০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ব্রিটেনের পার্লামেন্টে অভিবাসীদের রুয়ান্ডা পাঠানোর বিল পাস

-

বিরোধীদল লেবার পার্টি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরোধিতার মধ্যেই নথিপত্রবিহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রুয়ান্ডা পাঠানো সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়েছে ব্রিটেনের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডস। এখন রাজা চার্লস ২ বিলটিতে স্বাক্ষর করলেই পুরোপুরি আইনে পরিণত হবে সেটি। হাউজ অব লর্ডসে বিলটি পাস হয় সোমবার রাতে। পাসের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, এখন শুধু (রুয়ান্ডাগামী) ফ্লাইটগুলোর ছাড়ার অপেক্ষা। কোনো কিছুই আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। বিবিসি।
এই বিল পাস শুধু (আইন প্রণয়নের পথে) এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া নয়, বরং অভিবাসন সংক্রান্ত বৈশ্বিক সমীকরণেও মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। আর আইনটি পাসের মাধ্যমে বিশ্বের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আমরা স্পষ্টভাবে বার্তা দিতে চাই যে, অবৈধভাবে এদেশে এসে লাভ নেই, টিকতে পারবেন না। এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে সুনাক বলেছিলেন, গত বসন্তেই স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। দুর্ভাগ্যবশত তা মিস হয়েছে। তবে আশা করছি আগামী ১০ থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে রুয়ান্ডাগামী ফ্লাইটগুলো চালু করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, ব্রিটেনে বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম এই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। ইংলিশ চ্যানেলসহ অন্যান্য সীমান্তপথ দিয়ে প্রায় প্রতিদিনই এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের দরিদ্র অঞ্চলগুলো থেকে শত শত শরণার্থী এসে ভিড় করছেন ব্রিটেনে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসে কনজারভেটিভ পার্টি। নির্বাচনে দলটির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি ছিল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু বাস্তবে তাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে কনজারভেটিভ সরকার। পাশাপাশি গত চার বছরে প্রতিনিয়ত দেশটিতে বেড়েছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের হার। সর্বশেষ গত বছর দেশটিতে এসেছেন রেকর্ড ৭ লাখ ৪৫ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের সময়েই রুয়ান্ডায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাঠানোর ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছিল। তবে সে সময় তাতে আপত্তি জানিয়েছিল ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট। আদালত বলেছিলেন, রুয়ান্ডা যদি ব্রিটেন থেকে যাওয়া অভিবাসীদের অন্য কোনো দেশে ঠেলে দেয় সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি যুক্তরাজ্যের নীতি ও আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।

পরে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নেতৃত্বাধীন সরকার আদালতকে এই মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে রুয়ান্ডায় যাদের সাথে পাঠানো হবে, তাদের সাথে যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও নীতি অনুসারে আচরণ করা হবে। নিশ্চয়তা প্রদানের পর আপত্তি তুলে নেন সুপ্রিম কোর্ট, রুয়ান্ডার সাথে চুক্তির পথও প্রশস্ত হয়। রুয়ান্ডার সরকারের সাথে এ বিষয়ক চুক্তি করতে গত ৫ ডিসেম্বর পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটিতে গিয়েছিলেন ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি। রাজধানী কিগালিতে রুয়ান্ডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিনসেন্ট বাইরুতার সাথে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আশ্রয় ও দেখাশোনা করার জন্য রুয়ান্ডাকে এককালীন ২৪ কোটি পাউন্ড দেবে যুক্তরাজ্যের সরকার। পরবর্তী ৫ বছরে কিস্তিতে আরো ৩৭ কোটি পাউন্ড প্রদান করা হবে। বিরোধী দল লেবার পার্টি এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো অবশ্য এই আইনটির মাধ্যমে বড় কোনো পরিবর্তনের আশা দেখছেন না।
লেবার পার্টির নেতা ইভেট কুপার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, এটা আসলে সরকারের একটি মনভোলানো চটক এবং এই চটক দেখানোর জন্য বর্তমান সরকার দেশের জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্চা দিয়েছে। এই আইনের আওতায় মাত্র ৫২ হাজার মানুষকে রুয়ান্ডা পাঠানো সম্ভব হবে। অথচ ব্রিটেনে বর্তমানে লাখ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী রয়েছেন। তাদের নিয়ে কী করা হবে?
ব্রিটেনের মানবাধিকার সংস্থা রিফর্ম ইউকের নির্বাহী রিচার্ড টাইস বিবিসিকে বলেন, সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন না হলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। আজ যদি এক হাজার মানুষকে রুয়ান্ডা পাঠানো হয়, দুই দিনের মধ্যে আরো পাঁচ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর আগমন ঘটবে। তাই আমার মনে হয় না এটি কার্যকর কোনো সমাধান।

 


আরো সংবাদ



premium cement