২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নৈরাজ্য বিশৃঙ্খলা যেন স্বাভাবিক

নিরাপদ সড়ক এখন দুরাশা

-

সারা দেশের সড়কগুলো এখনো যে ভয়াবহ নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করেছিল শিক্ষার্থীরা। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দেশ কাঁপানো ওই আন্দোলনের পর সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে, এমন আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেটি ঘটেনি। অথচ ওই আন্দোলনের ফলে নতুন সড়ক পরিবহন আইন হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে সরকার বিভিন্ন আশ্বাস দিলেও সড়কে বিশৃঙ্খলা আগের মতোই রয়েছে। পরিস্থিতি একটুও বদলায়নি। প্রকৃতপক্ষে নজরদারির অভাব ও আইনের বাস্তবায়ন না হওয়ায় সড়কে শৃঙ্খলা আসেনি।
সড়কের অবস্থা কত ভয়াবহ তা অনুধাবন করা যায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, গত মে মাসে সারা দেশে ৪৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৬৩১ জন। আর গত এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৬ দশমিক ৫৬ জন নিহত হয়েছেন। অন্য দিকে মে মাসে এ সংখ্যা ১৩ দশমিক ৬। নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাজ করা এই সংগঠনের আরো তথ্য হলো-২০১৯ সালে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন পাঁচ হাজার ২১১ জন। পরের বছর পাঁচ হাজার ৪৩১ জন। ২০২১ সালে সড়কে নিহত হন ছয় হাজার ২৮৪ জন। আর ২০২২ সালের ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যু হয় ছয় হাজার ৫৪৮ জনের। এ দিকে যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ আর মৃত্যু বেড়েছে ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। অন্য দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর প্রাণহানি হয় ২৫ হাজার মানুষের।
সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের মধ্যে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। লক্ষণীয় হলো, তরুণরাই বেশি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬-৪০ বছরের মধ্যে। আর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু। এদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।
কর্মক্ষম লোকজন বেশি হতাহত হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণে হঠাৎ করে শত শত পরিবারে নেমে আসে অর্থনৈতিক বিপর্যয়। এর প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতেও। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক যে ক্ষতি হচ্ছে, তার একটি হিসাব তৈরি করেছে এআরআই। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বলছে, ২০১৮-২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা।
কারো অজানা নেই, বেপরোয়া গতি এবং চালকদের অনিরাপদ জীবনযাপন দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ। ফিটনেস ছাড়া যানবাহন সড়কে চললেও প্রশাসনের নজরদারি নেই। বাংলাদেশে অকার্যকর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। ফলে সড়কে প্রাণহানি কমার আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্স ও নিবন্ধন ছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে মানুষ সড়কে উঠে যাচ্ছে। একই সাথে যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা গণপরিবহন-ব্যবস্থায় যুক্ত হয়ে প্রাণহানি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব বন্ধ না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না।

আমরা মনে করি, সড়ক খাতে শাসন বলে কিছু নেই। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমাতে হলে আগে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ নেয়া, তাদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগসহ সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ বাস্তবায়ন করা গেলে দেশের সড়কপথে এখন যে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য চলছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, শুধু কথা দিয়ে সড়ক নিরাপদ হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না

সকল