২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল

অনিয়মেই যার শুরু

-


দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। উদ্বোধন করা হয়েছে আজ থেকে আট মাস আগে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একজনও রোগী ভর্তি করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ হাসপাতালটি চালুই করতে পারেনি। করা হয়নি হাসপাতাল পরিচালনার ব্যয়ের সংস্থান কীভাবে হবে- সেই ব্যবস্থাও। হয়নি জনবল কাঠামো। নিয়োগ হয়নি ডাক্তার-কর্মচারী। শুধু দেড় হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো তৈরি ও অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি আনা হয়েছে। সে সব যন্ত্র এমন সুদক্ষ যে, রোগীর রক্ত পরীক্ষা করতে হলে তার রক্তের নমুনা যান্ত্রিকভাবে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছে যাবে। আবার পরীক্ষা শেষে রিপোর্ট সরাসরি সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের কম্পিউটারে চলে আসবে। অপারেশন থিয়েটারের লাইটের সাথে থাকবে ক্যামেরা। অপারেশন করতে গিয়ে ডাক্তার কোনো ভুল করলেন কি না সেটি যে কেউ দেখতে পারবে। দূর থেকে দেখে শিখতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। আবার পরিচ্ছন্নতার জন্য এমন সব যন্ত্র আনা হয়েছে যেটি ১ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার কাপড় ধুতে সক্ষম। ঘণ্টায় ৪০ কেজি চিকিৎসাবর্জ্য পরিশোধন করা যাবে এমন যন্ত্রও এসেছে।

সহযোগী একটি দৈনিকের খবরে এসব তথ্য দিয়ে জানানো হয়, শাহবাগে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এ প্রকল্প এখন জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকমে চালু করার চেষ্টা চলছে। এটি ঠিক, দেশে এখন সর্বোচ্চ বিশেষণের জোয়ার চলছে। যা কিছু করা হয় সেটি শুধু বড় বা বিশাল হলে চলবে না, হতে হবে সুপার অথবা মেগা। যেমন- অসংখ্য মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। নাম নিয়ে রক্ষণশীলতার কোনো যুক্তি নেই। যদি সত্যি সেটি নামের সাথে কাজে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, বর্তমান সময়ে এমন কোনো মেগা প্রকল্প নেই যেটি যথাসময়ে এবং নির্ধারিত অর্থব্যয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সেটি সেতু, উড়াল সেতু, হাসপাতাল, মেট্রো যা কিছু হোক না কেন।
আর চিকিৎসা-বিষয়ক ব্যবস্থাপনার দুর্গতি ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরের সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের দুরবস্থা থেকে স্পষ্ট। দেশের বেশির ভাগ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স বছরের পর বছর নষ্ট থাকে। এক্স-রে মেশিন ঠিক থাকে না। আইসিইউতে এয়ারকন্ডিশন নষ্ট থাকে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ হয় না অনেক হাপাতালের অনেক বিভাগে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাহিদা জানানোর পাঁচ-সাত বছর পর যন্ত্রপাতি এলেও লোকবল না দেয়ায় সে যন্ত্র পড়ে থেকে নষ্ট হয়। এভাবে কত কোটি কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি যে বিভিন্ন হাসপাতালে মোড়কের ভেতরে থেকেই নষ্ট হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। রোগীদের কোনো কাজে লাগেনি এসব যন্ত্রপাতি। কিন্তু ওই জনগণের অর্থ পানিতে ফেলা হয়েছে।

বিএসএমএমইউর প্রকল্পও তেমনি ভাগ্য বরণ করে কি না দেখার অপেক্ষা। অনিয়মের ষোলআনা তো এরই মধ্যে সেখানে শুরু হয়েছে। রিপোর্টে দৈনিকটি জানাচ্ছে, বিশ^বিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই ৭০ জন লোকের নিয়োগ হয়েছে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে। এসব নিয়োগ কোন স্তরের কর্মীদের তা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। তবে এরা যে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন, এমন অনুমান সম্ভবত মিথ্যা হবে না। আবার বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ তাদের বিভিন্ন বিভাগে চিঠি দিয়ে প্রতিটি বিভাগের আয় থেকে প্রতি মাসে নতুন হাসপাতাল পরিচালনার জন্য অর্থ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এ ধরনের নির্দেশ অবৈধ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট একটি বিভাগের দায়িত্বশীল অধ্যাপকরা।
অনিয়ম যে দেশে নিয়মে পরিণত হয় সেখানে এ ধরনের নির্দেশ দানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করবে কে? চ্যালেঞ্জ করলেই বা কেয়ার করে কে? আমরা শুধু আশা করতে পারি, অবস্থার পরিবর্তন হবে, নিয়মনীতির মধ্যে থেকে সুষ্ঠুভাবে সব কিছু পরিচালনার গুরুত্ব সংশ্লিষ্টরা অনুধাবন করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement