০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি ন্যান্সি পেলোসির

গাজা দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকিতে : যুক্তরাষ্ট্র

-


ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড দুর্ভিক্ষে পতিত হওয়ার ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে, তাই দুর্ভিক্ষ আটকাতে সেখানে দ্রুত আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে মনে করেন মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ডেভিড স্যাটারফিল্ড। গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধি করতে গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইল উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন ডেভিড স্যাটারফিল্ড। রয়টার্স, আলজাজিরা, এএফপি ও বিবিসি।
গাজায় যে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা কমিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। তিনি বলেন, যদি ইসরাইল গাজায় মানবিক সঙ্কট কমিয়ে আনতে ‘বিশেষ, দৃঢ় এবং উল্লেখকরার মতো’ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তবে মিত্র হিসেবে ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র বিনা শর্তে যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে সেটি আর থাকবে না। মঙ্গলবার গাজা বিষয়ে কথা বলার সময় সাংবাদিকরা স্যাটারফিল্ডের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ওয়াশিংটন ইসরাইলের গ্রহণ করা উদ্যোগে সন্তুষ্ট কিনা। তিনি অবশ্য এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, গত আড়াই সপ্তাহ ধরে ইসরাইল সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে সেখানে এখনো উল্লেখ করার মতো কাজ করা বাকি আছে। সে প্রক্রিয়া চলছে। পুরো গাজাই দুর্ভিক্ষের ‘উচ্চ ঝুঁকিতে’ রয়েছে, বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চল। তিনি এজন্য আরো বেশি কিছু করার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রায় সাড়ে ছয় মাস ধরে গাজা যুদ্ধ চলছে। জাতিসঙ্ঘ গত কয়েক মাস ধরেই বলে আসছে, গাজায় ত্রাণ বিতরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি মঙ্গলবার বলেন, এপ্রিলে গড়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক ত্রাণ নিয়ে গাজায় প্রবেশ করত। সোমবার ৩১৬টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। যা একদিনে সর্বোচ্চ। তিনি সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘আমরা সব সময়ই জোর দিয়ে বলে এসেছি, বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতি মানুষের সৃষ্টি এবং কেবলমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ সঙ্কটের সমাধান সম্ভব; গত কয়েক দিনে আমরা সেটি দেখতেও পেয়েছি, এটা সম্ভব। ‘যত আমরা এই পরিস্থিতি ধরে রাখব, তত আমরা ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাব।’

সামনেই গরম পড়তে শুরু করবে। ওই সময়ে রোগের প্রাদুর্ভাব এড়াতে এখন ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নেয়ার দিকেও মনযোগ দেয়া হয়েছে বলে জানান জাতিসঙ্ঘের এই কর্মকর্তা। বিশেষ করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলে।
নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি ন্যান্সি পেলোসির : ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। আয়ারল্যান্ডের আরটিই নিউজকে তিনি বলেছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা স্বীকার করি। কিন্তু গাজা যুদ্ধে যে পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের সংখ্যা খুবই বেশি। ন্যান্সি বলেন, নেতানিয়াহু যে পলিসি ও তৎপরতা শুরু করেছেন তা আমরা প্রত্যাখ্যান করি। তার এ নীতি ভয়াবহ। তিনি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে যা করেছেন তা আরো ভয়াবহ। তার গোয়েন্দা প্রধান পদত্যাগ করেছেন। এখন তারও পদত্যাগ করা উচিত। এসব কিছুর জন্য তিনিই দায়ী। উল্লেখ্য, ৭ অক্টোবর হামাস রকেট হামলা চালায় ইসরাইলে। এতে ইসরাইলে কমপক্ষে ১১৩৯ জন নিহত হন। এই হামলা ব্যর্থ করে দিতে পারার ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে সোমবার পদত্যাগ করেছেন ইসরাইলের সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল আহরন হালিভা।

