৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হবে কিনা জানাবে যুক্তরাষ্ট্র

রাশিয়ার টিকা সরবরাহ বিলম্বিত, আসছে চীন থেকে
-

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশকে দেয়া হবে কিনা তা আজ জানাবে যুক্তরাষ্ট্র। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত না হওয়ায় রাশিয়ার টিকা সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে। আর ১২ মের মধ্যে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের ৫০ লাখ টিকার চালান আসবে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে আমদানির জন্য চীনের সাথে আলোচনা হবে।
গতকাল নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ছয় কোটি ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে, যা তারা ব্যবহার করছে না। বিষয়টি জানার পর এই টিকা সংগ্রহের ব্যাপারে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করেছি। আমি ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছি। ওয়াশিংটনে আমাদের রাষ্ট্রদূত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সাথে যোগাযোগ এবং সাক্ষাৎ করেছেন। টিকা সংগ্রহের আমাদের প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় রয়েছে। তারা এখনো হ্যাঁ বা নাÑ কিছুই বলেনি। বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের ব্যাপারে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বৃহস্পতিবার (আজ) আমার সাথে দেখা করবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকারে বর্তমানে করোনা মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দু’টি দেশÑ ভারত ও ব্রাজিল। এই টিকার সবটাই ভারতে পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ভারতীয়রা জোর-জবরদস্তি করছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় প্রবাসীদের ইউনিয়নগুলো বেশ শক্তিশালী। বিগত নির্বাচনের প্রচারণার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে তারা প্রচুর অর্থ দিয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশীরাও রয়েছেন। তারাও বাংলাদেশে টিকা পাঠানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে তাগাদা দিতে পারেন। বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধের পাশাপাশি প্রবাসীদের তৎপরতা থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর একটি চাপ থাকবে। ওয়াশিংটনে আমাদের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশে সহায়তা পাঠালে যুক্তরাষ্ট্র অক্সিজেনও দেবে। এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে আমরা কবে, কখন পাব জানি না। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে দেখা হলে এ সব ব্যাপারে আপডেট পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর বিকল্প কোনো উৎস থেকে তা সংগ্রহের উদ্যোগ সরকারের রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলোÑ ইউরোপের অন্তত সাতটি দেশের কাছে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রয়েছে, কিন্তু তারা ব্যবহার করছে না। আমরা এ দেশগুলোর সাথে যোগাযোগ করেছি। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে কারো কাছে ২০ হাজার বা কারো কাছে দুই লাখ টিকা রয়েছে। এই স্বল্প সংখ্যক টিকা নেয়ার জন্যও অনেক দেশ প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশে দিনেই প্রায় দুই লাখ টিকা প্রয়োজন হয়। তাই ইউরোপ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সংগ্রহের সম্ভাবনা খুব একটি উজ্জ্বল না। তিনি বলেন, ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত আমাদের জানিয়েছেন, আগামী ১২ মের মধ্যে তারা উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ টিকা পাঠাবে। এরপর বাণিজ্যিকভাবে চীনের টিকা বাংলাদেশ কত পরিমাণে এবং কোন দামে কিনবেÑ তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আলোচনা করে ঠিক করবে। টিকা সংগ্রহের জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। এখন আনাটাই বাকি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, টিকা আনার জন্য প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সি-১৩০ বিমান পাঠিয়ে দেবে। প্রধানমন্ত্রী অনেক আগে থেকে দাবি করছেন, করোনা টিকা বিশ্ব মানবতার সম্পদ হওয়া উচিত। টিকা তৈরির প্রযুক্তিও সব দেশের জন্য সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন। এই সম্পদ বা প্রযুক্তি কোনো দেশেরই কুক্ষিগত করে রাখা ঠিক হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, করোনাভাইরাস থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাই অনেক দিন ধরে টিকা দিয়ে যেতে হবে। আমাদের জনসংখ্যাও ব্যাপক। তাই স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদন করতে পারলে তা বাংলাদেশের জন্য সাশ্রয়ী হয়। চীন ও রাশিয়ার সাথে করোনা টিকার যৌথ উৎপাদনে যেতে বাংলাদেশ আলোচনা করেছে। টিকা উৎপাদনে রাশিয়ার সক্ষমতা কম। আমাদের দেশের অনেক ওষুধ কারখানার শত কোটি ডোজ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এ জন্য আমরা নেগোশিয়েট করেছি, রাশিয়া যৌথ উৎপাদনে রাজি হয়েছে। তৃতীয় পক্ষের কাছে প্রযুক্তি না দেয়ার ডকুমেন্টে আমরা সই করেছি। তিনি বলেন, এটা একটা জরুরি ইস্যু। টিকা সরবরাহের জন্য রাশিয়ার ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কিছু কাগজপত্র পাঠিয়েছে। এগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। এ সব কাগজপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে মস্কোতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। গত সোমবার আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাথে আলাপ করেছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ সব কাগজপত্র উনি দেখেছেন। তবে এগুলো তার কাছে অনেক দেরিতে উত্থাপন করা হয়েছে। কারণ হিসেবে তাকে বলা হয়েছে, ডকুমেন্টগুলো একতরফা। আমি বলেছি, এগুলো দরকষাকষি করে চূড়ান্ত করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, করোনা টিকার বাজারটা এখন সরবরাহকারী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কারণ সংগ্রহকারীদের চাহিদা প্রচুর। অল্প কয়েকটি কোম্পানি টিকা উৎপাদন করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নির্দিষ্ট কোনো দেশকে সুযোগ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাশিয়ার টিকা সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রস্তুতে গড়িমসি করছে কিনা জানতে চাইলে ড. মোমেন বলেন, আমার সে রকম মনে হয় না। যেকোনো দেশ থেকে টিকা সংগ্রহের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তাসহ অনেক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেশ কয়েকটি কমিটি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন না থাকায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ছাড়া অন্য কোনো টিকা আনার জন্য আমরা আলোচনা করতে পারিনি। এখন জরুরি পরিস্থিতিতে চীন ও রাশিয়ার টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বেসরকারি খাতকেও টিকা আনার জন্য আমরা উৎসাহিত করছি।
করোনা টিকা নিয়ে ভারত, চীন ও রাশিয়ার মধ্য কোনো রাজনীতি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাথে চুক্তি থেকে আমরা এখনো সরে যায়নি। এটা বলবৎ রয়েছে। ভারত নিজ দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে টিকা সরবরাহ করতে পারছে না। অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজটা সম্পন্ন করার জন্য আমরা জরুরিভিত্তিতে ভারত থেকে ৩০ লাখ টিকা চেয়েছি। তবে ভারত কোনো উত্তর দেয়নি। তিনি বলেন, কোভেক্স (জাতিসঙ্ঘের উদ্যোগ) থেকে চলতি মাসেই বাংলাদেশের ৮০ লাখ টিকা পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু স্থানীয় চাহিদার কারণে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট সরবরাহ দিতে না পারায় কোভেক্সও আমাদের তা দিতে পারেনি।


আরো সংবাদ



premium cement