২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে সামাল দেয়া কঠিন

সানেমের সম্মেলনে ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ
-


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একবার কমতে শুরু করলে তা সামাল দেয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় কথা নয় বরং দেখতে হবে, প্রবণতা কী। রিজার্ভের প্রবণতা নিচের দিকে নামতে থাকলে ঠেকানো কঠিন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন। সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনের বক্তা ছিলেন তিনি। একই অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট যত না বৈশ্বিক, তার চেয়ে অভ্যন্তরীণ বেশি। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আজ রোববার শেষ হবে এবং এ সম্মেলনে অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদরা।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘দেশের রিজার্ভ একসময় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারও ছিল। তাই বলছি, পরিমাণ অনেক সময় বড় সমস্যা নয়, প্রবণতাটাই বড় কথা।’
সম্মেলনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ঋণ দিতে এবার আইএমএফ বেশি শর্ত দেয়নি।
আহসান মনসুরের এই বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ খেলাপি ঋণ নিয়ে বলেন, ‘অনেক দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার।’


ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরো বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দেয়ার মাধ্যমে আইএমএফের আমলাতন্ত্র খুশি, আমরাও খুশি।’ অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো গত একটি বছর কঠিন যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্যও। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যতে আরো বেশি প্রভাব, ডলার সঙ্কট, রিজার্ভের ক্রমাগত পতন, প্রবাসী আয়ে ভাটা, ইত্যাদির কারণে গত এক যুগের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজনীতি ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে বলে যে সমালোচনা করা হয়, সেটি নিয়েও বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই আছে, তবে সংসদে অনেক সদস্যই ব্যবসায়ী।’ অর্থনৈতিক এই সঙ্কট থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেগুলো যৌক্তিক। তাদের (আইএমএফ) পরামর্শে আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে নেয়ায় এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।’
গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আইএমএফ। দুই দিন পরেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে।


এই ঋণ নিতে সংস্থাটির ২৮টি শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অন্যতম হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো। আইএমএফের অন্য শর্তের মধ্যে আছে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো। সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সরকার একমত পোষণ করেছে। বৈশ্বিক সঙ্কটে দেশের অর্থনীতিতে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে তা মোকাবেলা ও উত্তরণের উপায় নিয়েই সানেমের এবারের সম্মেলনে আলোচনা করেন বক্তারা। প্রথম সেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, আইএমএফের ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না, বরং টার্নিং পয়েন্ট। এই ঋণ পাওয়ার ফলে এখন অন্যান্য দাতা সংস্থা বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থা পাবে। তাদের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া সহজ হবে। দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে চারটি বিষয়ের ওপর জোর দিতে বলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব আঘাত এসেছে সেগুলোর কোনোটিতে প্রাধান্য দেয়া উচিত, তা খোঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে কাজ করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে এসব আঘাতের প্রভাব কেমন, তার উপর জোর দিতে হবে।’


পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি উল্লেখ করে বেসরকারি খাতে শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে সন্তোষ প্রকাশ করেন।শামসুল আলমের এই কথা প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয়ের বিকল্প নেই, বেসরকারি খাত থাকবে পরিপূরক হিসেবে। ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ৫ শতাংশের বেশি। শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এখন সমান।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে কোনো শর্ত দেয়নি। তারা আমাদের পরামর্শ দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ আমাদের যে পরামর্শ দিয়েছে, সেগুলো আমাদেরও চাওয়া। সংস্কার কোনো বিপ্লব নয় বা রাতারাতি সম্ভব নয়। সংস্কার করতে সময় লাগে, এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তবে এরই মধ্যে কিছু কিছু সংস্কার আনা হয়েছে বলেই আইএমএফ আমাদের ঋণ দিয়েছে। তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত নয়, সংস্থাটির পরামর্শেই আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। আইএমএফের লোনের ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।
দুই দিনের এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের দেড় শ’ অর্থনীতিবিদ অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে ২৩টি অধিবেশনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অর্থনীতি-গবেষকরা ৮০টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি ইতিহাস গড়া জয় পেল পাঞ্জাব শিরোপার আরো কাছে রিয়াল মাদ্রিদ গাজানীতির প্রতিবাদে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

সকল