৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশে ফ্লু ভাইরাস বৃদ্ধি ৬ গুণ

শ্বাসতন্ত্রের রোগীদের আক্রান্তের হার এক-চতুর্থাংশ
-


বাংলাদেশে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুর সংক্রমণ অন্য সময়ের চেয়ে ছয় গুণ বাড়ে। এ সময় যারা শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি চার জনে এক জন ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। আবার ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাদের ১ শতাংশ হাসপাতালেই মারা যায়।
২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং আইসিডিডিআরবির গবেষকরা যৌথভাবে মহাখালীর আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরেন। তারা বলেন, প্রতি বছর ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ৩ থেকে ৫ শতাংশ পরিবর্তন হয়ে আসছে। এ পরিবর্তনের হার বেশি হলে প্যান্ডেমিক (মহামারী) হতে পারে, ২০১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু এ ধরনেরই একটি ঘটনা। তখন বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এবং পাঁচ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশে প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের টিকা বা ফ্লু-শট নেয়ার সুপারিশ করেন গবেষকরা। এছাড়াও, ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা নেয়ার সুপারিশ করেছেন গবেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (ইউএস-সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কারিগরি সহায়তায় এই সার্ভেইল্যান্সটি বাংলাদেশে পরিচালিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ১৯টি হাসপাতালে চলমান এই সার্ভেইল্যান্সের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৌসুমি বৈচিত্র্য বোঝার পাশাপাশি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন ধরন শনাক্ত করা। আইসিডিডিআরবির অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট ডা: ফাহমিদা চৌধুরী বিশ্বব্যাপী ফ্লু সংক্রমণের ধরন সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর দুই লাখ ৯০ হাজার থেকে ছয় লাখ ৫০ হাজার মানুষ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। এছাড়া তিনি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমি বৈচিত্র্য তুলে ধরার পাশাপাশি এবং ফ্লু টিকা দেয়ার সঠিক সময়ের ধারণা দেন।
আইইডিসিআর এবং ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ডা: তাহমিনা শিরিন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভেইল্যান্স থেকে প্রাপ্ত ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের জ্বর এবং কাশির অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ রোগীর মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তি এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

অধ্যাপক ডা: তাহমিনা শিরিন বলেন, তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশে সারা বছরই ফ্লু শনাক্ত হয়ে থাকে তবে বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফ্ল¬ু শনাক্তের হার বৃদ্ধি পায় এবং জুন থেকে জুলাই মাসে এর প্রকোপ সর্বোচ্চ হয়ে থাকে। এই কারণে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মৌসুম শুরুর আগেই ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখার প্রতি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, চলমান এই ফ্লু মৌসুমে জ্বর, সর্দি, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক নেয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়াও হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং কাশি দেয়ার শিষ্টাচারগুলো সারা বছর মেনে চললে আমরা শুধু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শ্বাসতন্ত্রের অসুখ নয় অন্যান্য সংক্রামক রোগও প্রতিরোধ করতে পারব।
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ বিশেষ অতিথি ছিলেন। তিনি বলেন, আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ড. কে জামান গবেষণা করে দেখেছিলেন যে, গর্ভাবস্থায় মাকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দিলে মায়ের পাশাপাশি নবজাতকেরও ৬৩ শতাংশ রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইনফেকশাস হ্যাজার্ড ম্যানেজমেন্ট অফিসার ড. এ এস এম আলমগীর, ইউএস-সিডিসির এপিডেমিওলজিস্ট ড. গ্রেচেন কাওম্যান, গ্লোবাল হেলথ ডেভেলপমেন্ট (জিএইচডি) এবং ইস্টার্ন মেডিটারিনিয়ান পাবলিক হেলথ নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান।


আরো সংবাদ



premium cement