০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল পাস

বিক্ষোভে উত্তাল উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো; আসামসহ বিভিন্ন স্থানে দুই দিনের বন্ধের ডাক
-

তুমুল বিতর্কের মধ্যেই ভারতের লোকসভায় পাস হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)। গতকাল সোমবার লোকসভায় অধিবেশনের শুরুতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি পেশ করেন। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৩টি। আর বিপক্ষে পড়ে ৮২টি। ভারতীয় পার্লামেন্টের নি¤œকক্ষ লোকসভা ৫৪৩ আসনবিশিষ্ট। বিলটি সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয়, এমনটি উল্লেখ করে এরপর উত্থাপন করেন অমিত শাহ।
এর আগে গত বুধবার প্রস্তাবিত বিলটি অনুমোদন পেয়েছিল ভারতীয় মন্ত্রিসভায়। আগামীকাল সরকারপক্ষ এই বিল রাজ্যসভায় পেশ করতে পারে। বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী ভারতে পাঁচ বছর থাকলেই নাগরিকত্ব পাবে অমুসলিমরা। বিলটিতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন আইনে যা রয়েছে : সংশোধন বিলে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তিন প্রতিবেশী দেশে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের’ শিকার অমুসলমানরা যারা ভারতে এসেছে তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হবেন। যদিও আইনে ‘ধর্মীয় নিপীড়ন’-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। ধর্মীয় নিপীড়নের ঘটনা কিভাবে প্রমাণিত হবে, সে বিষয়েও আইনে কোনো বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, সর্বশেষ ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে বসবাস করার নিয়ম বাধ্যতামূলক ছিল। সেই সময়সীমা কমিয়ে নতুন বিলে পাঁচ বছর করা হয়েছে। মুসলমানদের বাদ দিয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টান অবৈধ অভিবাসীদের যাতে ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া যায়, সে লক্ষেই এ সংশোধনী।
এ দিকে লোকসভায় বিলের তীব্র বিরোধিতা করেন কংগ্রেসসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের সদস্যরা। বিলের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি হইচইয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠে লোকসভা। বিলটিকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির কৌশল বলে মন্তব্য করছেন বিরোধীরা।
কংগ্রেস সদস্যদের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আপনারা প্রশ্ন করছেন এই বিলের প্রয়োজনীয়তা কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস যদি ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করত, আজ আমাদের এই বিলের প্রয়োজন হতো না।
কংগ্রেসের প্রতিবাদ : কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘুদের দিকে নজর দিয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, সব ধর্মের মানুষকে নাগরিকত্ব দেয়া হলে তা মেনে নেবো। কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে নাগরিকত্ব দেয়া হলে তার বিরোধিতা করব। এই বিল একেবারেই অসাংবিধানিক।
শশী থারুর বলেছেন, সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার অর্থ গান্ধীজির মতাদর্শের উপরে জিন্নাহর মতাদর্শের জয় হওয়া। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস যদি বিলটি পাস হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের মৌলিক নীতির প্রকাশ্য লঙ্ঘনের অনুমতি দেবে না।’ প্রস্তাবিত ওই বিল সংবিধানের ১৪ ও ১৫ ধারা বিরোধী বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মমতার প্রতিবাদ : বিল পাসের বিরোধিতা করে সোমবার খড়গপুরের সভায় মমতা বলেন, কোনো এনআরসি হবে না। কোনো বিভাজন হবে না। কাউকে দেশ থেকে তাড়ানো চলবে না। এনআরসি আর ক্যাব মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। আসামে এনআরসির নাম করে লক্ষাধিক হিন্দু ভারতীয়র নাম বাদ পড়েছে। জনতাকে ভাগাভাগি করবেন না। দেশ ভাগ করবেন না।
বিজেপিকে উদ্দেশ করে মমতা বলেন, যারা দেশ ভাগ করতে চায়, সেই ফেট্টিবাজদের জায়গা বাংলা নয়। এনআরসি, ক্যাব নিয়ে ভয় পাবেন না। আমরা আছি। আমরা থাকাকালীন কারো ক্ষমতা নেই, আপনাদের ওপর কেউ জোর করে কিছু চাপাবে। এনআরসি আতঙ্কে বাংলায় মৃত্যুর প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘ফেট্টিবাজদের কথায় দুঃখ পেয়ে যারা মারা যান, তাদের পরিবারের জন্য দুঃখ হয়’।
বিলের বিরোধিতা করে তৃণমূলের সদস্য সৌগত রায় বলেন, ৩৭০ ধারা বাতিলের সময় বলা হয়েছিল, এক দেশ, এক সংবিধান। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার অনেক জায়গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই বিল বিভাজনের উদ্দেশে করা হচ্ছে। যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী।
উত্তর-পূর্বে বিক্ষোভ, আসামে বন্থধের ডাক : নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। আসামসহ বিভিন্ন এলাকায় দুই দিনের বন্থধের ডাক দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। রাস্তায় নেমে চলেছে স্লোগান, মিছিল। বিক্ষোভে সরব ছাত্রছাত্রীরা। এই বিলের ফলে বহুসংখ্যক অবৈধ বসবাসকারী নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে রাজ্যগুলো। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বিলটি পাস হওয়ার কারণে পাল্টে যাবে দেশের জনবিন্যাসের ধরন। কমে যাবে কাজের সুযোগ। একই সাথে হ্রাস পাবে নিজস্ব সংস্কৃতিও।
ইতোমধ্যেই এ বিলের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার বন্ধ ডেকেছে নর্থইস্ট স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। তাদের দাবি, বিলটি ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির বিরোধী। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত ধর্ম নির্বিশেষে যারা ভারতে এসেছেন তারা নাগরিকত্ব পাবেন। বিলের বিরোধিতায় রাজপথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আসামের আরো কয়েকটি ছাত্র সংগঠন।
আসামের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি, ধর্মের কারণে বিভিন্ন দেশে যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছে, তাদের রক্ষার জন্য বিলটি আনা হয়েছে। ফলে এটি ধর্মনিরপেক্ষ হবে; এমনটা আশা করা হচ্ছে কিভাবে?


আরো সংবাদ



premium cement
দুদকের প্রথম নারী মহাপরিচালক শিরীন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন, তারপরও লোডশেডিং বড় চমক ছাড়াই প্রস্তুত বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দল দোয়ারাবাজারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে হত্যা, আটক ১ বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের বাধাহীন প্রবেশের দাবি সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের পেকুয়া উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন বিএনপির ২ প্রার্থী নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন ১৮৫ দিন : শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা আবাহনীর ২২তম শিরোপা

সকল