তহবিল ছাড়ার অনুরোধ : দাতা দেশগুলোর কাছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর জন্য পুনরায় তহবিল পাঠানোর অনুরোধ করে নরওয়ে বলেছে, সংস্থাটির অল্প কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে অপরাধের যে অভিযোগ উঠেছে সেজন্য পুরো সংস্থা এবং সব ফিলিস্তিনি শরণার্থীকে শাস্তি দেয়া ন্যায়সংগত নয়। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইল দাবি করেছে, গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার সময় ইউএনআরডব্লিউএ-র শতাধিক কর্মী হামাস যোদ্ধাদের সাথে ওই হামলায় অংশ নিয়েছে। যদিও ইসরাইল তাদের এ দাবির পক্ষে যথাযথ প্রমাণ এখনো দেখাতে পারেনি। কিন্তু ইসরাইলের ওই দাবির পর এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশ ইউএনআরডব্লিউএ-র জন্য তাদের বরাদ্দ ত্রাণ তহবিল স্থগিত করে দেয়ে। ইউএনআরডব্লিউএ-র বড় দাতাদের একজন নরওয়ে। দেশটি বলেছে, সংস্থাটির জন্য তহবিল বন্ধ করে দেয়ার অর্থ গাজার সব ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা। ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কোলোনার নেতৃত্বে একটি দল ইউএনআরডব্লিউএ-র নিরপেক্ষতার পর্যালোচনা করে সোমবার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ইসরাইল এখনো তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। পরদিন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এডি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এখন ওই সব দেশকে এটা বলতে চাই যে, যারা এখনো ইউএনআরডব্লিউএ-র জন্য তাদের বরাদ্দ আটকে রেখেছেন তারা ওই তহবিল ছাড়ুন।’
‘নরওয়ে জোর দিয়ে বলছে, ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর একটি সংস্থার অল্প কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার কারণে পুরো সংস্থা এবং সব ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের শাস্তি দেয়া কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এখন পর্যন্ত ১০টি দেশ ইউএনআরডব্লিউএ-র জন্য বরাদ্দ তাদের ত্রাণ তহবিল পুনরায় চালু করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া এবং লিথুয়ানিয়া এখনো তাদের তহবিল স্থগিত করে রেখেছে। জাতিসঙ্ঘের একজন মুখপাত্র সোমবার বলেছেন, আগামী জুন পর্যন্ত ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার মতো যথেষ্ট অর্থ বর্তমানে ইউএনআরডব্লিউএ-র হাতে আছে।

গাজায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা : অবরুদ্ধা গাজা উপত্যকায় ৫০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার এই হামলার দাবি করেছেন দেশটির সেনারা। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। সেনাবাহিনী এ বিবৃতিতে জানিয়েছে, হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ, টানেল ও সামরিক অবকাঠামোতে হামলা করা হয়েছে। বিবৃতিতে আরো জানিয়েছে, মধ্য গাজায় ইসরাইলি ট্যাংক হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। ওই হামলার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কিছু জানায়নি ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজার রাফাহ অঞ্চলের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়া সাতটি পরিবারের সদস্যসহ অনেকেই নিহত ও আহত হয়েছেন। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ২০১তম দিনে ফিলিস্তিন সরকার জানিয়েছে, অবিরত ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ২৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৭ হাজার ২২৯ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যোগ করেছে যে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৭৯ জন নিহত এবং ৮৬ জন আহত হয়েছে।

হামাসকে শর্ত কাতারের : গাজায় উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য হামাস যদি কার্যকর ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তা পালন করে, কেবল তাহলেই সংগঠনটির নেতারা কাতারে অবস্থান করতে পারবেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল আনসারি মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ ইস্যুতে দোহার অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তব্য দিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাজেদ আল আনসারি বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকায় যুদ্ধাবসানের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এই তৎপরতায় হামাসের ভূমিকা যদি ইতিবাচক এবং কার্যকর হয়, কেবল তাহলেই গোষ্ঠীটির নেতারা দোহায় অবস্থান করতে পারবেন।’ উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্টের অনুমোদনক্রমে ২০১২ সাল থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সিনিযর নেতাদের আতিথ্য প্রদান করে আসছে কাতার। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ বাঁধার পর থেকে যে তিন দেশ দুইপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে- তাদের মধ্যে কাতার অন্যতম। বাকি দুটি দেশ হলো মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা-দূতিয়ালিতে গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করেছিল হামাস-আইডিএফ। সেই বিরতির সময় নিজেদের কব্জায় থাকা বন্দীদের মধ্যে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ১৫০ জনকে কারাগার থেকে ছেড়ে দিয়েছিল ইসরাইলও।

ওই বিরতি শেষ হওয়ার পর গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতির জন্য কাজ করছিল মধ্যস্থতাকারী তিন দেশ। চলতি বছর রমজান মাস থেকে তা শুরু হওয়ার কথা ছিল। যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাব হামাসকে প্রদানের পর সংগঠনটির নেতারা কয়েকটি শর্ত তাতে সংযুক্ত করেন। তবে সেসব শর্ত বাস্তবসম্মত নয় বলে প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয় ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
মার্কিন সিনেটে সহায়তা বিল পাস : যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ৯৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ব্যাপক বৈদেশিক সহায়তা প্যাকেজ সহজেই পাস হয়েছে। রাশিয়ার বাহিনীর অগ্রাভিযান ও কিয়েভের সামরিক সরবরাহের ঘাটতির মধ্যে এ বিলটি পাস হওয়ায় ফলে ইউক্রেনে নতুন করে হাজার হাজার কোটি ডলারের মার্কিন সামরিক সহায়তা পাঠানোর পথ পরিষ্কার হলো। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেট চারটি বিলের মিলিত প্যাকেজটি ৭৯-১৮ ভোটে অনুমোদন পায়। এর আগে শনিবার কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বিলটি পাস হয়েছিল। এই প্যাকেজের অধিকাংশই ইউক্রেন, ইসরাইল, তাইওয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশীদারদের জন্য বরাদ্দ সামরিক সহায়তা। সিনেটের অনুমোদন পাওয়ার পর এখন বিলটি স্বাক্ষরের জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে যাবে। বাইডেনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিলটি যুক্তরাষ্ট্রের আইনে পরিণত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement