২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সফরে রোজা না রাখার অনুমতি

-


মাহে রমজানুল মোবারকের আজ ১৫ তারিখ। আজ পবিত্র মাসের অর্ধেক পার হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা এ মাসের রোজা প্রত্যেক সক্ষম মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন। তবে এ থেকে সাময়িকভাবে হলেও ছাড় দেয়া হয়েছে রোগী ও মুসাফিরকে। অসুস্থতা যেমন সিয়াম পালন থেকে ছাড় পাওয়ার একটি কারণ, তেমনি আরেক কারণ সফর। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্যক্ষ করবে, তাকে এতে রোজা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
তবে সালাত ও সিয়ামে ছাড় পাওয়ার জন্য সফরের দূরত্ব ও মেয়াদ বিবেচ্য বিষয়। নামমাত্র ভ্রমণ ও প্রবাস জীবনকে যেন ইবাদতে বিশেষ সুবিধা লাভের কারণ হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে না চায়, সেজন্য এসব শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য দূরত্ব একটি শর্ত হিসেবে গণ্য। হেঁটে স্বাভাবিক গতিতে তিন দিনে যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করার রীতি তখনকার আরবে প্রচলিত ছিল, সেটাকে এ ব্যাপারে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এই তিন দিনের পথ বা তিন মঞ্জিল পরবর্তীকালের পরিমাপে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সাব্যস্ত করা হয়।
তা ছাড়া কুরআন মাজিদের শব্দচয়ন থেকে অনুমিত হয়, নিছক প্রবাস জীবন নয় বরং চলমান অবস্থা শর্ত। তাই সফরকালে উল্লেখযোগ্য সময় বা কমপক্ষে ১৫ দিন যাত্রাবিরতির কারণে সালাতে কসর ও সিয়ামে ছাড়ের হুকুম রহিত হয়ে যায়।
ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় রোজা না রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোজা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোজা রাখা মাকরূহ। এ অবস্থায় রোজা না রেখে পরে তা কাজা করবে। তাবেয়ি আছিম রাহ: বলেন, হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সফরকালে রোজা রাখার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘ যে রোজা রাখবে না সে অবকাশ গ্রহণ করল। আর যে রোজা রাখল সে উত্তম কাজ করল।’(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা )

তবে সফর অবস্থায় রোজা রাখা শুরু করলে নেহায়েত কষ্ট ছাড়া তা আর ভাঙ্গা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা আসবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। হজরত আনাস রা: বলেন, ‘কেউ রোজা রেখে সফরে বের হলে রোজা ভাঙ্গবে না। তবে যদি পিপাসার কারণে প্রাণনাশের আশঙ্কা হয় তাহলে রোজা ভাঙ্গতে পারবে, পরে তা কাজা করে নেবে। যদি এমন হয় যে, মুসাফির সফরের কারণে রোজা রাখেনি, কিন্তু দিন শেষ হওয়ার আগেই মুকিম হয়ে গেল। তাহলে দিনের অবশিষ্ট সময় রমজানের মর্যাদা রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। তবুও পরবর্তী সময়ে এ রোজার কাজা অবশ্যই করতে হবে।
তাবেয়ি ইবরাহিম নাখায়ি রাহ: বলেন, যে মুসাফির রমজানের দিনে (সফরের অবস্থায়) খাবার খেয়েছে, সে মুকিম হয়ে গেলে দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরত থাকবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা)
কিন্তু সফরে রোজা রাখা না রাখা দু’টিরই অনুমতি আছে, এ ব্যাপারে সবাই একমত। কোনটি ভালো- রাখা নাকি না রাখা সে সম্পর্কে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। এক হাদিসে দেখা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সফরে রোজা রাখা খুব ভালো। কিন্তু আরেক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তির প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তা এই যে, এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জায়গায় লোকজনের ভিড় দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সেখানে একজনকে ছায়ায় রেখে সেবা করা হচ্ছে। তার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন লোকটি রোজা রাখার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন তিনি বললেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। আরেক সফরে সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ রোজা রাখলেন, আবার কেউ কেউ রোজা রাখলেন না। এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে রোজাদারেরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আর যারা রোজা রাখেননি, তারাই তাঁবু টানানো, বাহনগুলো সামলানো ইত্যাদি সব কাজ করলেন। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, বেরোজাদারেরা সব পুণ্য হাসিল করল।

 


আরো সংবাদ



premium cement