২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দুবাইয়ে ভিজিট ভিসায় যাওয়া কর্মীদের অনেকে পথে ঘুরছে

বিএমইটি থেকে একক ভিসায় বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হচ্ছে না
- ছবি : নয়া দিগন্ত

স্বপ্নের শহর দুবাই, আবুধাবিতে অসংখ্য বাংলাদেশী শ্রমিক লাখ লাখ টাকা খরচ করে যাওয়ার পরও কাজ না পেয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে কর্মসংস্থান ভিসা বন্ধ থাকায় দুই সরকারের আগ্রহে ভিজিট ভিসায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়। তবে পাড়ি জমানো বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশির ভাগই চাকরি পাচ্ছেন না। ঘুরছেন পথে পথে।

শুধু তাই নয়, খাওয়ার কষ্টসহ তাদের কারো কারো রাত কাটাতে হচ্ছে আলোঝলমলে দুবাইয়ের রাস্তার ফুটপাথে। অনেকে আবার পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে দেশে ফেরত আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

দুবাইয়ের আজমান শহরে অবস্থানরত বাংলাদেশী ব্যবসায়ী রুহুল আমিন মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, ভিজিট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তাদের অবস্থা কিন্তু ভালো নয়। আজমান শহরে যেসব বাংলাদেশী আছে, তাদের অনেকে এখন থাকার কষ্ট, খাবারের কষ্টের মধ্যে আছে। কারণ ভিজিট ভিসা নিয়ে এখানে আসার পর তিন মাসের মধ্যে তাদের কর্মসংস্থান ভিসায় ট্রান্সফার হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী এমন কথা থাকলেও অনেকেরই ভিসা ট্রান্সফার হয়নি। যার কারণে তারা বেকার জীবন কাটাচ্ছে। আর বেকার থাকার কারণে তাদের থাকা, খাওয়ার কষ্ট হচ্ছে অনেক। কেউ কেউ রাস্তায় রাত কাটাচ্ছে বলেও তিনি শুনছেন।

পুরান ঢাকার সাতরওজা এলাকার একটি মুদি দোকানের কর্মচারীর কাজ করছেন রাসেল। তিনি সম্প্রতি দুবাই গিয়ে টিকতে না পেরে তিন মাসের মধ্যে দেশে ফেরত এসেছেন। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, দুবাইয়ে যারা ভিজিট ভিসায় গেছে তাদের অনেকেই কষ্টে আছে। চাকরি নেই। থাকার কষ্ট। খাবারের কষ্ট। পরিস্থিতি ভালো নয়। তবে তিনি বলেন, তার এখনো দুবাই থাকার ভিসার মেয়াদ রয়েছে। ভালো না লাগার কারণেই নাকি তিনি দেশে ফেরত চলে এসেছেন। তার যেতে খরচ হয়েছে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। বর্তমানে তিনি তার আত্মীয়ের দোকানে চাকরি করছেন বলে জানান।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, দুবাইতে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে গেছে তাদের অনেকে বেকায়দার মধ্যে আছে। এখন বিএমইটি থেকে শুধু ভিজিট ভিসার ওপর ছাড়পত্র দিচ্ছে না। কোম্পানির নামে যারা ডিমান্ড আনছে তাদেরগুলো দিচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আগে একক ভিসায় বিএমইটি ছাড়পত্র দিত। এখন দিচ্ছে না। তার মতে, দুবাইয়ে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল অফিসে যারা চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখার কথা তারা এগুলো সঠিকভাবে যাচাই না করেই সত্যায়ন করে দিচ্ছেন। যার কারণে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকরা গিয়ে এখন বিপদের মধ্যে দিন পার করছে। আবার শোনা যাচ্ছে যারা চাকরি পাচ্ছে না তারা দুবাই থেকে অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ইউরোপের পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। সেখানেও দালাল চক্র অসহায় শ্রমিকদের প্রলোভন দেখাচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার মতে, দুবাইয়ের শ্রমবাজারের অবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে আগে ভিজিট করে তারপর সেখানেত কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেয়া দরকার। নতুবা লাখ লাখ টাকা খরচ করে যেসব অসহায় গরিব লোক বিদেশ যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে সেভাবে রিটার্ন আসার সম্ভবনা কম। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। এই বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টদের ভেবে দেখার সময় এসেছে বলে জানান তিনি।

এর আগে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ভিজিট ভিসায় যারা দুবাই যাচ্ছে সেটি কিন্তু দুই সরকারের আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমেই যাচ্ছে। এরমধ্যে ২-৩ থেকে সর্বোচ্চ ৫ ভাগ শ্রমিক সমস্যায় থাকতে পারে। তিনি বলেন, যারা সমস্যায় আছে তারা কিন্তু দুবাই ও আবুধাবিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে তাদের সমস্যার কথা জানাতে পারে। আমরা তো আর তাদের খুঁজে খুঁজে বলতে পারব না কে সমস্যায় আছে আর কে সমস্যায় নেই।

উল্লেখ্য, দুবাইতে ভিজিট ভিসায় কর্মী যাওয়া শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত লক্ষাধিক শ্রমিক বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশ গিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও দালাল চক্রের সাথে যোগাযোগ করে এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্ট করেও অনেক কর্মী বিদেশ যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement