২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কড়াইল বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ২ শতাধিক ঘর

আগুনে পুড়ছে রাজধানীর কড়াইল বস্তি : নয়া দিগন্ত -

রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত অর্ধশত ঘর পুড়ে গেছে। এ ছাড়া আরো প্রায় ২০০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আগুনে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিকেল ৪টার দিকে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রথমে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পরে আরো সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে যোগ দেয়। পরে আরো দু’টি যোগ দিয়ে ১২টি ইউনিট কাজ করে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে তার আগেই বস্তির অন্তত ৫০টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও বস্তিজুড়ে পড়ে আছে শুধুই পোড়া টিন আর ইট। আগুনে প্রায় ৫০টি ঘর পুড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা) মো: আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো সেভাবে জানা যায়নি। তবে আমাদের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তারা সম্পূর্ণ তথ্য জানাবে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে ইফতার : এদিকে কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে কয়েক শ’ বাসিন্দা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। আগুনে ঘর ছাড়া হয়েছেন অনেকে। বাসিন্দাদের রোজাদার অনেকের ঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ায় ঘরের সামনে ইফতার করেছেন।
দু’টি পেঁয়াজু দিয়ে পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের পাশে দাঁড়িয়ে ইফতার করছিলেন আব্দুল হালিম নামের এক ব্যক্তি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ভেবেছিলাম আজকে কাজ থেকে ফিরে ঘরে বসে ইফতার করব। কিন্তু আগুন আমার সবকিছু ছারখার করে দিয়েছে। সারাদিন রোজা রেখেছি, আগুনের সময় অনেক চেষ্টা করেছি ঘরটিকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু পারিনি। এখন পুড়ে যাওয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার করতে হচ্ছে।
ধ্বংসস্তূপের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার করেন আসাদুল ইসলামও। বস্তিতে লাগা আগুনে তারও থাকার ঘরটি পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই ঘরে ইফতার করি। কিন্তু আজকে যে পুড়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে ইফতার করতে হবে, সেটি কখনো ভাবিনি। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। ঘরে থাকা টাকা-পয়সা, মালামাল সবকিছু পুড়ে আগুনে ছাই হয়ে গেছে। বস্তির এক কোণে দাঁড়িয়ে এভাবে ইফতার করছেন অনেকেই। সাজানো গোছানো সংসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দেখে অনেকেরই চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল।
কড়াইল বস্তির বাসিন্দা শামসুন্নাহার জানান, কিছু দিন আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।এখন স্বামী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে তার সংসার। নিজে মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। স্বামী সিটি করপোরেশনের ময়লা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত। দু’জনে যা উপার্জন করেন সংসার খরচ মিটিয়ে তা থেকেই কিছু সঞ্চয় করেছিলেন। কিন্তু সর্বগ্রাসী আগুনে তাদের জমানো টাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শামছুন্নার জানান, তার আর কিছু রইল না। ছেলে মাদরাসায় পড়ে। ওর বই-খাতা পুড়ে ছাই। নিজেদের খ্যাতা-বালিশও কিচ্ছু নাই। রাতে থাকার জায়গাটুকুও শেষ হয়ে গেল। এক কাপড়ে দাঁড়িয়ে আছেন বলে জানান।


আরো সংবাদ



premium cement