০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গরম আরো বাড়বে

পরিবেশ বিপর্যয়ে দেশ পুড়ছে তাপদাহে

প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। এমন গরম থেকে রক্ষায় পানি পান করছেন এক শ্রমজীবী। ছবিটি রাজধানীর সদরঘাট এলাকার : নাসিম সিকদার -


পরিবেশ বিপর্যয়ে তাপদাহে পুড়ছে দেশ। গত কয়েক দিনে অসহনীয় গরমে রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের কাহিল অবস্থা। প্রতিদিন গরমের মাত্রা যেনো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদ ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। চলমান তাপমাত্রা আরো বাড়বে জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এপ্রিলকে উষ্ণতম মাস হিসেবে বিবেচনা করা হলেও মূলত পরিবেশ বিপর্যয়, সবুজায়ন ধ্বংস, নদী, পুকুর, খাল, বিল ও জলাশয় ভরাটসহ বৈশি^ক, আঞ্চলিক নানা কারণে তাপমাত্রা অসহনীয় হয়ে উঠছে। বিপজ্জনক এ তাপমাত্রা থেকে সহজে রেহাই মিলবে না। এর জন্য গাছপালা, নদ-নদী খাল-বিল জলাশয়সহ প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করে সবুজায়ন বাড়াতে হবে।

ঢাকা শহরের ৩৬টি স্থান নিয়ে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব এলাকায় সবুজের উপস্থিতি রয়েছে সেসব এলাকায় তাপমাত্রা তুলনামূলক কম। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল তাপমাত্রা বেশি। কারণ এগুলোতে গাছপালা কম ছিল। আর বাকি ৯টিতে বৃক্ষ বেশি থাকায় তাপমাত্রাও কম ছিল। আর অন্য ১৮টিতে মধ্যমানের তাপমাত্রা ছিল। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা ছিল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানায়। দ্বিতীয় কম তাপমাত্রার অন্য এলাকাগুলো ছিল, রমনা পার্ক, ধানমন্ডি লেক পাড়, ক্যান্টনমেন্টসহ কিছু এলাকা। অন্য দিকে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার এলাকা ছিল তেজগাঁ, মতিঝিল, মিরপুর, যাত্রাবাড়ীসহ কিছু বাণিজ্যিক এলাকা। এগুলোতে তিন থেকে সাড়ে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রার তারতম্য ছিল। এতেই প্রমাণিত সবুজ জলাভূমি তাপমাত্রা কম কিংবা বৃদ্ধির অন্যতম উৎস।
এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে তাপদাহ দেখা যাচ্ছে সেটি দীর্ঘদিনের পরিবেশ ধ্বংসের একটি ফলাফল। এর একাধিক কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, মূলত বৈশ্বিক কারণে ঢাকা শহরের তাপমাত্রা দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে ৪ ডিগ্রি বেশি।

বৈশি^ক কারণের ভেতরে আছে আমাজান ফরেস্ট নষ্ট হওয়া, উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে কার্বন নিঃসরণ ও ফুয়েল বার্ন বেড়ে যাওয়া। এইসব কারণে বৈশি্বক তাপমাত্রা বাড়ছে। দ্বিতীয় আঞ্চলিক কারণটি হলো হিমালয়। সেখানে এক সময় প্রচুর বরফ ছিল। বরফে রিফলেক্ট হয়ে তাপমাত্রাটা চলে যেতো। আর এখন বরফগুলো গলে যাওয়ার কারণে সেখানে কঠিন পাথর দেখা যাচ্ছে। ফলে এই পাথরে ধারণকৃত তাপমাত্রা বাতাসের মাধ্যমে আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে যায় এবং এক ধরনের তাপদাহ সৃষ্টি করে। এর পর আঞ্চলিক কারণ সবুজায়ন ধ্বংস উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক সময় আমাদের ২৫ ভাগের বেশি সবুজায়ন থাকলেও এখন আর তা নেই। কারণ গাছপালা যেহেতু কার্বন-ডাই অক্সাইড ও তাপ শোষণ করে অক্সিজেন সরবরাহ করে। ফলে বাতাসে অক্সিজেন ছড়িয়ে আশপাশের এলাকা শীতল রাখতো। কিন্তু বন উজাড় করায় বৃক্ষ কমে গিয়ে এখন অক্সিজেন, জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে তাপমাত্রা বেড়েছে। অন্য দিকে একই কারণে বৃষ্টিপাতও কমেছে। এর বাইরেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ জলাধার কমে যাওয়া। এর বাইরে নগরীর পিচঢালা রাস্তা ও যানবাহন তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এগুলো ইঞ্জিন প্রচণ্ড পরিমাণে উত্তপ্ত হয়ে বাতাসের সাহায্যে ছড়িয়ে পড়ে শহরকেও উত্তপ্ত করে দেয়। আর রাস্তাগুলো দিনের বেলা উত্তপ্ত হয় এবং রাতের প্রথমভাগ পর্যন্ত তাপ ধারণ করে থাকে। এর পর যখন তা রিলিজ করে তখন তা নগরে তাপ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

অপর দিকে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশে এপ্রিলকে উষ্ণতম মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত যেতে পারে আবার ঝড় বৃষ্টি হলে তা কমবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মধ্যে তামাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠার অন্যতম করণ হলো, সবুজায়ন ধ্বংস, নদী, পুকুর, খাল, বিল ও জলাশয় ভরাটসহ বৈশি্বক, আঞ্চলিক কারণ। যেমন প্রকৃতি ধ্বংস করে নগরায়নের কারণে দিন শেষেও বাতাস গরম থাকে। কারণ সারা দিনের রোদে ভবনগুলো যে পরিমাণ তাপ শোষণ করে তা সারা রাতেও ঠাণ্ডা হয় না। ফলে পরদিনের সূর্যের তাপে তা আরো বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠে, যা বাতাসে মিশে মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠে।
বিরাজমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রকৃতি ধ্বংস না করে তা রক্ষা ও সবুজায়ন বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, অন্যতায় এর সমাধান অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এ দিকে বৃষ্টি হলেও স্বস্তি মিলবে না, তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসলেও সেটি খুব বেশি স্থায়ী হবে না জানিয়ে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ২০ এপ্রিলের পরে গরমের তীব্রতা আরো বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। ২০ এপ্রিলের পর বিভিন্ন জায়গায় গরমের ব্যাপ্তি আরো বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি হতে পারে। আর চলমান তাপ প্রবাহের তেমন কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক শিরীন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, তারপরও লোডশেডিং বড় চমক ছাড়াই প্রস্তুত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, আটক ১ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের দাবি সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ২ প্রার্থী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন : শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা আবাহনীর ২২তম শিরোপা

সকল