয়াজ রয়েছে। হালি পেঁয়াজের চারা ডিসেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত রোপণ হয়। তিন মাস পরে পেঁয়াজ উত্তোলন করা যায়। সেই হিসাবে আগাম জাতের হালি পেঁয়াজ মার্চ মাসের শেষের দিকে বাজারে আসে প্রতি বছর। এ বছর জেলায় পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। জেলার পাঁচটি উপজেলাতেই পেঁয়াজের আবাদ হয়।
রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ গাছের রঙ এখনো সবুজ। গাছ মারা যাওয়ার পর পেঁয়াজ পরিপ ও রং লাল হয়। আগাম জাতের পেঁয়াজ পরিপক্ক হতে এখনো ২০ দিন বাকি। কিন্তু এসব এলাকার মাঠে নারী-পুরষ মিলে পেঁয়াজ তুলছিলেন। মাঠ থেকেই পেঁয়াজ কেটে বস্তা ভরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন তারা বিক্রি করতে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের উৎপাদন এবার আশানুরূপ হয়নি। যেখানে প্রতি শতাংশে দেড় থেকে দুই মণ পেঁয়াজ হওয়ার কথা, সেখানে ৩০ কেজি থেকে এক মণ ফলন হচ্ছে। এক বিঘায় যদি ৩০ মণ পেঁয়াজ হয়, মার্চ মাসের প্রথম দিকে তা এক লাখ টাকায় বিক্রি করা গেছে। কিন্তু এখন তা অর্ধেকে নেমেছে।
আর যদি পেঁয়াজ আমদানি করে, তখন দাম কমে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়ে যেতে পারে। ফলন ভালো হলেও লোকসান গুনতে হবে কৃষকদের।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বসন্তপুর এলাকার কৃষক হাসান আলী জানান, কয়েক দিন আগে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৪ হাজার ২০০ টাকা মণ। এখন দাম কমলেও ৩ হাজার ৬০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য পেঁয়াজ অপরিপকু হলেও তিনি তার পেঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। কারণ গত বছর পেঁয়াজের মৌসুমে দাম ছিল মাত্র ১ হাজার টাকা মণ।
কৃষক হাসেম খান বলেন, সরকার যদি পেঁয়াজ আমদানি করে, তখন দাম কমে যাবে। এ জন্য পাকার আগেই তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যদিও ১৫ দিন পরে এই পেঁয়াজ তুললে শতাংশে কমপক্ষে ২০ কেজি বেশি পাওয়া যেত বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনেক কৃষক সময়ের আগেই পেঁয়াজ তুলছেন বলে তারা জেনেছেন। এতে কৃষকের সাময়িক লাভ হলেও দেশের জন্য সমস্যা।


আরো সংবাদ



premium cement