২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মি. বেকারের ব্যাংক হিসাব তলব

-

ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে ‘মি. বেকার’-এর টঙ্গী ও গাজীপুরের হেড অফিসে (কারখানা) ভ্যাট গোয়েন্দারা অভিযান চালিয়েছে। এতে গোয়েন্দাদল ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পায়। অধিকতর তদন্তের জন্য ‘মি. বেকার’-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের হিসাব তলব করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দারা জানান, রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির পেস্ট্রি শপের ২৯টি এবং সুইটমিটের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এই হেড অফিসের ঠিকানায় তাদের কারখানাও অবস্থিত। ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে টঙ্গীর ঢাকা ব্যাংক, কামারপাড়া শাখা ও সাউথইস্ট ব্যাংকে এ-সংক্রান্ত নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দার দুটো দল ২০ অক্টোবর মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপ লি:, ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগ, ঢাকা এবং মি. বেকার সুইটস, ২/১ কুনিয়া পাচর, তারগাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর সদর, গাজীপুর-১৭০৪ নামীয় প্রতিষ্ঠান দুটোর হেড অফিস কাম কারখানায় অভিযান চালায়। পেস্ট্রি শপের ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর : ০০০৯৬৪৬৮২-০১০২। অন্যটির ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর : ০০১১৪৬১৭৭-০১০৩। প্রতিষ্ঠান দুটো ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত।
অভিযান দুটোতে নেতৃত্ব দেন উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার, ফেরদৌসি মাহবুব ও তানভীর আহমেদ। অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’-এর বিক্রয়কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ওই স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো: রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না। ওই কেন্দ্রটিতে ভ্যাট কর্তন করে একটা কাঁচা চালান দিয়ে ক্রেতাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়। এই অভিযোগ এবং আরো গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান অভিযোগ তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠান দুটোতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি। ভ্যাট আইন অনুযায়ী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পরিদর্শনকালে ভ্যাট-সংক্রান্ত অন্যান্য দলিল দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেনি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোনো সদুত্তরও দিতে পারেনি। ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানের আশঙ্কায় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখে না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, নিজস্ব মনগড়া হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে। একই সাথে, তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি। অভিযানের একপর্যায়ে গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরনো কিছু অসংগঠিত তথ্য পায়। গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে।
গোয়েন্দা দলের জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এমনকি অভিযানের আগের দিন যেসব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখতে চাইলেও তারা দেখাতে পারেনি। অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটো কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫-এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। পাশাপাশি ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদফতরের আরেকটি দল উত্তরার ৩ নম“ সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত মি. বেকার কেক অ্যান্ড পেস্ট্রি শপের ওই বিক্রয়কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে। কর্মকর্তারা প্রথমে পরিচয় গোপন করে পণ্য ক্রয় করে দেখতে পান যে, এই বিক্রয়কেন্দ্রটি মূসক চালান (মূসক-৬.৩) ব্যতীত পণ্য বিক্রি করছে। এখানে তারা অভিযোগকারী অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবের অভিযোগের সত্যতা পান। একই সাথে, গোয়েন্দা দল ২১ অক্টোবর বেইলি রোডে অবস্থিত ‘মি. বেকার’-এর দুটো বিক্রয়কেন্দ্র থেকে পণ্য ক্রয় করেও দেখতে পান যে, তারা মূসক চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ করছে। এতে প্রমাণিত হয় ভ্যাট আইন অনুসারে রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ না করে এবং ভ্যাট আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি ৩৪টি বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে।
প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও বিক্রয়কেন্দ্রে ভ্যাট চালান ব্যতীত পণ্য সরবরাহ ও বিক্রয় করায় ‘মি. বেকার’কে ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। একই সাথে, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে। অভিযানে জব্দকৃত দলিলাদি ও ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত দলিলাদির ভিত্তিতে ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ নির্ণয় ও আইনগত অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একই সাথে, ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযুক্ত ‘মি. বেকার’-এর যাবতীয় উৎপাদন, সরবরাহ ও বিক্রয় সরাসরি তত্ত্বাবধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট ঢাকা উত্তর কমিশনারেটের কাছে সুপারিশ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী

সকল