বিএনপির স্কাইপ ও ইন্টারনেট সংযোগ ব্লক করল কে?

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ করেছে যে ঢাকার গুলশান এলাকায় তাদের প্রধান কার্যালয়ের ইন্টারনেটভিত্তিক ফোন সার্ভিস স্কাইপের সংযোগ ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
এই অফিসেই গত দুই দিন ধরে স্কাইপ সংযোগের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য দলের মনোনয়নপ্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
স্থানীয় কিছু ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বলছে, তারা স্কাইপ বন্ধ করে দেয়ার নোটিশ পেয়েছে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বিটিআরসির কাছ থেকে।
এরকম একটি চিঠির কপি বিবিসি বাংলার হাতে এসেছে, কিন্তু বিটিআরসি এরকম নির্দেশ দেয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
বিএনপি বলছে, তাদের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যই তাদের কার্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
তারেক রহমানের ভিডিও কনফারেন্স : আইনে কী আছে?
বিএনপির কারাভোগরত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছেলে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপের মাধ্যমে লন্ডন থেকে নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেনÑ এরকম খবর ও ছবি পত্রপত্রিকায় বেরুনোর পর বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
তবে নির্বাচন কমিশন জানায়, এ ব্যাপারে তাদের করার কিছু নেই।
ঢাকায় কয়েকটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে বিবিসি জানতে পেরেছে, সোমবার বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে তারা বিটিআরসির কাছ থেকে ইমেইলের মাধ্যমে নোটিশটি পান।
এতে লেখা রয়েছে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কাইপ অ্যাপ ব্লক করতে হবে অনতিবিলম্বে এবং ব্লক করার বিষয়টি মেইল করে বিটিআরসিকে নিশ্চিত করতেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি, তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু স্থানে স্কাইপ বন্ধ রয়েছে।

চিঠির শেষে বিটিআরসির সিস্টেম ও সার্ভিস বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুল আলমের নাম রয়েছে। জনাব খান বলছেন, এই নোটিশের বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখবেন।
বিএনপি গত রোববার থেকে ভিডিও কলের অ্যাপ স্কাইপ ব্যবহার করে নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল। তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করে যে, দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি হিসেবে একজন ব্যক্তির নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া বেআইনি।
স্কাইপ বন্ধের পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ আছে কি না জানতে চাইলে বিটিআরসির জাকির হোসেন খান বলেন, কোনো ‘ব্যারিয়ার’ (প্রতিবন্ধকতা) দেয়ার ইচ্ছে তাদের নেই। কমিশন টেলিযোগাযোগ আইন বলে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত করে, কোনো পার্টি বা দলকে হেয় করা বা যোগাযোগে বাধা দেয়ার কোনো ব্যাপার এতে নেই, বলেন তিনি।
তবে বিএনপি অভিযোগ করছে, পুরো পার্টি অফিসেই ইন্টারনেট কানেকশনের ব্যাঘাত ঘটানো হয়েছে।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘শুধু স্কাইপ না, জ্যামার দিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটা মেইলও করা যাচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলছিলেন, তাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি আজ তৃতীয় দিনের মতো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, আর বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে তারেক রহমানের মতামত নেয়ার।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে এভাবে বাধা দেয়া হলে কোনোভাবেই ‘লেভেল প্লেয়িং ফ্লিড’ তৈরি হবে না। দলটি নির্বাচন কমিশনে যাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।