০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ব্রিফিংয়ে মাহবুব তালুকদার

দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রায় প্রত্যেকেই নির্বাচিত হবেন

-

ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রত্যেকেই নির্বাচিত হবেন এবং ওই পদে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না, এটাই বাস্তবতা বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য শব্দ দু’টির ঔজ্জ্বল্য থাকে না। তারপরও আনুষ্ঠানিকতার কারণেই নির্বাচন করে যেতে হয়। তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে গণতন্ত্রও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র নিয়ে কোনো জাতি বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় পর্যায়ে নিয়োগ করা রিটার্নিং-সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে গতকাল তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সিইসি কে এম নুরুল হুদাসহ অন্যান্য কমিশনারাও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
মাহবুব তালুকদার বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করছে না। এতে নির্বাচন জৌলুশ হারাতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন সার্বিকভাবে অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না, এই সত্যকে মেনে নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, নির্বাচনের মৌলিক কাঠামো যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়েও গণতন্ত্র একটি সুনির্দিষ্ট অবকাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিশেষ কোনো আদেশ-নির্দেশে যদি সেই অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ আজ্ঞাবহ হয়ে পড়েন। এই অবস্থা কখনই কাম্য নয়। কিন্তু বর্তমানে উপজেলা পরিষদ যেভাবে দায়িত্ব পালন করার কথা তা সম্ভব হচ্ছে না। আমি আগেও বলেছি, উপজেলা পরিষদ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না হলে এর নির্বাচনও গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই তো নির্বাচন। নির্বাচন কখনো গণতন্ত্রহীনতাকে প্রশ্রয় দিতে পারে না।
মাহবুব তালুকদার বলেন, এবার নির্বাচনের ব্যবহারিক দিক নিয়ে কথা বলতে চাই। তবে এই ব্যবহারিক বিষয়ের কথা অনেকটা চর্বিতচর্বন মনে হতে পারে। এ ধরনের কর্মশালায় আমরা সাধারণত যে কথাগুলো বলে থাকি, তা হলো নির্বাচন আইনানুগ হতে হবে, ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ব পালনের কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না। মোটামুটি এসব কথাই ঘুরে ফিরে বলে থাকি। তবু কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে হয়। তিনি বলেন, আমার মনে হয়Ñ নির্বাচনে যারা ভোটার, বিশেষত উপজেলা নির্বাচনে যারা ভোটার, তাদের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না হলে এবং কার্যত ভোটারদের নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে তারা ভোটকেন্দ্রে আসতে উৎসাহিত হন না। নির্বাচনে ভোটারদের প্রাধান্য ও ভোটদানের স্বাভাবিকতার ওপরই নির্বাচনের সাফল্য নির্ভরশীল। উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীরা যাতে ভোটারদের নিরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা প্রমাণ করে তাদের পদে আসীন হন, সেটাই প্রত্যাশা। কেউ অবাঞ্ছিত উপায়ে নির্বাচিত হওয়ার চেষ্ঠা করলে তিনি নিশ্চিত যোগ্য নন বা যোগ্যতা হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের পরে দেশব্যাপী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের গুরুত্ব কম নয়। বিভিন্ন কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে, এ কথা অস্বীকার করা যায় না। এই অবস্থায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে অন্তত আমরা যদি সমুন্নত রাখতে পারি, তাহলে দেশের মানুষের কাছে আমাদের ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল হতে পারে। এই কাজে আপনাদের অবদান অনস্বীকার্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement