০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আওয়ামী লীগ সরকারে এলেই মানুষের ভাগ্য খোলে : শেখ হাসিনা

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় সিনিয়র নেতাদের সাথে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করছেন : পিআইডি -

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিজের ভাগ্য গড়তে আসেনি, জনগণের ভাগ্য গড়তেই এসেছে এবং আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যদি বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করা যায়, আজ পর্যন্ত এ দেশের মানুষের যতটুকু অর্জন সবটুকুই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে এ দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, দেশবাসী জানে নৌকা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক এবং নৌকা ছাড়া তাদের গতি নেই।
রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। এর পরই দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেক দফা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফজাল হোসেন ও এস এম কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বারবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি, যাতে দেশের মানুষকে আরো বেশি শোষণ ও নির্যাতন তারা করতে পারে। ২১ বছর পর সরকার গঠন করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, যা অর্জন করেছিল পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সবই নস্যাৎ করে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেশকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করে এবং টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে। সেই অসম্মানজনক জায়গা থেকে দেশের ভাবমর্যাদা আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে সরকার আজ দেশকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় আনতে পেরেছে।
সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, নেতৃত্বশূন্য কোনো দল নির্বাচন করবে আর জনগণ ভোট দেবে কী দেখে? ওই চোর, ঠকবাজ, এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎকারী অথবা খুন, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি তাদেরকে জনগণ ভোট দেবে দেশ পরিচালনার জন্য? তারা তো তা দেবে না। বাংলাদেশের মানুষ এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। আমরা পদ্মা সেতু করেছি নিজেদের অর্থে অথচ এটি নিয়েও বিএনপি প্রশ্ন তোলে, যাদের আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ভরা তারা আবার প্রশ্ন তোলে কোন মুখে? তিনি বলেন, দুর্নীতি করেই যদি টাকা না বানাবে তা হলে বিদেশে তারেক রহমান এত বিলাসবহুল জীবনযাপন করে কিভাবে? কারণ সব জায়গায় তাদের ছিল কমিশন খাবার অভ্যেস। মায়ের জন্য, দুই ছেলের জন্য, ফালুর জন্য-অমুক-তমুককে ভাগে ভাগে দিতে দিতে সেখানে আর কেউ কাজ করতে পারত না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ এ দেশের পল্লী প্রকৃতি এবং মাটি ও মানুষের কল্যাণ যতটা উপলব্ধি করতে পারে আর কেউ ততটা বুঝবে না। কারণ তাদের মনে এখনো রয়ে গেছে ‘পেয়ারা পাকিস্তান’। তা ছাড়া জিয়া, খালেদা এমনকি এরশাদ কারো জন্মই বাংলাদেশে নয়। যেমনটি তিনি ও বঙ্গবন্ধু এই মাটিরই সন্তান, যোগ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, মাটির টানে, নাড়ীর টানেই তারা এ দেশের মানুষের ভাগ্যবিনির্মাণে কাজে লেগেছেন। আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে জনগণের সেবা করা।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বানভাসি মানুষের পাশে আওয়ামী লীগ যেমন দাঁড়িয়েছে, তেমনি প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত তাদের উদ্ধার ও চিকিৎসা প্রদান, খাদ্য প্রদান ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানে সেখানে এতটুকু গাফিলতি নেই। তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই আমরা এই বানভাসি মানুষের পাশে আছি। যেসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে কেউ যেতে পারছে না সেসব জায়গার খবর পাওয়ার সাথেই তিনি সশস্ত্রবাহিনী মারফত হেলিকপ্টারে করে সেখানে সাহায্য পাঠাচ্ছেন, উদ্ধারতৎপরতা চালানো বা খাদ্য পৌঁছানো হয়েছে; অথচ যারা আজ পর্যন্ত বন্যায় বানভাসি মানুষকে এক মুঠো খাবারও দিতে পারেনি, তাদের পাশে দাঁড়ায়নি, ঘরে বসে তারা কেবল মায়া কান্না করছে, এটিই তাদের চরিত্র।
সম্প্রতি লন্ডন থেকে একটি ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত তারেক রহমানের বক্তব্যে ‘৭৫ এর পরাজিত শক্তি’ কথাটি উল্লেখ করায় সেটি নিয়ে আলোচনা সভায় বক্তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সাথে জড়িত সেটি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সমর্থন দিয়ে তাদের ছেলে তারেক রহমান প্রমাণ করেছে। কারণ এসব খুনিকে বিচারের হাত থেকে মুক্ত করেছিল জিয়াউর রহমান এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল। সরকারপ্রধান বলেন, আজকে যখন শুনলাম খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান স্লোগান দেয় ‘৭৫-এর পরাজিত শক্তি’-এর মধ্য দিয়ে সে এটিই প্রমাণ করেছে যে, তার বাবা ও মা দু’জনই বাংলাদেশে পাকিস্তানের দালাল ছিল এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ নস্যাৎ করতে চেয়েছিল; যে কারণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও ইতিহাস একে একে মুছে ফেলে দিয়েছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধুর নামটি পর্যন্ত মুছে ফেলেছিল। আর পাকিস্তানি সেনাদের পদলেহন করে চলাই তো তাদের অভ্যাস ছিল। তারা তো স্বাধীনতার চেতনাতেই বিশ্বাস করে না। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।
তারেক রহমানকে দেশে আসতে দেয়া হচ্ছে না- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে তারেক তখনকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছিল যে, সে আর রাজনীতি করবে না। এ শর্তে সে কারাগার থেকে মুক্তি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। এটি তো বিএনপি নেতাদের ভুলে যাওয়ার কথা না। কাজেই তাকে তো কেউ বিতাড়িত করেনি। স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছিল। তার পরে আর সে ফিরে আসেনি। একজন রাজনৈতিক নেতার যদি এই সাহস না থাকে ফিরে আসার সে আবার নেতৃত্ব দেয় কিভাবে?
এ সময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজের জীবনে আসা নানা বাধা, ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার কথাও দলের নেতাকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। গণভবন থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন : নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, অসহায় গরির মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়। ভোরে সূর্যোদয়ক্ষণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement