২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাসযোগ্য পরিবেশ নেই

অপরিকল্পিত নগরায়ণ দায়ী

-


শহরগুলোতে মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের অর্ধেক মানুষ শহরে বাস করবে। এ কারণে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় নগর ছাড়াও জেলা শহরের পরিধি বিস্তৃত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে নগরায়ণে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। যে যেভাবে পারছেন ইমারত নির্মাণের নামে শহরে আবাসন গড়ছেন। দ্রুত নগরায়ণের সাথে বাড়ছে বস্তির সংখ্যাও। ইউএন-হ্যাবিটেট বা জাতিসঙ্ঘ আবাসনের তথ্য অনুসারে, ২০১৪ সালে শহরে জনসংখ্যার ৫৫ দশমিক ১০ শতাংশ বস্তিতে বসবাস করত। ২০৩০ সাল নাগাদ লক্ষ্য হলো শহরে বস্তিবাসীর সংখ্যা ২০ শতাংশে রাখা।
পরিসংখ্যান বলছে, এখন দেশে গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, যা মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০১১ সালের আদম শুমারিতে গ্রামাঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল ১১ কোটি চার লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন, আর শহরে এখন বাস করেন পাঁচ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন বা মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৫১ শতাংশ।
দেশে দ্রুত নগরায়ণ হলেও নগর ব্যবস্থাপনার অবস্থা নাজুক। পরিবেশ, পয়োবর্জ্য নিষ্কাষণে অব্যস্থাপনা এবং যানজটের মতো সমস্যা প্রকট। অনেক জেলা শহরও এখন কংক্রিটের বস্তিতে পরিণত হয়েছে। এগুলো মোটেও পরিবেশবান্ধব নয়। অথচ সবুজ-শ্যামল, সুজলা-সুফলা আমাদের বাংলাদেশ। একই সাথে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু বর্তমানে হুমকিতে পরিবেশ। ঋতুচক্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। উন্নয়ন করতে গিয়ে পরিবেশ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছি আমরা। এ কথা ঠিক যে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে উন্নয়ন দরকার, কিন্তু তা হতে হবে অবশ্যই পরিবেশবান্ধব। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
জীবনের তাগিদে প্রয়োজন বাসস্থান। বাড়ি নির্মাণে যেমন বিভিন্ন উপকরণ দরকার, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য অক্ষত রেখে উন্নয়ন করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবে সরকারি-বেসরকারি এমনকি ব্যক্তি মালিকানায় উন্নয়নেও এটি তেমন দেখা যায় না। আশার কথা, বর্তমানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নাগরিকরা অনেক সচেতন হয়েছেন।

ভালোভাবে বাঁচার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য-বস্ত্রের প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন একটি বাসযোগ্য পরিবেশ। যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হওয়া উচিত। স্বপ্নের আবাসনটি যদি পরিবেশসম্মত হয়, তাহলে বসবাস হবে স্বচ্ছন্দ ও স্বাস্থ্যকর। তাই দেশে নগরায়ণে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি বিবেচনায় নেয়া অতি জরুরি তা হলো- বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন, সম্পদ নিঃশেষ হওয়া, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোর প্রতি নজর দেয়া। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ও দূষণের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশবান্ধব নতুন নতুন নির্মাণপদ্ধতি ও কলাকৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হওয়া। জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি সঙ্কটের বিষয় মাথায় রেখে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। পরিবেশবান্ধব স্বাস্থ্যসম্মত, কাঁচামাল ও শক্তিসাশ্রয়ী হতে হবে।
ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে মানুষ। তাদের আবাসন চাহিদা পূরণ করতে একের পর এক গড়ে উঠেছে আবাসন প্রকল্প, যা মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অথচ কর্মব্যস্ত দিন শেষে, মন প্রফুল্ল রাখতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক অনুষঙ্গ আজকাল মানুষ খোঁজে। কীভাবে নিজেকে সুস্থ রাখা যায় এ ভাবনায় ব্যস্ত সবাই।
এক সময় সবুজের আচ্ছাদন ছিল সব শহরে। এখন এক টুকরো সবুজের সান্নিধ্য পেতে ছুটতে হয় দূর কোনো গ্রামে। রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরে সবুজের দুর্ভিক্ষ এখন আমাদের বাস্তবতা। অবস্থা এমন যে, বারান্দায় দাঁড়ালে কিংবা জানালায় চোখ রাখলে আকাশের দেখা পাওয়া ভার। একটা সময় ছিল, যখন শহরে অনেকের বাড়ির উঠানে থাকত ফুলের বাগান, পেছনে থাকত ফল কিংবা সবজির আবাদ, এখন যা শুধুই স্মৃতি। আমাদের সবার জানা, আধুনিক নগরায়ণে পরিবেশবান্ধব আবাসন আবশ্যক। ঘরের ভেতর-বাইরে, সব জায়গাতে যতটা সম্ভব সবুজ রাখার দিকে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। অপরিকল্পিত নগরায়ণে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তা আগামীতে আমাদের ভয়াবহ বিপর্যয়ে ফেলতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল