২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দূষণ-দখলে বিলীন হওয়ার উপক্রম

নদীর এই অবস্থা কেন?

-

দৈনিক নয়া দিগন্তের সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সোনারগাঁয়ের মারিখালী নদী। খরস্রোতা এই নদীপথে সুলতানি আমলে বণিক ও ধনীরা মেঘনা নদী থেকে বজরা, গয়না বা বড় নৌকায় করে স্থানীয় ঐতিহাসিক পানাম নগরীতে যাতায়াত করতেন। এই নদী বিলীন হওয়ার পথে। দূষণে-দখলে আর নাব্য সঙ্কটে বিলীন হওয়ার পথে মারিখালী নদী।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের মেঘনা নদীর কোলঘেঁষে, শুরু করে সোনারগাঁ পৌরসভা, পিরোজপুর, মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাইকারটেকের ঐতিহাসিক হাটের পাশ দিয়ে বিখ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে মিশেছে এই নদী। উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির পানি এই নদীতেই পড়ে।
দূষণ-দখলে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ৪২ মিটার (গড়ে) প্রস্থের মারিখালী নদীর আগের রূপ-যৌবন নেই। নদীটি মৃতপ্রায়।
এদিকে, নদীটির ওপর দিয়ে যাতায়াতের সুব্যবস্থা করার জন্য এর বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সাতটি সেতু নির্মাণ করেছে। নদীর উপরে নির্মিত পাঁচটি সেতুই পর্যাপ্ত উচ্চতায় নির্মাণ না করায় বর্ষাকালে পানি বৃদ্ধি পেলে ট্রলার, লঞ্চ ও স্টিমার যাতায়াত করতে পারে না।
নদীর পানি দূষণের ফলে বিপর্যয়ে পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর, ভবনাথপুর, বিরেশেরগাঁও, রতনপুর, ভাটিবন্দর, মরিচাকান্দী, জৈনপুর, হাবিবপুর, পিরোজপুর, কাদিরনগর, দুধঘাটা, মঙ্গেরগাঁও, শম্ভুপুরা ইউনিয়নের কাজিরগাঁও, দুর্গাপ্রসাদ, চৌধুরীগাঁও, ময়নায়ের কান্দী, টেকপাড়া, মুগারচর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ, আলাবদী, নাল আলাবদী, বিন্নিপাড়া, ঋষিপাড়া, দমদমা, খুলিয়াপাড়াসহ কমপক্ষে ৩৫টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা। তারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
পিরোজপুর ইউনিয়নের জিয়ানগর গ্রামের গৃহবধূ মাসুদা জানান, এই এলাকায় বড় হয়েছি। ছোট বেলায় এই নদীতে গোসল করতাম। নদীর পানি রান্নার কাজে ব্যবহার করতাম। নদীর দু’পাশে গড়ে ওঠা কলকারখানার বর্জ্য নদীটিকে মারাত্মক দূষিত করে ফেলছে। এর ফলে আর এই নদীর পানিতে গোসল করা দূরে থাক, গায়েও লাগানো যায় না। এই পানি লাগলে চুলকানি হয়।
সোনারগাঁ পৌরসভার বঘুভাঙ্গা গ্রামের মৃদুল দাস বলেন, এই নদী দিয়ে বড় ট্রলার চলতে দেখেছি। দু’পাশের প্রভাবশালীদের দখলের কারণে নদী আর নদী নেই।
মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাবিলগঞ্জ গ্রামের আসাদ প্রধান জানান, কয়েক বছর আগেও এই নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। দূষণের কারণে এখন পাওয়া যায় না।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সোনারগাঁয়ের নদ-নদী এভাবেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। নদ-নদীকে বাঁচাতে হলে সবার সচেতন হতে হবে।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, মারিখালী নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে ড্রেজারের মাধ্যমে শিগগিরই খনন শুরু হবে। জরিপ শেষ হয়েছে। দখলদারদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ জানান, মারিখালী নদীকে দখলমুক্ত এবং দূষণ করতে যা যা প্রয়োজন, আমরা সব কিছুই করব।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদসদস্য আব্দুল্লাহ আল কায়সার জানান, দখলের পাশাপাশি এ নদীতে পানি জমে আছে। খননের জন্য বিআইডব্লিউটিএর কাছে শিগগিরই ডিও লেটার দেয়া হবে। খনন হলেই নাব্য সৃষ্টি হবে। তখনই নদীর পানি দূষণমুক্ত হয়ে যাবে।’


আরো সংবাদ



premium cement