৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তামিমের সেঞ্চুরির পর আশা মুশফিক-লিটনকে নিয়ে

সেঞ্চুরি করার পথে স্কোয়ার কাট করছেন তামিম ইকবাল : নয়া দিগন্ত -

ওপেনার তামিম ইকবালের সেঞ্চুরির সাথে মাহমুদুল হাসান জয়, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের অর্ধশতক, যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ভালো অবস্থায় নিয়ে গেছে স্বাগতিক বাংলাদেশকে। ১০৭ ওভারে ৩ উইকেটে ৩১৮ রান করেছে টাইগাররা। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে এখন ৭৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রান করেছিল সফরকারীরা। তামিম ১৩৩ রান করে আহত অবসর নেন। জয় ৫৮ রানে আউট হলেও, দিন শেষে মুশফিক-লিটন যথাক্রমে ৫৩ ও ৫৪ রান নিয়ে অপরাজিত আছেন। গতকাল মুশফিক বা তামিমের কেউই ৫ হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখাতে পারেননি। এ জন্য মুশফিকের প্রয়োজন ১৫ রান, আর তামিম ১৯ রান করে।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। এরপর দ্বিতীয় দিন ১৯ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলে দিন শেষ করতে পারে বাংলাদেশ। টাইগারদের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ৩১ ও তামিম ৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় গতকাল প্রথম সেশনে খানিক চ্যালেঞ্জই ছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। কিন্তু শ্রীলঙ্কার নখদন্তহীন বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সুবাদে কাজটা সহজ হয় তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয়ের।
টেস্টে উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের খরা কাটে বাংলাদেশের। ৬১ ইনিংস পর বাংলাদেশের ওপেনাররা জুটিতে সেঞ্চুরি করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে গল টেস্টে লঙ্কানদের বিপক্ষে ১১৮ রানের জুটি গড়েছিলেন তামিম ও সৌম্য সরকার। দলীয় স্কোর ১০০তে পৌঁছানোর আগেই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩২তম হাফ সেঞ্চুরি পেতে ৭৩ বল খেলেন তিনি। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় ম্যাচের দুই ইনিংসেই জোড়া শূন্য ছিল জয়ের। অবশেষে ১১০ বলে হাফ সঞ্চুরির স্বাদ নেন জয়ও। হাফ সেঞ্চুরির পরপরই জীবন পান জয়। পেসার আসিথার শট বল হুক করতে গিয়ে আকাশে বল তুলে দেন তিনি। ফাইন লেগে জয়ের ক্যাচ ফেলেন লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। তখন ৫১ রানে ছিলেন জয়। তাদের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৪৭ ওভারে বিনা উইকেটে ১৫৭ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এ সময় তামিম ৮৯ ও জয় ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন।
বিরতির আগে জীবন পেলেও, দ্বিতীয় সেশনের ১১তম বলে বিদায় ঘটে জয়ের। আসিথার লেগ সাইডের শর্ট বল খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে নিরোশান ডিকবেলার হাতে জমা পড়ে। ফলে টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ১৬২ রানে ভাঙে জয়-তামিমের উদ্বোধনী জুটি। ৯টি চারে ১৪২ বলে ৫৮ রান করেন জয়। তখন ৯৪ রানে ছিলেন তামিম। ৫১তম ওভারে আসিথার প্রথম বলে বাউন্ডারি আদায় করে নিয়ে ৯৯ রানে পৌঁছেন। আর পরের বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে ১ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। ১৬২ বলে ৬৬ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ১০ম ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। সাড়ে সাত বছর চট্টগ্রামের মাটিতে ও সাড়ে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। আর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর টেস্টে সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম।
তামিমের সেঞ্চুরির পর চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তিন নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। ২২ বলে মাত্র ১ রানে বিদায় নেন তিনি। বিশ^ ফার্নান্দোর কনকাশন সাব কাসুন রাজিথার অফ-স্ট্যাম্পের বল খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন শান্ত। এরপর অফ স্পিনার রমেশ মেন্ডিসের বলে ডিফেন্সিভ খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন তামিম। লঙ্কানদের আবেদনে আউট দেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তামিম। তখন ১০২ রানে ছিলেন তিনি। তামিম বেঁচে গেলেও, অধিনায়ক মুমিনুল হক নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়েছেন। বিশ^র পরিবর্তে খেলতে নেমে রাজিথা দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন। ১৯ বলে ২ রান করেন মুমিনুল। সর্বশেষ পাঁচ ইনিংসে দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে ব্যর্থ হলেন চট্টগ্রামের এই ভেনুতে সবচেয়ে বেশি ৭টি সেঞ্চুরি করা মুমিনুল।
রমেশের বলে রিভিউ নিয়ে বাঁচার পর ব্যক্তিগত ১১৪ রানে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা স্লিপে তামিমের ক্যাচ ফেলেন। ক্রিজে তখন তামিমের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম। দলের স্কোর বাড়ানেরা পাশাপাশি দু’জনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা ছিল। সেটি হলো, দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে টেস্টে ৫ হাজার রান স্পর্শ করা। এই টেস্টের আগে ৫ হাজার রানের ক্লাবে প্রবেশ করতে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান, আর তামিমের ১৫২ রান। চা-বিরতি পর্যন্ত তামিম ১৩৩ ও মুশফিক ১৪ রানে ছিলেন। তবে চা-বিরতির পর আর মাঠে নামেননি তামিম। ব্যাটিং করার সময় অস্বস্তি বোধ করায় তামিমের জায়গায় উইকেটে আসেন লিটন দাস।
উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে মুশফিকের সাথে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন লিটন। তবে ব্যক্তিগত ৩৩ রানে ধনাঞ্জয়ার বলে শর্ট লেগে ওশাদা ফার্নান্দোর ক্যাচ মিসে জীবন পান তিনি। জীবন পেয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২তম হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ নেন লিটন। ২৬তম হাফ সেঞ্চুরি পান মুশফিক। দু’জনের হাফ সেঞ্চুরির আগে ১০১তম ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩০০ স্পর্শ করে। শেষ পর্যন্ত হাফ-সেঞ্চুরি নিয়ে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন মুশফিক ও লিটন। ২টি চারে ১৩৩ বলে মুশফিক ৫৩ ও ৮টি চারে ১১৪ বলে লিটন ৫৪ রানে অপরাজিত আছেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২১১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৯৮ রান করেন মুশফিক-লিটন। শ্রীলঙ্কার কনকাশন সাব রাজিথা ১৭ রানে ২ ও আসিথা ১ উইকেট নেন। মজার ব্যাপার হলো বাংলাদেশের কোনো পেসার উইকেট না পেলেও শ্রীলঙ্কার পেসাররাই তিনটি উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস-শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (কুশল ৫৪, ম্যাথুজ ১৯৯, চান্দিমাল ৬৬, নাঈম ৬/১০৫, তাইজুল ১/১০৭, সাকিব ৩/৬০)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস তৃতীয় দিন শেষে : ১০৭ ওভারে ৩১৮/৩ (জয় ৫৮, তামিম ১৩৩ (রিটায়ার্ড হার্ট), শান্ত ১, মুমিনুল ২, মুশফিক ৫৩*, লিটন দাস ৫৪*, বিশ্ব ০/৪২, আসিথা ১/৫৫, রমেশ ০/৮৩, এম্বুলদেনিয়া ০/৬২, ধনঞ্জয়া ০/৩৯, রাজিথা ২/১৭, কুশল মেন্ডিস ০/৮)।


আরো সংবাদ



premium cement