২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডিজিটাল মাধ্যমে এনালগ পাঠদান

করোনাকালে শিক্ষা ঝুঁকি-৪
-

টেবিলে দামি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ। কিন্তু ‘পাওয়ার অন’ আর ‘শাট ডাউন’ ছাড়া আর কোনো ফাংশনই জানেন না রাজধানীর একটি স্বনামধন্য স্কুলের শিক্ষক রবিউল ইসলাম (ছদ্মনাম)। বাসায় স্কুলপড়–য়া মেয়ের সহযোগিতায় মোবাইলে জুমের মাধ্যমে করোনার এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তার ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু ক্লাস বাসায় বসেই করতে হয়েছে তাকে। মোবাইলের ভিডিওতে সামনের টেবিলে ল্যাপটপ চালু করা থাকলেও জুমের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছেন তিনি মূল বই থেকে। স্ক্রিন শেয়ার করার প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকায় ল্যাপটপে তার বিষয়ভিত্তিক ভালো নোট থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের লুকোচুরিই করেছেন তিনি। এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে খোদ রাজধানীর অনেক স্কুলেরই। আর গ্রামের স্কুলের কথাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না। অর্থাৎ ডিজিটাল যুগেও শিক্ষকদের এমন এনালগ পদ্ধতিতে পাঠদান চলছে হরহামেশাই।
শুধু রবিউল ইসলামই নন, করোনার এই সঙ্কটের সময়ে স্কুল থেকে শুরু করে বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত অনেক শিক্ষকই তাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে যুগের সাথে তালমেলাতে পারেননি। ফলে ডিজিটাল পদ্ধতির অনেক উপায়-উপকরণ থাকার পরও শিক্ষকদের অজ্ঞতা বা প্রযুক্তি জ্ঞানের এমন ঘাটতি করোনাকালে আরো বেশি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার প্রথম দিকে মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সংসদ টিভিতে পর্যায়ক্রমে একাধিক ক্লাস চালু করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। তখন দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাবে ক্লাস রেকর্ডিং করতে বেশ বেগ পেতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। শুরুর দিকে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ টেকনিশিয়ানের অভাবে ক্লাসের রেকর্ডিংও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ফলে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে লোকজনকে প্রশিক্ষিত করতে হয়েছে। অনেক শিক্ষককেও দেয়া হয়েছে প্রযুক্তিগত উচ্চতর প্রশিক্ষণ।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্যও টিভিতে ক্লাসের ক্লিপ তৈরিতে হোঁচট খেতে হয়েছে কয়েক দফায়। পরে শিক্ষকদের মাধ্যমে শুধু ভিডিও সংগ্রহ করে সেগুলো এডিট করে সম্প্রচার করা হয়েছে। এর পরেও ভিডিও ক্লাসের ছবি এবং সাউন্ড নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ছিল। এ বিষয়ে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা অকপটে স্বীকার করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)।
বিশেষজ্ঞদের মতে ডিজিটাল মাধ্যমের এই পাঠদান প্রক্রিয়াগত ত্রুটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বরং করোনার কারণে বিশ^ব্যাপীই শিক্ষা সেক্টরে নতুন অনেক কিছুর সাথেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও শিক্ষা সেক্টরের প্রতিটি খাতেই এখন ডিজিটাল পদ্ধতির শিক্ষা কার্যক্রমের ওপর জোর দিতে বাধ্য হয়েছে। আগামী দিনে করোনার পরিস্থিতি উন্নতি হলেও প্রযুক্তিগত শিক্ষার এই ধারাবাহিকতাশিগগিরই আর থামছে না।
কানাডার অনটরিওর বিশ^বিখ্যাত গবেষণাকেন্দ্রিক ওয়াটারলু বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরিচালিত করোনার এই সময়ে একটি জরিপের ফলাফলে দেখিয়েছে, প্রযুক্তিতে পারদর্শী হওয়ার পরেও একজন শিক্ষককে ‘অনলাইন লার্নিং কনসালট্যান্ট’ হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস সময়ের প্রয়োজন হয়। এর সাথে একজন শিক্ষকের তার সহযোগী হিসেবে আরো তিনজন স্টাফ প্রয়োজন হবে। করোনায় আকস্মিকভাবে কাবু হওয়া বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা অন্যান্য সংশ্লিষ্টরা কতটুকুই বা প্রস্তুতির সময়ে পেয়েছেন এ ক্ষেত্রে সেটিও বিবেচনার দাবি রাখে।
দেশের শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা ও ২০১০ সালের শিক্ষা কমিশনের সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত অজ্ঞতার বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, করোনা অনেক কিছুই আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে, করতে শিখিয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তিতে আমাদের যে ল্যাপস (ঘাটতি) ছিল এটা এখন আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে সরকারও বেশ বেকায়দায় আছে। সরকারও এখন চিন্তা করছে কিভাবে আগামী দিনে আমাদের এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা যায়। তিনি আরো জানান, সরকারের আইসিটি বিভাগও উদ্যোগ নিচ্ছে সবার মাঝেই যাতে তথ্যপ্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিস্তার ঘটানো যায়। তখন হয়তো করোনাই আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য সুফল বয়ে আনবে। আর শিক্ষকসমাজও তাদের চাহিদার আলোকে নিজেদের প্রস্তুত করে নিতে পারবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
ইউক্রেনকে দ্রত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

সকল