২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নিত্যব্যবহার্য পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক

ঝুঁকিতে দেশের জনস্বাস্থ্য

-

নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীতে ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি মাত্রাতিরিক্ত থাকায় এসব পণ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে জনস্বাস্থ্যের জন্য। দেশে দৈনন্দিন পণ্যে উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারে হরমোন, থাইরয়েড, বন্ধ্যত্ব, ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্তের হার বাড়ছে। মাঠপর্যায়ে তদারকি সংস্থার নিষ্ক্রিয়তায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে টুথপেস্ট ও লিকুইড হ্যান্ডওয়াশে যে পরিমাণ থাকার কথা; তার চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে ভালোর জন্য ব্যবহার করে হিতে বিপরীত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হ্যান্ডওয়াশের মাধ্যমে শরীরে রোগ বাসা বাঁধছে। টুথপেস্টও ডেকে আনছে নানা ঘাতক ব্যাধি। একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বেসরকারি সংস্থা এসডোর গবেষণায় বাংলাদেশের স্থানীয় মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশের নমুনায় উদ্বেগজনক মাত্রায় ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্যারাবেন, সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি মিলেছে।
প্যারাবেন মানবদেহের হরমোন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যাহত করে। সোডিয়াম-ডাইক্লোরাইড উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনির জটিলতা তৈরি করে। দীর্ঘমেয়াদে এসব পণ্য ব্যবহারে নীরবে বাড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি। গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ক্ষতিকর রাসায়নিকের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশ দীর্ঘদিন ব্যবহারে হতে পারে ক্যান্সার, বন্ধ্যত্বের মতো রোগ। অথচ ভোক্তা পর্যায়ে এসব টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশের নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবসায় চলছে। নামী থেকে ছোট কোম্পানির পণ্যেরও নিয়মিত হয় না মান পরীক্ষা। নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান নির্বিকার। নিত্যপণ্য দু’টি উৎপাদনে জড়িত একটি চক্র, যারা নামী কোম্পানির মোড়ক ব্যবহার করে বাজারে ছাড়ছে। এসব ভুয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেয়া হয় না শক্ত পদক্ষেপ। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থার অবহেলায় এ ধরনের পণ্য বাজারে এসেছে। আগেও এমন অনেক গবেষণা হয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ছাড়পত্র দিয়ে দায় সারে, কখনো নিজ উদ্যোগে ভোক্তাপর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মান যাচাই করে না।
একই সাথে রাজধানীসহ সারা দেশে বাজারে নকল আর ভেজাল টুথপেস্ট, হ্যান্ডওয়াশসহ নানা ধরনের প্রসাধনীতে সয়লাব। মোড়ক দেখে কারো বোঝার সাধ্য নেই কোনটি আসল, কোনটি নকল। নকলের ভিড়ে কেনা হচ্ছে বিষ। দেশী-বিদেশী নামী সব ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর মোড়ক নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত মোড়ক ও কৌটায় নকল প্রসাধনী ঢুকিয়ে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে। বৈধ-অবৈধ দুই পথে বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে ব্র্যান্ডের নকল কৌটা ও বাহারি মোড়ক। এতে ভেজাল প্রসাধনী ভরে বিক্রি হচ্ছে আসল দামে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিøষ্ট দফতরের অসাধু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় নকল ও ভেজাল পণ্যের বড় চক্র কাজ করছে বছরের পর বছর। এতে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। শুধু রাজধানী ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় তিন শতাধিক নকল প্রসাধনসামগ্রী তৈরির কারখানা রয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হলেও দাম কম হওয়ায় মানুষ দেদার কিনছেন এসব পণ্য।
একটি জরিপের তথ্য, ৪৫ শতাংশ প্রসাধন পণ্যের বিএসটিআইর সনদ নেই, ৭৫ শতাংশ পণ্যের উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা নেই। দেশী-বিদেশী বড় বড় ব্র্যান্ডের পণ্য প্রকাশ্যে নকল করে বাজারজাত করছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী।
দৈনন্দিন পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে তদারকি সংস্থার দুর্বলতায় বিদেশী কোম্পানিগুলো এবং দেশীয় একটি চক্র বাংলাদেশকে ডাম্পিং রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করছে। সঙ্গত কারণে এগুলোর ব্যবহার বন্ধে আইন করে তদারকি সংস্থাগুলোর তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এখনই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার কমানো না গেলে আগামী প্রজন্মের মধ্যে প্রজনন-সংক্রান্ত জটিলতা বাড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement