ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ স্পেন। বরাবরই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কাছে অন্যতম পছন্দের স্থান দেশটি। বিশেষ করে সহজ শর্তে বৈধ হওয়ার সুযোগ থাকায় দেশটিতে অভিবাসীদের ভিড় থাকে সব সময়। বর্তমানে স্পেনে অভিবাসীদের জন্য নাগরিকত্ব আইনটি আরো সহজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেন হচ্ছে ভিন্ন মহাদেশ থেকে আগতদের ক্ষেত্রে মাইগ্রেশন প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ ও নমনীয়। ফলে যে কেউ খুব সহজেই এখানে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে ন্যূনতম শর্তে বসবাস করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। স্পেনের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী, দেশটিতে বিদেশী নাগরিকরা টানা ১০ বছর থাকার পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। এ ছাড়াও তিন বছর নিয়মিত থাকার পর যদি কোনো দম্পতি সন্তান জন্মদেন তাহলে ওই সন্তান স্পেনের নাগরিকত্ব পায়।
আর টানা দুই বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টেসহ ছয় মাস বৈধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে মিলবে রেসিডেন্ট কার্ড। সম্প্রতি স্পেনের একটি আদালত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে নীতিগত এমন অনুমোদন দিয়েছে।
চলতি বছরের ২৫ মার্চ স্পেনের গ্রানাডার একটি আদালত একজন অভিবাসী নারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ রায় দেন।
নতুন আইন অনুযায়ী, এখন অনিয়মিতভাবে বসবাসকারী মা-বাবার সন্তান জন্ম হলেও সে স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে বা দু’জনের মধ্যে একজন স্পেনে নিয়মিতভাবে বসবাস করলে তাদের সন্তানও স্প্যানিশ নাগরিকত্ব পাবে।
নতুন আইনে আরো বলা হয়েছে, টানা দু’বছর স্পেনে বসবাসের ডকুমেন্টের সাথে ছয় মাস বৈধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে বৈধ হওয়া যাবে। এজন্য কোনো কোম্পানির কিংবা শপের অনুমতি পেপারও লাগবে না, আগে যা প্রযোজ্য ছিল। জানা গেছে, দেশটির এই রায়ের পর স্পেনপ্রবাসী অনেক বাংলাদেশী দেশটিতে নাগরিকত্ব পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন।
কারা ও কিভাবে আবেদন করবেন?
স্পেনে দু’বছর ধরে বসবাস করছেন ও বিভিন্ন এসাইলাম নিয়ে কাজের পারমিশন পেয়ে কমপক্ষে ছয় মাস কাজ করেছেন, তার বিরুদ্ধে কোনো ক্রাইমে জড়িত থাকার প্রমাণ যদি না থাকে- তাহলে তিনি এ আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া যাদের আগে স্পেনের রেসিডেন্স (আবাসিক) কার্ড ছিল, কোনো কারণে তাদের কার্ড বাতিল হয়েছে- এরকম যারা আছেন তাদের কর্মসংস্থান রেকর্ড প্রতিবেদন (বিদালাবোরাল) ছয় মাসের যদি থাকে তারা এ সুবিধার আওতায় পড়বেন। এজন্য কোনো আরাইগো সার্টিফিকেট বা কাজের কন্ট্রাকের প্রয়োজন হবে না।
শুধু বিদালাবেরালের কপি ও নিজ দেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট হলেই স্পেনে বৈধতা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া বৈবাহিক সূত্রে স্পেনের নাগরিকত্ব পেতে হলে আগে তিন বছর সময় লাগত। নতুন আইনে তা দুই বছর করা হয়েছে। নতুন আইনের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে সময় উপযোগী আরো কিছু সংশোধন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুতাসিমুল ইসলাম বলেছেন, নতুন এ আইন বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের পাশাপাশি বাংলাদেশীদেরও বৈধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাংলাদেশী সহযোগিতা চাইলে বাংলাদেশের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটসহ দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
স্পেনের ভালিয়েন্তে মানবাধিকার সংগঠন বাংলার সভাপতি মো: ফজলে এলাহী জানান, বিভিন্ন এসাইলাম নিয়ে স্পেনে প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন। তাদের বেশিরভাগেরই বৈধ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ফজলে এলাহী বলেন, ইউরোপের অন্য দেশ, যেমন ইতালি, গ্রিস, ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে নাগরিকত্ব পাওয়াটা অনেক জটিল ও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার। এ কারণে বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক অভিবাসী স্পেনে এসে ভিড় জমিয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা