মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে সরকারের জারি করা তিনটি গেজেট ও পরিপত্র অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস এবং ১৩ বছর নির্ধারণ নিয়ে করা পৃথক ১৫টি রিটের শুনানি শেষে এ রায় ঘোষণা করেন।
একই সাথে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন, ২০১৮-এর সংজ্ঞা সংক্রান্ত ২ ধারার ১১ উপধারা অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী পরিশোধ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণাকালে আদালত বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না। মুক্তিযুদ্ধ মূলত মানুষ আবেগের তাড়না থেকে করে। দেশের প্রতি ভালোবাসার কারণে করে। বয়স দিয়ে কখনো ভালোবাসা বাঁধা যায় না। আদালত আরো বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সাত-আট বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ছিল। বাংলাদেশে তো শিশু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বইও আছে। এটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত ৪৫ বছর ধরে তারা (রিটকারীরা) সব সুবিধা পেয়ে আসছেন। হঠাৎ করে তারা জানলেন তারা আর মুক্তিযোদ্ধা নেই। তাই যে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ভিত্তি করে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই মুক্তিযোদ্ধাদের যদি অস্বীকার করি, তাহলে আমরা আর সামনে এগোতে পারব না।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ওমর সাদাত, এ বি এম আলতাফ হোসেন, মো: জাহাঙ্গীর জমাদ্দার, নারগিস তানজিমা, সেলিনা আক্তার চৌধুরী, শরীফ আহমেদ, ইউনুছ আলী আকন্দ, শুভ্রজিত ব্যানার্জি ও এ আর এম কারুজ্জামান কাকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
এ বিষয়ে ওমর সাদাত সাংবাদিকদের বলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে চিহ্নিত এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে আসছিলেন, কোনো রকম কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া তাদের ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। তাদের অমুক্তিযোদ্ধা বলা হয়। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ বছর ৬ মাস হয়নি তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হবে না।
ওমর সাদাত আরো বলেন, আমরা সমস্ত আইনকানুন কোর্টের সামনে পেশ করি, কোর্ট সব দেখে রায় দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের যিনি বীর প্রতীক ছিলেন শহীদুল ইসলাম লালু, মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১০ বছর। বঙ্গবন্ধু তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন এবং বীর প্রতীক খেতাব দিয়েছিলেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে বীর প্রতীক তো ননই, তিনি আজ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।
তিনি আরো বলেন, আদালত অত্যন্ত উষ্মা প্রকাশ করেছেন এবং এক পর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে কেঁদে ফেলেন। আদালত বলেন যে, যেটার ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশ গঠন হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে দেশ হিসেবে আমরা সামনে এগোতে পারব না। আদালত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স সংক্রান্ত সব গেজেট বাতিল করেছেন এবং বকেয়াসহ তাদের সব পাওনা ফেরত দিতে বলেছেন।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা ও বয়স নির্ধারণ করে গেজেট জারি করা হয়। ওই গেজেটে বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবে।
এরপর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সেই গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।
ওই দু’টি গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে হাইকোর্টে পৃথক পৃথক রিট দায়ের করেন। ওইসব রিটের শুনানি নিয়ে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে ন্যূনতম ১৩ বছর হতে হবেÑ সরকারের জারি করা এমন গেজেট কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা