২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জীবননগরে আমফান ঝড়ে ২০ কোটি টাকার ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় আম্ফার তাণ্ডবে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলের ছবি। - নয়া দিগন্ত

ঘূর্ণিঝড় আমফার তাণ্ডবে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় উঠতি ফসলসহ ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে, পুকুর জলাশয় পানিতে ভেসে, বাঁধ ভেঙে ও বাগানের আম ঝরে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছে, ঝড়ের তাণ্ডবে উঠতি ফসল ও মৎস্যসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা এর আগে ঝড়ের এমন তাণ্ডব কেউ কখনো দেখেনি।

উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে সরজমিনে দেখা গেছে, শত শত বিঘা বাগানের আম ঝরে পড়ে গাছের নিচে স্তূপ আকারে পড়ে আছে। আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ে আছে। উপজেলার অধিকাংশ গ্রামের বৈদ্যুতিক তার ছিড়ে পড়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুঁতুড়ে অবস্থায় ভ্যাঁপসা গরমের মধ্যে গ্রামের মানুষ দিনযাপন করছেন।

অন্যদিকে এলাকার নিচু জমির উঠতি ফসল পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার গোপালনগর গ্রামের কৃষক আব্দুস বলেন, জীবনে অনেক ঝড় বৃষ্টি দেখেছি, এমন ঝড় এর আগে আর কখনও দেখিনি। ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টার বিরতিহীন ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকার বেশির ভাগই কাঁচা বাড়িঘর, গাছপালা উপড়ে, বাগানের অধিকাংশ আম ঝরে পড়ে, কলা গাছ, পেঁপে গাছ ভেঙে মাটির সাথে ন্যুয়ে পড়ে, নিচু অঞ্চলের ধান, পাট, তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগে ঝড়ে এত বেশি ক্ষয়ক্ষতি আর কখনও দেখা যায়নি।

উপজেলার রায়পুরের যুবক কবির হোসেন বলেন, মাঠের পর মাঠ কলা বাগান ও মুগ ক্ষেত শেষ হয়ে গেছে। এলাকার আম বাগান, কাঁঠাল বাগান, মেহগুনি, পেঁপে বাগান উপড়ে গিয়ে কিংবা ভেঙে মাটির সাথে মিশে গেছে। জীবনে অনেক ঝড়ই দেখলাম, কিন্তু ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টা ধরে ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব আগে কখনও দেখিনি। উপজেলার এমন কোন গ্রাম নেই যেখানে বিদ্যুতের তার ছিড়ে পড়েনি। বিদ্যুতের অভাবে এখন আমাদের মোবাইল ফোন চার্জ পর্যন্ত দিতে পারছি না। ঝড়ের সাথে সমান তালে বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেক নিচু অঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। আম্ফান ঝড় বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে সব ধরণের ফসলের ক্ষতি হয়েছে।

গয়েশপুর গ্রামের বাবলুর রহমান বাবলু বলেন, আমি এবার আমার নিজের এবং চাষিদের নিকট থেকে কেনা বাগান মিলে ৬০ বিঘা জমির আম বাগান ছিল। গত কয়েকদিন আগেও বাগানের প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় আম ঝুলছিল। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারে আম্ফান ঝড়ের তাণ্ডবে গাছের ৮০ ভাগ আম ঝরে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমন ক্ষতি আগে কখনও হয়নি। ৬০ বিঘা বাগানের আম ৪০ লাখ টাকায় বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ঝড়ের তাণ্ডব আমাদেরকে পথে বসিয়েছে।

উপজেলার বৈদ্যনাথপুর গ্রামের আব্দুল হান্নান বলেন, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়ের যে তাণ্ডব দেখেছি, তাতে বেঁচে আছি এটায় বড় কথা। দালান ঘরেও রাতভর আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছি। ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরের ওপর গাছ পড়ে আমাদের গ্রামের শিশু জুবায়ের (১২) ও জীবননগর শহরের বৃদ্ধা মোমেনা খাতুনের (৮৫) করুন মৃত্যু হয়েছে। মাঠের কলা গাছ তো সব শেষ। আম গাছ, নিম গাছ, পেঁয়ারা গাছ, মেহগনি, বাঁশ ঝাড় উপড়ে পড়ার পাশাপাশি বৈদ্যুতিক তাঁর ছিড়ে পড়েছে। করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ এমনিতেই কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। নিন্ম আয়ের মানুষেরা কাজের অভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থার মধ্যে ঝড়ের তাণ্ডবে মাঠের পর মাঠের ফসলের ক্ষতি মানুষ কিভাবে পুষিয়ে উঠবে? এতে এলাকার মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।

উপজেলার মাধবখালী গ্রামের মৎস্যচাষি রাজেদুল ইসলাম বলেন, ঝড়ের তাণ্ডবে এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। ঝড়ের গর্জনে আমরা আতঙ্কিত ছিলাম। ঝড়ের সাথে প্রবল বৃষ্টিতে উঠতি ফসল মুগ পানিতে তলিয়ে গেছে। শত শত বিঘা পুকুর গেছে ভেসে। অনেক জলাশয়ের বাঁধ ভেঙে একাকার হয়ে গেছে। আমার ২০ বিঘা জমির পুকুর পানিতে ভেসে গিয়ে ২০ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। আমি বেশি দামে বিক্রির আশায় এক বছর ধরে মাছ বড় করেছি। ঝড়ের এমন তাণ্ডব আগে কখনও দেখিনি। আম্ফান ঝড়-বৃষ্টিতে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুঁষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে, অনেককে নতুন করে আবার শুরু করতে হবে।

একই গ্রামের গরু খামারি ফারুক হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় ঝড়ের তাণ্ডব চলবে তা কেউ ভাবতে পারেনি। ঝড়ের তাণ্ডবে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। ঝড়ের দাপটে আমার গো-খামারির টিন উড়ে গেছে এবং দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ওইদিন ঝড়ের ভয়ে অনেক মানুষ মসজিদ থেকে বের হতে পারেননি।

উপজেলার মিনাজপুর গ্রামের চাষি মসলেম উদ্দিন বলেন, ঝড়ের তাণ্ডবে আমার দেড় বিঘা জমির কলা ও এক বিঘা জমির পেঁয়ারা বাগান উপড়ে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এলাকার কোন আম বাগান, পেঁয়ারা বাগান, কলা বাগান ঝড়ে পড়ে মাটিতে ন্যুয়ে পড়েছে। কোন বাগানের গাছ খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে নেই।

উপজেলার একটি পৌরসভাসহ আটটি ইউনিয়নের ২৭টি ইট ভাটার ইট পানিতে ভিজে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। খান ব্রিকস ভাটার মালিক আজিম খান বলেন, পানিতে ভিজে উপজেলার ইটভাটাগুলোতে প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে পড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক জায়গায় সদ্য নির্মিত রাস্তা ধসে পড়েছে। বড় বড় গাছ ভেঙে রাস্তায় পড়ে আছে। জমির কাটা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। পুকুর কিংবা জলাশয় পানিতে তলিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন, আমফান ঝড়ে উঠতি ফসল বোরো ধান, শাকসবজি, কলা, মুগ, পেঁপে ও পান ইত্যাদি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকা পার হয়ে যাবে। আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমফান ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। ক্ষতির পরিমান নির্ধারণের কাজ চলছে। তবে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা পুঁষিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল