০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছানি অপারেশনের পরেও যখন ভালো দেখে না

-

ছানি সম্পর্কে আমরা অনেকই কমবেশি পরিচিত। চোখের ভেতর একটি প্রাকৃতিক লেন্স থাকে যাকে বলা হয় হিউমেন লেন্স। হিউমেন লেন্স দেখতে অনেকটা ডিস্ক আকৃতির স্বচ্ছ লেন্স। চক্ষুগোলকের অভ্যন্তর ভাগের সম্মুখ অংশে চোখের আড়াআড়ি এর অবস্থান। হিউমেন লেন্সের কাজ হলো আলোক রশ্মিকে চোখের রেটিনাতে আপতিত হতে সাহায্য করা এবং দেখার বিষয়টি নিশ্চিত করা। কোনো কারণে যদি প্রাকৃতিক এই লেন্সটি তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে অর্থাৎ ঘোলা হয়ে যায় তবে আলোকরশ্মি চোখের ভেতরে প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে দেখার কাজটি বিঘিœত হয়। লেন্সের এই ঘোলা অবস্থাটিকে বলা হয় ক্যাটারেক্ট বা ছানি।
ছানির চিকিৎসা হলো অপারেশন। অপারেশনের মাধ্যমে ঘোলা লেন্সটি অপসারণ করে সেখানে একটি স্বচ্ছ কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করা। অপারেশনের পূর্বে কম্পিউটারের সাহায্যে লেন্সটির পাওয়ার কত হবে তা নির্ধারণ করে নেয়া হয়। এটিকে বলা হয় বায়োমেট্রি। বায়োমেট্রিতে প্রাপ্ত পাওয়ারের একটি কৃত্রিম লেন্স প্রতিস্থাপন করলে আশা করা যায় অপারেশনের পরে সে চোখের দৃষ্টি ফিরে আসবে। এটিই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো সময় এর ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায়।
দৃষ্টিশক্তি অর্থাৎ দেখার বিষয়টি দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, আলোকরশ্মি রেটিনাতে আপতিত হওয়া আবশ্যক। এখানে লেন্স একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। দ্বিতীয়ত, রেটিনাতে বিদ্যমান স্নায়ু বা রিসেপ্টরের সক্ষমতা অটুট থাকতে হবে যাতে করে রেটিনা আপতিত আলোকরশ্মিকে তড়িৎপ্রবাহে রূপান্তর করতে পারে। কারণ এই তড়িৎপ্রবাহ যা মস্তিষ্কে পৌঁছে বস্তুর ইমেজ তৈরি করে দেখার বিষয়টিকে পরিস্ফুটিত করে। ছানি অপারেশনে আলোকরশ্মির আপতিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রেটিনায় অসুস্থতা থাকায় রেটিনা থেকে তড়িৎপ্রবাহ বা সিগনেল মস্তিষ্কে পৌঁছাতে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে অপারেশন যথাযথভাবে সম্পন্ন হলেও দৃষ্টি সমস্যা রয়ে যায়।
রেটিনার অসুস্থতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : শারীরিক অসুস্থতাজনিত রেটিনার সমস্যা- যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি সমস্যা ইত্যাদি থাকে তাদের বেলায় দেহের অন্যান্য অঙ্গের জটিলতার পাশাপাশি চোখের পর্দা বা রেটিনাতেও সমস্যা থাকতে পারে। এটিকে বলা হয় রেটিনোপ্যাথি। রেটিনোপ্যাথির সমস্যা আগে থেকেই বিদ্যমান থাকলে ছানি অপারেশনের পরেও দৃষ্টি সমস্যা কিছুটা থেকে যেতে পারে।
চোখের অসুস্থতা- যেমন গ্লোকুমা, মেকুলার ডিজেনারেশন, রেটিনাল ডিটাচমেন্ট, মেকুলার হোল, রক্তনালী ও রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা, ইউভিয়াইটিসের জটিলতা ইত্যাদি কারণে ছানি অপারেশনের পরেও অনেক সময় ভালো না দেখার আশঙ্কা থেকে যায়।
এই সব ক্ষেত্রে প্রয়োজন অপারেশনের আগেই ভালো করে সার্বিক বিষয় পরীক্ষা করে দেখে নেয়া। যদি এমন সম্ভাবনা আগে থেকেই আঁচ করা যায় তবে বিষয়টি রোগীকে আগেই জানিয়ে রাখতে হবে। তাহলে অপারেশন পরবর্তীতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকে না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে বিষয়টিকে মেনে নিয়ে বোঝাপড়ার মাধ্যমে পরবর্তী ধাপের চিকিৎসা নিতে হবে। অর্থাৎ রেটিনার সমস্যাটিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। অনেক সময় ছানির কারণে রেটিনার সমস্যা নিরূপণে কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায় যা ছানি অপারেশনের পরে স্পষ্টতর হয়। ফলে অনেক সময় রেটিনার সমস্যা আগে থেকেই আঁচ করতে পারলে আগেভাগেই ছানি অপারেশন করিয়ে নেয়া ভালো। কারণ রেটিনার সমস্যা শনাক্তকরণে এবং তার চিকিৎসার সুযোগ নিতে ছানি অপসারণ অনেক সময় জরুরি হয়ে পড়ে। ছানি অপসারণ হলেই কেবল লেজার চিকিৎসার মতো কিছু পদক্ষেপ নেয়া সহজতর হয়।
এ ক্ষেত্রে রোগীর জন্য করণীয় হলো ছানি অপারেশন পরবর্তী এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে বিষয়টি নিয়ে চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া।
লেখক : এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু), চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, সাবেক সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল, কনসাল্টেন্ট- আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার, ৩৮/৩-৪ রিং রোড, আদাবর, ঢাকা। মোবাইল : ০১৯২০ ৯৬২৫১২


আরো সংবাদ



premium cement