২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু

বাংলাদেশকে ভাবতে হবে

-

ভারতে চালু হলো বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-সিএএ। এটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী। এ আইন অনুযায়ী পরে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরি হবে। নাগরিক কারা হতে পারবেন আর কারা পারবেন না, সেটি বলা হয়েছে সিএএতে।
দেশটিতে লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আইনটি চালু করার লক্ষ্য কার্যত ভোটের মাঠে সুবিধা পাওয়া। চার বছর আগে এ আইন পাস হলেও ব্যাপক বিক্ষোভ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার মুখে এত দিন সেটি চালু করায় বিরত ছিল কেন্দ্রীয় সরকার। আইন কার্যকরের পরপর ভারতজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতে বিক্ষোভ হয়েছে। আসামে জনতা আইনের কপি পুড়িয়েছে। রাজ্যজুড়ে ধর্মঘট পালিত হয়েছে গত মঙ্গলবার। পশ্চিমবঙ্গেও বড় ধরনের বিক্ষোভ হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় আইন কার্যকর হতে দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একই ঘোষণা দিয়েছে কর্নাটকের বাম সরকার। ফলে এক ধরনের অস্থিরতা রয়েছে ভারতজুড়ে।
আইনে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থেকে হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের যেসব মানুষ ‘ধর্মীয় সহিংসতার কারণে’ টিকতে না পেরে ভারতে এসেছেন, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনে মুসলিম ও তামিল শরণার্থীদের কথা উল্লেখ না থাকায় আইনটি বৈষম্যমূলক বলে সমালোচিত হয়েছে।
লক্ষণীয়, গত ১১ মার্চ আইন বলবৎ করার সময় ‘ধর্মীয় সহিংসতার কারণে’ কথাগুলো পুরোপুরি বাদ দেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা ও মুসলিমরা বলছে, আইনটি ভারতের ২০ কোটি মুসলিমের জন্য বৈষম্যমূলক। অনেকের আশঙ্কা, সীমান্ত রাজ্যগুলোতে নথি না থাকা মুসলিমদের নাগরিকত্ব সরকার কেড়ে নেবে। সরকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও কী ঘটতে পারে তার নমুনা আমাদের সামনে আছে।
আসামে ১৯ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব পাননি। বাদ পড়াদের মধ্যে প্রায় সাত লাখ মুসলমান, যারা যুগের পর যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় আসামে বসবাস করছেন। বাদ পড়েন প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাভাষী হিন্দু। এ ছাড়াও আসামের আদি বাসিন্দা ও উত্তর ভারতীয়সহ অন্তত সাত লাখ মানুষ বাদ পড়েন যারা আসামের স্থায়ী বাসিন্দা। দৃশ্যত ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু এদের ভাগ্যের সুরাহা আইনে নেই। দেখা গেছে, আসামজুড়ে শত শত বন্দিশিবির গড়ে সেগুলো ভর্তি করা হয়েছে নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া মুসলমানদের দিয়ে। আবার একই পরিবারের কিছু সদস্য নাগরিকত্ব পেয়েছেন আর কেউ কেউ পাননি এমনও ঘটেছে।
পুরো বিষয়টি যে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে পরিকল্পিত তা স্পষ্ট। ২০১৯ সালে এ আইন পাস করে ভোটের মাঠে বড় ধরনের সুফল পায় বিজেপি। দলটির প্রাপ্ত ভোট ১৯ শতাংশ থেকে লাফিয়ে ৪০ শতাংশে উঠে যায়।
আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষীদের বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী হিসেবে উল্লেখ করে তাদের বহিষ্কারের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও এর শীর্ষ নেতারা। ফলে না চাইলেও ভারতের আইনটি বাংলাদেশের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গের অন্তত দুই কোটি কথিত বাংলাদেশীকে বহিষ্কারের অঙ্গীকার করেছে বিজেপি। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার আগেই ভাবতে হবে বাংলাদেশকে।


আরো সংবাদ



premium cement