১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


দৃষ্টিনন্দনে বদলে যাচ্ছে রমনা পার্ক

-

বদলে যাচ্ছে রমনা পার্ক। নতুন সাজে রূপ নিচ্ছে পার্কটি। চলছে উন্নয়ন কাজ। এরই মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে আধুনিক ওয়ার্কওয়ের পাশাপাশি অবসর যাপনের মুক্ত সুবিধাসহ রমনা পার্ক নতুন সাজে সাজবে। বর্ষা মৌসুম শেষে শুরু হবে লেক খনন কাজ।
নতুন নকশা অনুযায়ী লেক পুনঃখনন করে বাড়ানো হবে দৈর্ঘ্য, থাকবে আধুনিক বেঞ্চ ও লেকের ওপর ব্রিজ। সারাবছর পানি রাখার ব্যবস্থার পাশাপাশি করা হবে পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা এবং ল্যান্ড স্কেপিং বনায়ন, লেক পাড়ে নির্মাণ করা হবে উডেন ডেক, পানির ফোয়ারা, থাকবে লেক আইল্যান্ড। এ ছাড়া থাকছে অত্যাধুনিক তিনটি গণশৌচাগার, ১১টি উন্মুক্ত কফি কর্নার, শিশু কর্নারে খেলার আধুনিক সরঞ্জাম ও রাইড। পুরানো ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার ফুটপাথ সিরামিক ইটের রাস্তা।
গণপূর্ত অধিদফতরের প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রয়োজনে ব্যয় বাড়ানো হবে।
রমনা পার্ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দ্দী বলেন, বর্ষা মৌসুমের বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ শুরু করা হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে রমনা পার্কের দৃশ্যে মুগ্ধ হবেন দর্শনার্থীরা। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই পার্কের উন্নয়ন প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে ‘রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ’। দুই বছর মেয়াদে এ উন্নয়ন কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।
নতুন করে উন্নয়নের মাধ্যমে বাড়ছে পার্কের লেকের দৈর্ঘ ও দর্শনার্থীদের বসার আধুনিক বেঞ্চ। এ ছাড়া পুরনো ৩.৬ কিলোমিটার ফুপাথের পরিবর্তে তৈরি করা হবে সিরামিক ইটের রাস্তা। লেকপারে নির্মাণ করা হবে কাঠের ডক। এই ডকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করা যাবে পার্কের শোভা। লেকের শোভা বাড়াতে ১৫ ফুট প্রস্থের দুটি সেতু তৈরি করা হবে। সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করা যাবে পার্কের এপার থেকে ওপারে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টির লক্ষ্যে লেকের মাঝখানে মাটি ভরাট করে ছোট ছোট দ্বীপের মতো বানিয়ে বনায়ন করা হবে। এ ছাড়া থাকছে সারাবছর পানি রাখার ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা ও ল্যান্ড স্কেপিং, পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা। বসানো হচ্ছে শিশুদের খেলাধুলার আধুনিক সরঞ্জামাদি ও রাইড।
রমনা পার্কের উন্নয়নে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভা থেকে গণপূর্ত অধিদফতরকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী রমনা পার্কের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়।
মেগাসিটি ঢাকার ‘ফুসফুস’ হিসেবে স্থান করে নেয়া রমনা পার্ক ঘন ঘাস, লতাগুল্ম, ছোট ও মাঝারি গাছ, মৌসুমি ফুলে সমৃদ্ধ। এখানে অতি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ যেমন রয়েছে, তেমন রয়েছে অচেনা পাখির কলকাকলিতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ। অভিযোগ রয়েছে, রমনা বটমূল ছাড়া পার্কজুড়ে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে ক্ষতি হচ্ছে এর জীববৈচিত্র্য। অব্যাহতভাবে নানা কনস্ট্রাকশন বিনষ্ট করছে সবুজ অঙ্গনকে।
রমনা পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮ দশমিক ৫ একর। এর লেকের আয়তন ৮ দশমিক ৭৬ একর। ১৬১০ সালে ঢাকায় মোগলদের শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর বাগানের অনুরাগী মোগলরা এ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তখন এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি। কোম্পানি আমলে রমনার দক্ষিণের একটি অংশে রেসকোর্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। একপর্যায়ে ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে রমনা এলাকা ক্রমে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়ে। মোগল আমলে গড়ে ওঠা রমনা উদ্যান মোগল সা¤্রাজ্যের পতনের সঙ্গে তার সৌন্দর্য হারায়।
ঔপনিবেশিক যুগে (১৮২৫ সালে) ঢাকার ইংরেজ কালেক্টর মি. ডস ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন এবং কারাগারের বন্দীদের দিয়ে রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করে বের করেন ডিম্বাকৃতির একটি অংশ। পরিষ্কার করা অংশটিকে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয় রেসকোর্স। ইংরেজদের আমলে এই রেসকোর্সের উত্তর-পশ্চিমে একটি টিলাঘর তৈরি করে চারপাশে লাগানো হয় গাছ-গাছালি। এই রেসকোর্সকে কেন্দ্র করেই আবার রমনার আভিজাত্য ফিরে আসে।
১৮৪০ সালের দিকে বিত্তবানেরা এ এলাকায় বাগানবাড়ি করতে থাকেন। পরে নবাব আবদুল গনি এসব বাগানবাড়ির মধ্য থেকে অবসরপ্রাপ্ত জজ জন ফ্রান্সিস গ্রিফিথের বাড়িটি কিনে নেন। এলাকাটিকে তারাই উন্নত করে নাম দেন শাহবাগ। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর মোগলদের রমনা তিন ভাগ হয়ে যায়। নবাবদের মালিকানায় থাকে শাহবাগ এলাকা। উত্তর দিকে মিন্টো রোডে হয় সিভিল স্টেশন নামে সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা। মাঝখানে রেসকোর্স ও বর্তমানের রমনা উদ্যান মিলিয়ে হয় রমনা এলাকা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল