কর্মসংস্থান হ্রাসের শঙ্কা
- ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
সাম্প্রতিক সময়ে নানামুখী সঙ্কট মোকবেলা করতে হচ্ছে দেশের শিল্প খাতকে। একাধিক সঙ্কটে নিপতিত হয়ে অনেক উদ্যোক্তার টিকে থাকা দায় হয়ে উঠেছে। সহযোগী এক দৈনিকের প্রধান খবর অনুযায়ী, ডলার সঙ্কট, টাকার অবমূল্যায়ন ও আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছোট ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খোলা ব্যাপক হারে কমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন সক্ষমতাও কমেছে।
গত বছরের ডলার সঙ্কট নতুন বছরেও অব্যাহত রয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নতুন বছরে ডলার সঙ্কট কাটতে শুরু করবে; কিন্তু কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমদানির জন্য শতভাগ টাকা দেয়া হলেও ব্যাংকগুলো ডলার দিতে পারছে না। এমনকি দেশীয় চাহিদা পূরণে যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করে সেসব কারখানাও ঋণপত্র খুলতে পারছে না।
ডলার সঙ্কটের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি আমদানির ওপর বেশ কিছু কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে পর্যাপ্ত ডলার না থাকায় অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংকও আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে পারছে না। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি- বেশির ভাগ পণ্য আমদানি করা হয়। এসব শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করতে গিয়েও জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন কারখানামালিকরা। এমন পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকতেই গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে কারখানায় উৎপাদন, পরিবহন ও অন্যান্য খরচ। এ কারণে সঙ্কটে পড়েছেন দেশীয় অনেক উৎপাদক। নানাবিধ সঙ্কটে দেশীয় বাজারে পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। কাঁচামাল আমদানি নিয়ে জটিলতায় উৎপাদন অব্যাহত রাখাও দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। ডলার পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় অনেকে চাহিদার চেয়ে কম কাঁচামাল ঋণপত্রের মাধ্যমে আনতে পারছেন। ফলে উৎপাদন আগের চেয়ে অনেক কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে যারা আমদানির ওপর নির্ভর করে দেশে পণ্য সরবরাহ করেন তারা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে রয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে ডলারের সঙ্কট ও বৈশ্বিক বাণিজ্যিক অস্থিরতার কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারি, শিল্পের কাঁচামাল, ইন্টারমিডিয়েট গুডস (শিল্পের কাঁচামাল) ও কনজ্যুমার গুডস তথা ভোগ্যপণ্য আমদানির ব্যাপক পতন হয়েছে। সঙ্কট এমন পর্যায়ে চলে এসেছে যে, বিলাসীপণ্য দূরে থাক, প্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। শিল্পের কাঁচামাল থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের আমদানি আটকে আছে। ফলে ডলার সঙ্কটে শিল্প খাত এখন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আরো বাড়িয়ে দেয়ায় সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।
নানামাত্রিক সঙ্কটে শিল্পকারখানার লোকসানের পরিমাণ বাড়বে। অথচ এমনিতে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অবস্থা খারাপ। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কাঁচামাল আমদানির ব্যয় বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে। এখন দু’দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ায় লোকসান আরো বাড়বে। অবস্থা এমন দাঁড়াচ্ছে যে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীদের তাদের ব্যবসায় গুটিয়ে নেয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
এসব কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের প্রধান শিল্প ও উৎপাদন খাতে। পরিণামে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে সব পণ্যের। অন্য দিকে কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে কারখানা পুরোদমে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন বাস্তবতায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাধ্য হয়ে উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে শিল্পমালিকদের। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, উৎপাদন কমে গেলে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ঋণ বিনিয়োগকারী ব্যাংকগুলোও ঝুঁকিতে পড়বে। অনেক শিল্প উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণের কিস্তি সময়মতো পরিশোধ করতে পারবেন না। বন্ধ হয়ে যেতে পারে বহু কারখানা। এর ফলে বেকার হতে পারেন হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী।
অর্থনীতিবিদদের মতো আমরাও মনে করি, আমাদের অর্থনীতিতে চলমান সঙ্কট উত্তরণের জন্য অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দিতে হবে। কমিটি দ্রুত সমস্যার সমাধানে পথ বাতলাতে যে সুপারিশগুলো করবে তার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ কথা মনে রাখা আবশ্যক, শিল্প খাতের বিপর্যয় ঠেকাতে না পারলে লাখো মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। এতে দেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা