২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এক অফিস সহকারীর দাপট : সহকর্মীদের মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়ার হুমকি

এক অফিস সহকারীর দাপট : সহকর্মীদের মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়ার হুমকি - ছবি : সংগৃহীত

খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান তার সহকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সে হুমকির ভাষা হচ্ছে, ‘তোর আঙ্গুল কাটে ফ্যালাবো....। তোর খুলি উড়াই ফেলাই দেবো। সিবিএ নেতা মারাইছো....। অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে দ্যাখ, তারপর তোর....। এই চিঠি তালুকদার পর্যন্ত জানে। আর তুই ভিডিও করতিছিস ক্যা। সবকটাকে কোপাবো’। গত বৃহস্পতিবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি অফিসের ভেতরে এভাবেই সহকর্মীদের হুমকি দেন।

খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিয়ে কর্মকর্তাদের ওপরও খবরদারি করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও তিনি কারণে-অকারণে বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম ভাঙ্গিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বদলিসহ নানাভাবে হুমকি দেন। তার এই রূঢ় আচরণে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তটস্থ।

গত বৃহস্পতিবার ঘটনার পর তথ্য অফিসের টেলেক্স অপারেটর মিজানুর রহমান ফেকবুকে স্ট্যাটাস দেন ‘অফিসের সন্ত্রাসী এক কলিগ কর্তৃক সিনিয়র সহকর্মী লাঞ্ছিত। মোবাইলে ভিডিও করতে গিয়ে আমিও হামলার শিকার। তার হুমকিতে পরিবারসহ প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। সবাই দোয়া করবেন।’ এছাড়াও তথ্য অফিসের অফিস সহকারী হাবিবুর রহমানের অশ্লীল ভাষার হুমকি প্রদানের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নগরীর পিটিআই মোড়ের খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ শুরুর সময় অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান তার মোবাইল ফোনে নেটওয়ার্ক সংযোগ না পাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে মোবাইল করে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে চাপাতি নিয়ে আসতে বলেন এবং অফিসের উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মো: জাভেদ ইকবাল, সহকারী তথ্য অফিসার মো: আতিকুর রহমান, টেলেক্স অপারেটর মো: মিজানুর রহমানসহ সবাইকে কোপাবেন বলে উচ্চস্বরে হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বারবার তিনি বলতে থাকেন, ‘তোরা সবাই রাজাকার, তোরা বাইরে বের হ, সবকটাকে আজ কোপাবো’। এক পর্যায়ে তিনি সহকর্মী মিজানুর রহমানকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। তখন উপস্থিত কর্মচারীরা তার রোষানল থেকে নিরাপদ থাকা এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য হাবিবকে অফিস থেকে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দিতে বাধ্য হন।

এ সময় তিনি বাইরে থেকে প্রধান সহকারীর দায়িত্ব পালনরত মো: জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে বলতে থাকেন, ‘তোর আঙ্গুল কাটে ফ্যালাবো....। তোর খুলি উড়াই ফেলাই দেবো। সিবিএ নেতা মারাইছো....। অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে দ্যাখ, তারপর তোর....। অনেকক্ষণ পর্যন্ত উচ্চস্বরে সবাইকে লক্ষ্য করে তিনি গালিগালাজ করেন। এ সময় খুলনা সিটি মেয়রের নাম ধরেও হুমকি দিতে শোনা যায় তাকে। সিনিয়র ক্যামেরাম্যান আব্দুস সাত্তার তাকে বারবার থামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পুরো ঘটনাটি অফিসের একজন গোপনে ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। একজন অফিস সহায়কের এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ ও তার শাস্তির দাবি জানান অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অফিস সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসে হাবিবুর রহমান যোগ দেন। তারপর থেকে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অহেতুক অসদাচারণ করে আসছেন।
হাবিবুর রহমান মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার শতখালী ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। খুলনা অফিসে যোগদানের আগে ঢাকায় কর্মরত অবস্থায় তার বিরদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালায় অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। পরে আপিলের মাধ্যমে শৃঙ্খলাভঙ্গ ও অসাদারচরণ না করার শর্তে তাকে পুনর্বহাল করা হয়।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো: জাভেদ ইকবাল বলেন, হাবিবুর রহমান খুলনা অফিসে যোগদানের আগে ঢাকা অফিসে থাকাকালে দু’বার বরখাস্ত হন। পরে শর্তসাপেক্ষে তাকে খুলনা অফিসে বদলি করা হয়। কিন্তু তিনি খুলনা অফিসে আসার পর থেকে সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। শান্তিপূর্ণ অফিসে অশান্তি তৈরি করেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার অফিসের ভেতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা ঢাকা সদর দফতরে জানিয়েছি।

এসব বিষয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ছাড়া খুলনা অফিসের সবাই জামায়াত-শিবির। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করে। তারা সবকিছু থেকে আমাকে বঞ্চিত করে বলেও পাল্টা অভিযোগ তোলেন।


আরো সংবাদ



premium cement