২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোর প্রতিশ্রুতি

কেবলই কথার কথা হয়ে থাকছে

-

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের মধ্যে প্রতি বছরের মতো এবারো শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রতিবারের মতো এবারো বিএসএফ মহাপরিচালক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সীমান্তে হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির রাজনৈতিক নেতৃত্ব একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে প্রতি বছর সীমান্ত হত্যা চলছে। চলতি বছরের শুরুতে আমরা দেখতে পেলাম বরং একজন বিজিবি সদস্যকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। গত বছর তাদের গুলিতে সীমান্তে ৩১ জন বেসামরিক বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। ভারতের জাতীয় নেতৃত্ব এবং বিএসএফ সীমান্তে আমাদের নাগরিক হত্যা করবে না বলে মৌখিক যে অঙ্গীকার করছে সেটাকে কার্যে পরিণত করার তাগিদ দেখা যায় না। দুটো দেশের সম্পর্কে এই হত্যা গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব রাখে।
সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যার মূল কারণ বিএসএফের প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী এক আদেশে এটি বন্ধ করতে পারে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে ২০২০ সালে সীমান্তে তারা ৪৭ বাংলাদেশীকে হত্যা করে। ২০২১ সালে ১৮ ও ২০২২ সালে ২৩ জনকে হত্যা করে। মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের পর সীমান্ত হত্যা অর্ধেকের নিচে নেমে আবার সেটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সহজে অনুমান করা যাবে ভারত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা প্রতিবার সাক্ষাতে দুই দেশের মধ্যে তুলনাহীন বন্ধুত্বের যে স্বীকৃতি দেন তার অনুশীলন মাঠপর্যায়ে বিএসএফের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। সর্বশেষ ৭৩ বাংলাদেশীর মধ্যে ৬০ জনকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ খুব কাছে থেকে গুলি খেয়েছে। এছাড়া অন্যরা যেভাবে হত্যার শিকার হয়েছে তাতে বিদ্বেষ ও হিংস্রতার লক্ষণ ফুটে ওঠে। এদের মধ্যে ছয়জন প্রাণ হারায় বিএসএফের গুরুতর নির্যাতনে। মানবাধিকার সংগঠনের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশী হত্যার এই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।
এবারের সম্মেলনেও বিএসএফের মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে সীমান্ত হত্যা, আহত ও মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। যশোর সীমান্তে বিজিবি সদস্য হত্যা নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যে উত্তর দিয়েছেন তা সন্তোষজনক নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিপাহি রইশুদ্দিন টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হননি। পরিবেশ অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার যুক্তিও দেখানো হয়েছে। এই ধরনের সাফাই বিএসএফের হতে পারে। বন্দুকের একটি গুলি যে কারো প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। সৈনিকেরা তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথেই চালাবেন। কুয়াশার মধ্যে এভাবে গোলাগুলি করাটা কোনোভাবে সঙ্গত হতে পারে না। তবে বিএসএফের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠন। যেখানে ঘটনাটির প্রকৃত কারণ জানা জাবে। ঘটনার পরদিন পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংস্থা মাসুম এ ধরনের একটি তদন্ত আয়োজনের দাবি জানিয়েছিল। সম্মেলনে রইশুদ্দিনের হত্যা নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে আসতে পারত।
এবারো চোরাচালান, মানবপাচারসহ সীমান্তে সব ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধে আলোচনা হয়েছে। দুর্ভাগ্য হচ্ছে সীমান্ত হত্যার মতো অন্যান্য অপরাধ কমার লক্ষণও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। এজন্য দরকার মানসিকতার পরিবর্তন। বাংলাদেশ সীমান্তে এটি একটি সংস্কৃতি হয়ে গেছে। অথচ বিএসএফের একই সদস্যরা চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে দায়িত্ব পালন করে। ওইসব সীমান্ত আরো অনেক বেশি বৈরী। তাদের গুলিতে দেশ দু’টিতে একজন নাগরিক হত্যা হয়েছে- এমন খবর নেই। ছোট দেশ নেপালেও তারা হত্যা করে না কাউকে। বন্ধু বলে স্বীকৃতি দিয়ে তারা সীমান্তে শুধু বাংলাদেশীদের মারছে।


আরো সংবাদ



premium cement